কোন টায়ারটি শুধু আপনার জন্যই বানানো হয়েছে?

March 08, 2022

কোন টায়ারটি শুধু আপনার জন্যই বানানো হয়েছে?

বর্তমানে পৃথিবীতে যত যান্ত্রিক বাহন আছে তার মধ্যে মোটরসাইকেল অন্যতম এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

মোটরসাইকেল অবিস্কারের পর থকেই এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের জীবন যাত্রার সাথে কিভাবে যেনো এই যান্ত্রিক যানটি এক হয়ে মিশে গিয়েছে। এর আকর্ষনীয় দৃষ্টি নন্দন স্টাইল, জ্বালানী সাশ্রয়ী ইঞ্জিন, মেন্টেন্সস খরচ কম, যেকোনো রাস্তায় চলাচল উপযোগীতা মানুষকে এর উপরে নির্ভরশীল করে তুলেছে। তরুণদের কাছে যেমন আধুনিকতা আর স্মার্টনেসের প্রতীক ঠিক তেমনি পেশাজীবিদের কাজের হাতিয়ার। ছাত্র , শিক্ষক, সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে করপোরেট অফিস গুলিতে আজ মোটরসাইকেল এক নিত্য ব্যবহার্য বাহন।

এ কারণে আমরা মোটরসাইকেলর ভিন্নতাও দেখতে পাই। কোনটি কমিউটার বাইক, কোনটি স্পোর্ট বাইক, ক্রুজার বাইক, পারফর্মেন্স বাইক কতো বিচিত্র মডেলের বাইক পাওয়া যায়। আমাদের দেশে গ্রামেও বাইক একটা উল্লেখযোগ্য বাহন হয়ে উঠেছে এর তুলনামূলক ছোট আকার আর সহজে চালানোর উপযোগিতা আর দামের কারণে। বলতে গেলে সাইকেলের জায়গা দখল করে নিয়েছে বাইক।

ছোট ছোট অনেক গুলি পার্টেসের সমন্বয়ে বাইক চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠে। ইঞ্জিন, চেসিস, চেসিসের সাথে লাগানো বিভিন্ন বডি পার্টস, লাইট, সাস্পেন্সান , টায়ার ইত্যাদি। আজ আমরা মোটরসাইকেলর অন্যতম বডি পার্টস টায়ার নিয়ে আলোচনা করবো।

কারণ একটি সঠিক আর ভালো মানের টায়ার অনেক সময়ই মোটরসাইকেল আরোহীর জীবন রক্ষা করে থাকে। এই কারণেই ভিন্ন ভিন্ন মোটরসাইকের জন্য ভিন্ন টায়ার রয়েছে। তাই যখন টায়ার কিনতে যাবেন তখন নিজের বাইকের ধরন এবং কেমন রাস্তায় আপনি বেশি চলাচল করেন তা মাথায় রাখুন।

মোটরসাইকেলে টায়ারের #গুরুত্ব

ভালো মানের টায়ারের প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যাবে না। আসলে বাইক আর রাস্তার মধ্যে যোগ সুত্রই তৈরি করে দেয় এই টায়ার। টায়ারের উপরেই নির্ভর করে বাইকের সাস্পেনশান আর ব্রেকিং সিস্টেম কেমন কাজ করবে, ইঞ্জিন যতই জ্বালানী সাশ্রয়ী হোক না কেন উপযূক্ত টায়ার না হলে এর থেকে আপনি সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাবেন না। আর আরাম? ভালো ও উপুযূক্ত টায়ার না হলে বাইক চালানোর সময় আরাম আপনার হারাম হয়ে যাবে। অনেক সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মুলেই থাকে এই টায়ার । এই কারণে রেসিং এ আপনারা দেখবেন একটা নির্দিষ্ট সময় পরপরই টায়ার বদলে ফেলা হয়। রেসিং স্টাফকে এই ব্যাপারে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষন দেয়া হয়ে থাকে। তাই উপযুক্ত এবং ভালো মানের টায়ারের একদিকে যেমন আপনাকে ভালো সার্ভিস দিবে অন্যদিকে আপনি নিরাপদ আর আরামদায়ক ভ্রমণের নিশ্চয়তা পাবেন।

মোটরসাইকেল টায়ারের #ধরন

আমরা আগেই জেনেছি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির মটরসাইকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন টায়ার রয়েছে। স্পোর্টস বাইক, কমিউটার বাইক,টুরিং বাইক,ক্রুজার,রোড,অফরোড ইত্যাদি।

আমরা এই ভিন্ন ভিন্ন বাইকের টায়ার নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

ট্র্যাক বা রেসিং টায়ার:

এই ধরণের টায়ারকে অনেকেই “trail tyres”, “track tyres” বা “race tyres” ও বলে থাকেন। এই ধরণের টায়ার তুলনামূলক নরম রাবার দিয়ে তৈরি করা হয় এবং লক্ষ্য রাখা হয় উচ্চ তাপমাত্রাতেও যেনো কার্যক্ষম থাকে। কারণ রেস ট্র্যাকে বাইক জোরে ছোটার সময় রাস্তা আর চাকার ঘর্ষনে টায়ার অনেক গরম হয়ে উঠে।

স্পোর্টস বাইকের ক্ষেত্রে হাই স্পীড, স্ট্রং এক্সালারেশান, ভায়োলেন্ট ব্রেকিং এবং পার্শ্বিক চাপের কারণেই এই দুইটি গুন না থাকলে তা স্পোর্টস বাইকের জন্য উপুযুক্ত হবে না। উন্নত মানের রেস টায়ারের সফটনেস , টায়ারের ভিন্ন ভিন্ন অংশে ভিন্ন রকমের হয়। যেমন টায়ারের মাঝের অংশ শক্ত এবং দুইপাসের অংশ নরম রাবার দিয়ে তৈরি করা হয়।এই উন্নত রেস টায়ারে বাইকার অনেক বেশী সারফেস এরিয়া পান বিশেষ করে কর্নারিং এর সময় । টেকনিক্যালি একে “slick” বলা হয়। অতিরিক্ত নরম রাবার দিয়ে তৈরি বলে এই ধরণের টায়ারের স্থায়িত্ব কম হয়। তবে মজার একটা তথ্য দেই “slick” কিন্তু সাধারণ রাস্তায় চলানো সম্পুর্ন নিষিদ্ধ।

স্পোর্ট ট্যুরিং টায়ার:

“Sport / touring” টায়ার মধ্যম মাত্রার নমনিয় রাবার দিয়ে তৈরি করা হয়। এর ফলে আপনি একদিকে যেমন ভালো গ্রিপ পাবেন অন্যদিকে তুলনামূলক উচ্চ তাপেও কর্মক্ষম থাকবে। এই ধরণের টায়ারের স্থায়িত্ব রেসিং ট্যায়ারের থেকে বেশী হয় । এই ধরণের টায়ার আপনি যেমন স্পোর্টস বাইকেও ব্যবহার করতে পারবেন তেমনি টুরিং বাইকেও ব্যবহার করতে পারবেন।

রোড টায়ার:

Road” বা “Touring” টায়ার শক্ত রাবার দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এদের অপারেটিং তাপমাত্রা কম হয়। এই ধরণের টায়ারের অনেক বেশী খাঁজ থাকে ফলে আপনি অনেক ভালো গ্রিপ পাবেন এবং শক্ত হবার কারণে এর স্থায়িত্ব বেশী হবে। বর্ষায় ভেজা রাস্তায় এই ধরণের টায়ার খুবই উপযোগী হয়। লো অপারেটিং টেম্পারেচারের কারণে এর স্পীড লিমিট আছে।

মিক্সড ট্রেইল টায়ার/ডুয়াল পারপাস টায়ার:

নামেই বুঝতে পারছেন এই ধরণের টায়ার পিচ ধালা রাস্তা এবং মাটির রাস্তা উভয় স্থানেই সমান কার্যকর। এ ধরণের ট্যায়ারের মূল বৈশিষ্ট হোল এদের থ্রেড বেশ বড় হয়। দেখতে অনেকটা ব্লকের মতো হয় এর ফলে আলগা মাটিতে বেশ কাজে দেয়। তৈরি হয় শক্ত রাবার দিয়ে , অপারেটিং টেম্পারেচার কম তবে স্থায়িত্ব অনেক বেশী হয়। এই ট্যায়ারে ভালো গ্রিপ পাবেন কিন্তু পাকা রাস্তায় বড় গ্রিপের কারণে সারফেস এরিয়ে কমে যাবার ফলে কিছু অসুবিধায় পড়বেন। আপনি যদি পাকা এবং কাঁচা উভয় রাস্তাতেই বাইক চালান তবে এই টায়ার ব্যবহার করতে পারেন। যারা শুধুই পাকা রাস্তায় বাইক চালান তাদের ক্ষেত্রে মিক্সড টায়ার ব্যবহার না করে রোড টায়ার ব্যবহার করার পরামর্শ দিবো।

ক্রুজার বাইক টায়ার:

শক্ত রাবার দিয়ে তৈরি করা হয় এই ধরণের টায়ার এবং এদের স্থায়িত্ব অনেক বেশী। দীর্ঘ এবং নিরাপদ ভ্রমণের জন্য খুবই উপযূক্ত। এই টায়ার নিয়ে রেস করতে যাবেন না বিপদে পড়বেন কারণ একদিকে শক্ত রাবার এবং লো অপারেটিং টেম্পারেচারের কারণে গ্রিপ পাবেন না।

টিউবসহ ও টিউবলেস টায়ার:

টিউব লেস টায়ার কে বাইকের একটা বাড়তি সেফটি ফিচার হিসাবে ধরা হয়। তুলনামূলক কম গরম হওয়া এই টায়ার দ্রুত গতিতে পাংচার হলে আপনাকে আনস্টেবল হবার হাত থেকে বাচাবে এবং কিছু দুরত্ব অতিক্রম করে মেরামতের সুযোগ দিবে।

অন্যদিকে টিউব টায়ার মেরামত এবং বদলানোর খরচ কম। যদিও উভয় ধরণের টায়ার প্রেশারের দিকে নজর দেয়া উচিৎ। বিশেষ করে টিউব ট্যায়ারে যদি প্রেশার কম থাকে তবে টায়ার এবং টিউব দুটিরই আয়ু কমে যায়।

পরিশেষে

অনেকগুলি যন্ত্রাংশের সঠিক সমন্বয়েই মোটরসাইকেলের আরামদায়ক ও নিরাপদ ভ্রমণের নিশ্চয়তা নির্ভর করে। একটি ভালো মানের এবং ভালো কন্ডিশানের টায়ার আপনার ভ্রমণকে আরামদায়ক, নিরাপদ ও উপভোগ্য করে তুলবে। ক্ষয়ে যাওয়া খারাপ টায়ারে টার্নিং এর সময়ে যেমন গ্রিপ কম পাবেন তেমনি বাইকের স্ট্যাবিলিটিও পাবেন না। ক্ষয়ে যাওয়া টায়ারের তুলনায় ভালো মানের টায়ারে আপনি যে গ্রিপ পাবেন তাতে বাইকের এক্সালারেশান এবং গতীতে এর প্রভাব আপনি নিজেই বুজতে পারবেন। আপনি কি ধরণের রাস্তায় বাইক চালান এবং বাইকের মডেলের সাথে মানাসই টায়ার নির্বাচন করুন। ক্ষয়ে যাওয়া টায়ার বদলে নিরাপদ ও স্মুথ ভ্রমণ নিশ্চিত করুন।

ইকবাল আব্দুল্লাহ রাজ

এডমিন # Curious Biker