Top 5 motorcycle brand in Bangladesh

আগস্ট 25, 2020

Top 5 motorcycle brand in Bangladesh

বাংলাদেশের মত একটি ক্ষুদ্র ঘনবসতির দেশে প্রতিদিনের চাহিদা ও আবেগের দিক থেকে মানুষের প্রথম পছন্দের বাহন হলো মোটরসাইকেল। আকারের সাথে তুলনা করতে গেলে এদেশের মোটরসাইকেলের মার্কেট বেশ বড়সড়ই বলা চলে, এছাড়াও বিশাল জনসংখ্যার এই দেশে বাইকের চাহিদাও ব্যাপক।

আপনি হয়ত জেনে অবাক হবেন যে বাংলাদেশে হার্টথ্রব মোটরসাইকেলের ব্যবসা চলছে প্রায় ১৫টিরও বেশি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের হাত ধরে। এর মধ্যে আমাদের প্রিয় কোনগুলো? আপনি যদি একটি মোটরসাইকেল কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে দেখে নিন আমাদের আরেকটি প্রবন্ধ প্রথম বাইক কেনার আগে যে বিষয়গুলো আপনার জানা প্রয়োজন

আজকে আমরা বাংলাদেশের সেরা ৫টি মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড ও তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সর্বোচ্চ বিক্রিত বাইকগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন তবে শুরু করি।

বাজাজ

আমরা ইতোমধ্যে জানি যে বাজাজ ভারতের সর্ববৃহৎ মোটরসাইকেল কোম্পানি। বিক্রি ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে এটি আমাদের দেশেও একটি সুবিশাল ব্যান্ড। আমাদের দেশে তাদের পণ্যের তালিকা খুব একটা বেশি না হলেও, তাদের কিছু ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্র্যান্ড রয়েছে যেগুলো এ দেশের রোমাঞ্চপ্রেমী বাইকারদের হৃদয়ে আসন করে নিয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে বাজাজ বাংলাদেশে বাইকিং এর সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছে। তাদের ‘পালসার’ ও ‘ডিসকভার’ বাংলাদেশের সড়কপথে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। বাজাজের আরো কিছু জনপ্রিয় বাইকের সিরিজ হলো ‘বাজাজ প্লাটিনা’ ও ‘বাজাজ সিটি’।

টাইমিং চেইন নষ্ট বুঝবেন কীভাবে?

বাংলাদেশের বাজাজের জনপ্রিয় হবার দরুন এর স্পেয়ার পার্টস গুলো সব যায়গায় পাওয়া যায় এবং বাংলাদশের প্রায় সব ধাঁচের মেকানিকই এই বাইকগুলোর কলকব্জা ও অভ্যন্তরীণ কার্যকলাপের উপর বিশেষভাবে অভিজ্ঞ।

Motorcycle Wheels Why pull to one side?

হোন্ডা

আপনারা সকলেই হোন্ডা বাইকগুলোর কথা জানি। বিশ্বব্যাপী হোন্ডার বিপুল জনপ্রিয়তা ও সর্বোৎকৃষ্ট কোয়ালিটির ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। অনেক উত্থান পতনের আমাদের সেরা ৫ এর তালিকায় হোন্ডার অবস্থান দ্বিতীয় তে এসেছে এবং যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই এসেছে।

আমরা সকলেই জানি যে বাংলাদেশে বিগত শতাব্দীর শেষদিকে হোন্ডার স্বর্ণযুগ চলছিলো। কিন্তু যখন ‘অ্যাটলাস বাংলাদেশ’ বাংলাদেশে হোন্ডার ডিস্ট্রিবিউশন বন্ধ করে দিলো, তখন এদেশের মোটরসাইকেলের মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ ভারতের অন্যান্য মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডগুলোর হাতে চলে যায়। ফলস্বরূপ মার্কেট থেকে হোন্ডার নাম বেশ কিছু সময়ের জন্য ঝাপসা হয়ে আসে। আর এখন প্রায় এক দশক পর হোন্ডা আবারো ফিরে এসেছে ‘বাংলাদেশ হোন্ডা লিমিটেড’ এর হাত ধরে।

Which engine oil is a best for motorbike

হোন্ডার পণ্যগুলোর উচ্চমূল্য, স্পেয়ার পার্টস ও পর্যাপ্ত ডিলার পয়েন্ট এর অভাব থাকা সত্ত্বেও হোন্ডা ধীরে ধীরে তার অবস্থান ফিরে পাচ্ছে তাদের শক্তিশালী পণ্যের জনপ্রিয়তার জন্য। আন্তর্জাতিক মার্কেটের সাথে তাল মিলিয়ে হোন্ডা তাদের পণ্যের তালিকা ও গুনগত মান উন্নত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। একই সাথে তাদের উচিত বাজাজের মত দেশব্যাপী নিজেদের ডিলার পয়েন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, যাতে করে সারা দেশের কোনায় কোনায় তারা তাদের পণ্য পৌঁছে দিতে পারে।

ইয়ামাহা

বাংলাদেশের হৃৎস্পন্দনের মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশে ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের তেমন পরিবেশনা ছিলো না। ২০১৬ সাল পর্যন্তও ইয়ামাহা বাইকের নিজস্ব শোরুম বলতে কিছুই ছিলো না। কিন্তু এখন তাদের সেরা বাইকগুলো বাংলাদেশের রাস্তা মাতিয়ে বেড়াচ্ছে রাজার মত। তাদের মসৃণ ইঞ্জিনের গতি ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সাথে আপনি তাদের জনপ্রিয় বাইকগুলোয় চড়ামাত্রই উড়ে যাবার মত অনুভব করবেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে এসিআই মোটরস লিমিটেড ইয়ামাহা এর পণ্যের একমাত্র ডিস্ট্রিবিউটর। তবুও ইয়ামাহার পণ্যগুলো ঝড়ের গতিতে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটে দিনকে দিন আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মার্কেটেও ইয়ামাহা নানা আকর্ষণীয় হার্টথ্রব মডেল ছেড়েছে আমাদের নির্ধারিত সিসি লিমিটের মধ্যে। অতএব উত্তেজনা আকাশছোঁয়া।

Dhoni motorcycle collection

বিক্রির দিক থেকেও ইয়ামাহা আশাতীত ভালো করে আসছে। স্পেয়ার পার্টস সবখানে পাওয়া যাচ্ছে আর আমদানীকারকেরা লেটেস্ট স্পেয়ার পার্টস দোকানে রাখার চেষ্টা করেছেন সবসময়। বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকায় বেশিরভাগ মেকানিকই ইয়ামাহার প্রযুক্তির ব্যাপারে অবগত।, অতএব সার্ভিসিং এর ক্ষেত্রে কোনরকম অসুবিধা হওয়ার কথা না। একই সাথে, এসিআই মোটরস লিমিটেড প্রতিনিয়ত ইয়ামাহা বাইকের জন্য তাদের সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। অতএব নিঃসন্দেহে ইয়ামাহা আমাদের সেরা পাঁচ মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের তালিকায় যায়গা করে নিয়েছে।

এয়ার ফিল্টারে অয়েল আসে কেন?

বাংলাদেশে ইয়ামাহা জনপ্রিয়তার আরো একটি বড় কারণ হলো তাদের বিক্রি পরবর্তী সার্ভিস খুবই প্রশংসনীয়। যেকয়টা ডিলার পয়েন্ট রয়েছে তাদের তার প্রত্যেকটিতেই উচ্চমানের সার্ভিসের জন্য সব রকম যন্ত্রপাতি ও টেকনিশিয়ান রয়েছে।

‘ইয়ামাহা এফজেডএস’ এবং ‘ইয়ামাহা এফজেড ফেজার’ মোটরসাইকেলগুলো তাদের কালেকশনের মধ্যে সর্বাধিক বিক্রিত বাইক। এগুলো বাংলাদেশের সবচেয়ে সেরা ডিজাইনের মোটরসাইকেল বলা চলে। এ বাইকগুলোড় প্রতিটা পার্টস, ছোট হোক বা বড়, খুবই যত্নের সাথে এবং রাইডারের সম্পূর্ণ স্বাচ্ছন্দের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এই বাইকগুলোর গ্রিপ খুবই ভালো ও বাইকগুলো যথেষ্ট স্থায়ী। এজন্যই তুলনামূলক উচ্চমূল্যের মোটরসাইকেল হওয়া সত্ত্বেও মানুষ বাইকগুলো কেনার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। তাদের জনপ্রিয় কমিউটার সিরিজের মধ্যে ‘ইয়ামাহা ওয়াইজেডএফ আর১৫’ বেশ উল্লেখযোগ্য।

টিভিএস

বাংলাদেশে টিভিএস তাদের মোটরসাইকেলের ডিস্ট্রিবিউশন চালাচ্ছে সরাসরি ‘টিভিএস বাংলাদেশ’ নামে। সারাদেশে পরিবহন ক্ষেত্রে টিভিএস বেশ জনপ্রিয় একটি নাম। সাধ্যের মধ্যে দাম ও জ্বালানী-সাশ্রয়ী গুনাগুনের জন্য বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটে টিভিএস বেশ দ্রুত উন্নতি লাভ করছে। টিভিএস বাংলাদেশের কর্পোরেট বিক্রিও সময়ের সাথে বেড়েই চলেছে।

টিভিএস বেশ কিছু লোকাল ও নিজস্ব মেকানিক শপের মাধ্যমে তাদের বিক্রি পরবর্তী সার্ভিস সারা দেশব্যাপী পরিচালনা করছে। স্পেয়ার পার্টসের সুলভ্যতা ও সাধ্যের মধ্যে দামে বিভিন্ন পণ্য টিভিএসকে বাংলাদেশের মোটরসাইকেল মার্কেটে এক অন্যরকম আবেদন তৈরি করে দিয়েছে। অতএব নিঃসন্দেহে টিভিএস আমাদের সেরা মোটরসাইকেল ব্র্যান্ডের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত।

হিরো

বাংলাদেশি মোটরসাইকেল মার্কেটে সর্বাধিক পণ্যের তালিকাসমৃদ্ধ ব্র্যান্ডের মধ্যে হিরো অন্যতম। অনেকটা সময় ধরে ‘নিটোল-নিলয় গ্রুপ’ আমাদের দেশে হিরোর পণ্যের ডিস্ট্রিবিউশন চালিয়ে যাচ্ছে। এদেশের কর্পোরেট কমিউটার ক্ষেত্রে তাদের প্রধান ডিস্ট্রিবিউটর হলো ‘হিরো বাংলাদেশ’।

হিরো বাংলাদেশের খুচরা বা রিটেইল বিক্রির মাত্রাও অসাধারণ। হিরোর রয়েছে বেশ কিছু জনপ্রিয় কমিউটার রাইডের মডেল ও পুরুষ নারী উভয়ের জন্য বিভিন্ন স্কুটারের কালেকশন। হিরো বাংলাদেশের স্পোর্টস বিভাগও বেশ আকর্ষণীয় এবং তাদের ফ্ল্যাগশীপ মডেল ‘হাঙ্ক’ ও ‘এক্সট্রিম’ সিরিজ বহু বছর ধরে ভালো পারফর্ম করে আসছে। তরুণদের কাছে এই বাইকগুলোর আবেদন একেবারেই আলাদা। দু’টো মডেলেরই অন্যতম আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে প্রতিটি বাইকে রাইডার ও প্যাসেঞ্জার প্রত্যেকের স্বাচ্ছন্দের সুবিধা। এই বাইকগুলোয় রয়েছে ডাবল-সাসপেনশন, অতএব একটি দীর্ঘপথ পাড়ি দেবার পরও বাইকের আরোহীরা তেমনটা ক্লান্ত অনুভব করেন না। বাইকগুলো ভালোমানের শক-অ্যাবজরবেন্ট এবং নয়েসমুক্ত, ব্রেকিং এবং সিটিং পজিশন চমৎকার, সবমিলিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম স্থায়ী ও আরামদায়ক রাইডিং সিরিজ।

বিভিন্ন নিবেদিত ডিলারদের সহায়তায় দেশব্যাপী হিরোর ডিস্ট্রিবিউশন চলছে। তারা বিভিন্ন লোকাল মেকানিক শপের সাহায্য নিয়ে তাদের বিক্রি পরবর্তী সার্ভিস চালিয়ে যাচ্ছে, প্রায় ৩ বছর পর্যন্ত সার্ভিস ওয়ারেন্টি দিচ্ছে, যা অন্যান্য ব্র্যান্ডের তুলনায় বেশি। তাদের অফিশিয়াল ভ্রাম্যমান টেকনিকাল টীমও বিভিন্ন সার্ভিস শপগুলোয় যেয়ে ভালো কোয়ালিটির সার্ভিসের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকেন। অতএব হিরো নিঃসন্দেহে আমাদের সেরা ৫ এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

শেষ করবার আগে আমরা সবসময়ের মতই বলে নিতে চাই যে এই তালিকাই শেষ তালিকা নয় এবং কোন বাইকই ১০০ ভাগ নিখুঁত নয়। আপনার কাছে কোন ব্যাপারটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কোন মোটরসাইকেল আপনার জন্য সেরা তা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভরশীল। যেকোন সিদ্ধান্ত নেবার আগে অবশ্যই ভালোভাবে আপনার পছন্দের বাইকটি নিয়ে পড়াশোনা করে নিন এবং কেনার আগে হাতের অসংখ্য অপশন অনলাইন বা অফলাইনের মার্কেটপ্লেসগুলোয় ভালোভাবে দেখে নিন।