মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের দীর্ঘায়ু ও পারফরম্যান্স অনেকাংশেই নির্ভর করে সঠিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের উপর। কিন্তু অনেকেই অজ্ঞতাবশত বা ভুল ধারণার কারণে ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে কিছু গুরুতর ভুল করেন, যা বাইকের ক্ষতি করতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইঞ্জিন অয়েলের ভুল ব্যবহারের বিভিন্ন দিক এবং কীভাবে সঠিক নিয়ম মেনে চলা উচিত।
১. ভুল গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার
প্রতিটি বাইকের জন্য নির্দিষ্ট গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা প্রয়োজন। সাধারণত বাইকের ম্যানুয়াল বা ইঞ্জিনের স্পেসিফিকেশনে 10W-40, 20W-50 বা 5W-30 ইত্যাদি গ্রেড উল্লেখ থাকে। কিন্তু অনেক রাইডার মনে করেন যে যেকোনো ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা যায়, যা ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং বেশি গরম হওয়ার কারণ হতে পারে।
✅ সমাধান: সবসময় বাইকের ম্যানুয়াল অনুযায়ী নির্দিষ্ট গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন।
২. মেয়াদোত্তীর্ণ বা দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার
অনেক সময় রাইডাররা কম দামে ইঞ্জিন অয়েল কিনে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেন। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে লুব্রিকেশন কমে গিয়ে ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশে ক্ষতি হয়।
✅ সমাধান: নতুন ও নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন এবং মেয়াদ দেখে কিনুন।
৩. ভুল কোম্পানির অয়েল ব্যবহার করা
অনেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল বারবার পরিবর্তন করেন, যা ইঞ্জিনের পারফরম্যান্সের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতিটি ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েলের ফর্মুলা আলাদা হওয়ায় এটি ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ অংশগুলোর উপর প্রভাব ফেলে।
✅ সমাধান: নির্দিষ্ট একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের ইঞ্জিন অয়েল নিয়মিত ব্যবহার করুন, যেমন Liqui Moly, Motul, Castrol ইত্যাদি।
৪. প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বা কম ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার
অনেক রাইডার মনে করেন, বেশি ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে ইঞ্জিন ভালো থাকবে। আবার কেউ কেউ কম দিয়ে খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই ক্ষতি হতে পারে।
✅ সমাধান: বাইকের নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন এবং ডিপস্টিক বা গ্লাস উইন্ডোর মাধ্যমে লেভেল চেক করুন।
৫. পুরনো অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন না করা
অনেক রাইডার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করলেও অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করেন না, যা ইঞ্জিনে দূষিত কণা প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।
✅ সমাধান: প্রতিবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনের সময় অয়েল ফিল্টারও পরিবর্তন করুন।
৬. সস্তা ও নিম্নমানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার
বাজারে অনেক নামহীন বা ভেজাল ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায়, যা আসল ব্র্যান্ডের মতো দেখতে হলেও কার্যকারিতায় অনেক দূর্বল। এসব ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারে ইঞ্জিনের ক্ষতি হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা দেখা দেয়।
✅ সমাধান: শুধুমাত্র অথরাইজড ডিলার বা বিশ্বস্ত দোকান থেকে ইঞ্জিন অয়েল কিনুন।
৭. ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তনে দীর্ঘ দেরি করা
অনেক রাইডার নির্দিষ্ট কিলোমিটার পার হওয়ার পরও ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করেন না, যা ইঞ্জিনের অভ্যন্তরীণ অংশে অতিরিক্ত ঘর্ষণ সৃষ্টি করে।
✅ সমাধান: নির্দিষ্ট সময় বা কিলোমিটারের মধ্যে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন (সাধারণত ২০০০-৩০০০ কিমি)।
উপসংহার
সঠিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার বাইকের ইঞ্জিনকে দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকর রাখতে পারেন। নিয়মিত চেকআপ করুন, ভালো ব্র্যান্ডের অয়েল ব্যবহার করুন এবং ম্যানুয়ালের নির্দেশনা মেনে চলুন। তাহলেই আপনার বাইকের ইঞ্জিন থাকবে নতুনের মতো শক্তিশালী!