Mohera jomidar bari mirzapur Bangladesh

আগস্ট 09, 2020

Mohera jomidar bari mirzapur Bangladesh

প্রকৃতির অনিন্দ্য নিকেতন মহেড়া জমিদার বাড়ী অপরূপ সৌন্দর্যে নয়নাভিরাম। তার রূপশোভা বিস্তার করে কালের নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এক উজ্জ্বল ভাস্কর্য। নিভৃত পল্লীতে ছায়াঘেরা, পাখী ডাকা নির্মল নির্ঝর শান্ত পরিবেশ আকুল করে দর্শকদের। আগন্তুককে একবার নয় বারবার এই সৌন্দর্য দেখার হাতছানি দিয়ে আমন্ত্রণ জানায় এখানকার রকমারি দেশী-বিদেশী ফুলের সমারোহ ও সুশোভন বাহারী পাতাবাহার দ্বারা পরিবেষ্টিত ফুলের বাগান। গাছে গাছে সকাল সন্ধ্যা পাখির কলকাকলিতে মুখর, সৌম্য-শান্ত কোলাহলমুক্ত পরিবেশ আপনাকে দিবে এক অন্যরকম ভ্রমানুভুতি। চারদিকে নানা বৈচিত্র্যের ফুলের বর্ণ ও গন্ধের সমারোহ। যেন নিবেদিত পুষ্পার্ঘ্য। এক কথায় যেন ধরায় স্বর্গধাম। ধারনা পাওয়া যায় স্পেনের করডোভা নগরীর আদলে ভবনসমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কালের বিবর্তনে ফুলে-ফলে, পত্র-পল্লবে শোভিত হয়ে উঠে কালের স্বাক্ষী এ দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ী।

দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়ীর রয়েছে এক কলঙ্কিত স্মৃতি। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়ীতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ীর কূলবধূ যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী লজের মন্দিরের পেছনে একত্রে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। তন্মধ্যে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক পন্ডিত বিমল কুমার সরকার, মনিন্দ্র কুমার চক্রবর্তী, অতুল চন্দ্র সাহা এবং নোয়াই বণিক ছিলেন। ইতিহাস কলঙ্কিত সেই রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে মহেড়া জমিদার বাড়ীতে।

ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৮৯০ দশকের পূর্বে জমিদার বাড়ীটির পত্তন ঘটে। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই ভাই কলকাতায় লবণ ও ডালের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা পয়সা রোজগার করে চলে আসেন মহেড়া গ্রামে। মহেড়া গ্রামে তারা ১ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর এ সুবিশাল বাড়িটি নির্মাণ করেন। বাড়ি নির্মাণ করার পর তারা মহেড়া গ্রামের গরির মানুষের কাছে টাকা দাদন খাটাতে থাকেন এবং এলাকার প্রভুত উন্নতি করেন। পরে ব্রিটিশ সরকার জমিদার প্রথা চালু করলে কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহার ছেলেরা করটিয়ার ২৪ পরগনার জমিদারদের কাছে থেকে একটি অংশ বিপুল অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয়। শুরু হয় জমিদারি।

জমিদার বাড়ীর পূর্বপুরুষেরা হলেন- বিদু সাহা, বুদ্ধু সাহা, হরেন্দ্র সাহা ও কালীচরণ সাহা। জনশ্রুতি আছে, জমিদার তরফের সবচেয়ে পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন মহারাজ ভবনের গিরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। তিনি ব্রিটিশ আমলে সম্মানিক বিচারক ছিলেন এবং একাধারে নীতিবান ও প্রজাবৎসল ছিলেন।

কিভাবে যাবেন

মহেড়া জমিদার বাড়ি দেখতে আপনাকে যেতে হবে টাঙ্গাইল জেলার নটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ড। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার।

নাটিয়াপাড়ায় বাস থেকে মহেরাপাড়া পুলিশ প্রশিক্ষন কেন্দ্রে আসতে হবে। মহেরা জমিদার বাড়িটিই বর্তমানে পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

একটা বিষয়, এই ঢাকা টাঙ্গাইল রোডে প্রায়শই জ্যাম থাকে তাই সেইভাবে সময় হিসেব করে বের হলে ভালো।

এছাড়া দেশের অন্য কোন জায়গা থেকে আসতে হলে আপনাকে যে কোন উপায়ে টাঙ্গাইল আসতে হবে। টাঙ্গাইল নটিয়াপাড়া এসে উপরে উল্লেখিত উপায়ে মহেড়া জমিদার বাড়ি ভ্রমণ করতে পারবেন।

তথ্য সুত্রঃ tangail.gov.bd