ইয়ামাহা আন-অথরাইজডভাবে বাইক বিক্রি বন্ধে আশাবাদী

ডিসেম্বর 16, 2019

ইয়ামাহা আন-অথরাইজডভাবে বাইক বিক্রি বন্ধে আশাবাদী

বাংলাদেশে তিন বছর ধরে ইয়ামাহা বাজারজাত করে আসছে এসিআই মোটরস। গত বছর ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে বিক্রি সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের। সম্প্রতি এসিআই বাইকের কিছুটা দাম কমিয়েছে, পাশাপাশি বিভিন্ন অফার চলছে তাদের।

এই সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আমারা #CuriousBiker কথা বলেছিলাম এসিআই মোটরস এর নির্বাহী পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস এর সাথে, সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওমর ফারুক

কিউরিয়াস বাইকার: সম্প্রতি FZS V2 তে দাম কিছুটা কমে এসেছে, FZS V3 তেও অফার চলছে, এই দাম কমার পেছনে মূলত কী কী কারন কাজ করছে?

সুব্রত রঞ্জন দাস:
এর অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে FZS V2 আমরা ইতিমধ্যে CKD তে বাজারজাত করছি, খুব তাড়াতাড়ি FZS V3 ও CKD হবে। পাশাপাশি নতুন ট্রাফিক আইনের কারনে বাইকের কাস্টমার আশঙ্কাজনক ভাবে কমে গিয়েছে, যেটা আমাদের জন্য একটা সংকেত। এই কাস্টমার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা এই অফার গুলি দিচ্ছি। যদিও আমরা বিগত বছরে বেশ ভালো কাস্টমার পেয়েছি অন্য বাইক পরিবেশক কম্পানি গুলির তুলনায়।

দাম কিছুটা কমে এসেছে এর মানে এই না যে আমরা এর আগে অনেক বেশি মুনাফা করছিলাম, আসলে আমরা আমাদের সাপ্লায়ার (Yamaha india) এর সাথে আলোচনা করেই করেছি, দুদিক থেকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে এই বিষয়ে। তবে আপনি যদি বাংলাদেশের ইয়ামাহা এর প্রতিযোগী দের দাম কমানোর প্রবণতা দেখেন তবে দেখবেন আমাদের দাম কমানোর হার অন্যদের তুলনায় অনেক কম। কারন আমাদের মুনাফা খুব সামান্য, চাইলেই কমাতে পারি না আমরা।

আবার ACI বাংলাদেশে সব সময় আপডেটেড বাইক বাংলাদেশে লঞ্চ করছে, অন্যদিকে বাইকের মান, স্বাচ্ছন্দ্যতা ইত্যাদি অন্যান্য FI বাইক থেকে অনেক বেশি উন্নত। এই সব দিক বিবেচনা করলে আপনি দেখবেন দাম খুব একটা বেশিও না।

আমরা চেষ্টা করছি আমাদের বিক্রয় উত্তর সেবাতে কোন প্রকার ছাড় না দিতে, সারা বাংলাদেশে একই সাথে একই রকম সেরা মানের সার্ভিস দিতে।

আরেকটা বিষয় হল ইয়ামাহা বাইক কিনতে চায়না এমন বাইক লাভার কম, কিনতে চায় কিন্তু বাজেট এর কারনে পারে না, এই কারন টিও এর পেছনে কাজ করেছে যে এই কাস্টমার গুলাকেও আমরা টাচ করতে চাই। পাশাপাশি ইয়ামাহা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাইক লাভারদের মাইন্ড শেয়ার প্রায় ৮০ ভাগ। তাঁরা ইয়ামাহা নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসে, আর আমরাও এই বিষয়টি বেশ উপভোগ করি, কারন তারাই আমাদের সামনে এগিয়ে যাবার মূল প্রেরনার অগ্র দ্যূত।

কিউরিয়াস বাইকার: আমারা জানি ACI বাংলাদেশে ইয়ামাহার একমাত্র পরিবেশক, এর পরেও বাইরে ইয়ামাহা বাইক বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে, এই ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

সুব্রত রঞ্জন দাস:
সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অবস্থান দেখা যাচ্ছে তাতে আমরা খুব আশাবাদি। কারন এই বাইক গুলার একে তো সার্ভিস এর কোন নিশ্চয়তা নেই পাশাপাশি অনেক ভুল তথ্য দিয়ে বাংলাদেশে এনেছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আপনারা এই ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ দেখতে পাবেন।

একটা উদাহরণ দেই, ক্যাসিনো নিয়ে সরকার যেমন পদক্ষেপ নিয়েছে, এর পেছনে কারা কারা জড়িত ছিল তাদেরও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। সরকার চাইছে সব ক্ষেত্রে এই রকম পদক্ষেপ নিতে। এবং আমাদের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

আর শুধু গ্রে-মার্কেটে ইয়ামাহা না অন্য অনেক বাইক বিক্রি হচ্ছে, এই বিষয়ে অন্য বাইক পরিবেশক কোম্পানি গুলাও পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এই বিষয়ে পদক্ষেপ আপনারা দেখতে পাবেন।

কিউরিয়াস বাইকার: বর্তমানে ইয়ামাহা সেলুটো বাইক CKD ফরমেটে বাজারজাত করছে। ভবিষতে আর কোন কোন মডেল CKD ফরমেটে বাজারজাত করার সম্ভাবনা রয়েছে?

সুব্রত রঞ্জন দাস: তিনি বলেন ইয়ামাহা হাই-স্পেশিফিকেশন এর বাইক, পাশাপাশি বাংলাদেশে বাইক তৈরির অন্য যে সকল পার্টস বা উপকরণ আছে তার সরবরাহ টা খুব বেশি সন্তোষজনক না। তার পরেও আমাদের সেলুটো এবং FZS V2 CKD হচ্ছে এবং পাশাপাশি FZS V3 CKD এর দিকে যাচ্ছে।

কিউরিয়াস বাইকার: দীর্ঘ ৩ বছর এর বেশি সময় ধরে ACI Yamaha বাইক বাজারজাত করছে, বর্তমানে ইয়ামাহা এর মার্কেট শেয়ার কত?

সুব্রত রঞ্জন দাস: বাংলাদেশে ২.৫ লাখ টাকার বাইকের কাস্টমার আছে ৭%, এই দিক থেকে আপনি দেখলে দেখবেন ৯৩% ক্রেতার বাজেট ইয়ামাহা বাইকের বাজেটের নিচে। এই ৭% ক্রেতার মোটামুটি ৮০% ক্রেতাকে আমারা ইয়ামাহা এর কাস্টমার করতে চেষ্টা করি, কোন কোন সময় এর বেশিও হয়ে যায়। আপনি সার্বিক মার্কেট শেয়ার হিসেব করলে দেখবেন বর্তমানে ১৫০ সি সি সেগমেন্ট এ আমাদের মার্কেট শেয়ার ১২%। আর ১২৫ সি সি সেগমেন্ট এ সাম্প্রতিক সময়ে দাম কমানোর কারনে আমরা ভালো রেসপন্স পাচ্ছি।

কিউরিয়াস বাইকার: সাম্প্রতিক সময়ে ইয়ামাহা ইন্ডিয়া FZS V3 BS6 লঞ্চ করেছে, এই বাইকটি কবে নাগাদ বাংলাদেশে আসতে পারে?

সুব্রত রঞ্জন দাস: বাংলাদেশের জন্য বর্তমান FZS V3 BS4 বাইক টাই বেষ্ট, পাশাপাশি BS6 ও BS4 বাইকের ইঞ্জিনে সামান্য পরিবর্তন হলেও পারফর্মেন্স এ তেমন পরিবর্তন আসবে না। তাই আপাতত এটা আনার কোন পরিকল্পনা নেই।

কিউরিয়াস বাইকার: FZS V3 নিয়ে যে অভিযোগ আছে এর টপ স্পিড V2 এর তুলনায় কম, এই ব্যাপারে নতুন কোন আপডেট আসতে পারে কিনা?

সুব্রত রঞ্জন দাস: আমাদের কাস্টমার ফিটবেক বলে FZS V3 এর টপ এখন ১২৫, রিসেন্ট আমাদের কক্সবাজারে বড় একটা প্রোগ্রাম হয়ে গেল, সারা দেশ থেকে প্রায় ৮০০ এর মত বাইকার এসেছিলেন যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক FZS V3 ছিল। তাদের ফিডব্যাক আশাবাঞ্জক, তাই এটা নিয়ে আপাতত এই রকম কোন পরিকল্পনা নেই।

কিউরিয়াস বাইকার:
দেখা যায় একটি নতুন মডেল বাজারে আসলে পুরোনো মডেল আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়, যেহেতু FZS V3 এখন মার্কেটে নতুন তাই FZS V2 আর কত দিন মার্কেটে থাকবে?

সুব্রত রঞ্জন দাস: আমাদের ধরনা ছিল যে FZS V3 আসার পরে FZS V2 এর বিক্রি কিছুটা কমে আসবে, কিন্তু আমাদের মার্কেট সেল ডাটা বলে এটার এখোনো বেশ চাহিদা আছে। খুব তাড়াতাড়ি এটা বন্ধ হবার সম্ভাবনা নেই।

কিউরিয়াস বাইকার: ইয়ামাহা নিয়ে এসিআই মোটরস এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সুব্রত রঞ্জন দাস: উচ্চ প্রযুক্তির মোটরসাইকেল শ্রেণিতে আমরা ১ নম্বর অবস্থান ধরে রাখতে চাই। এ জন্য আমরা সর্বোচ্চ মানের পণ্য ও সেবা গ্রাহককে দিতে চাই।

বাংলাদেশে ইয়ামাহা, বাইক সম্পর্কিত এবং বাইকার দের নিয়ে যে সকল ইভেন্ট করে, এই ইভেন্ট গুলো অন্যান্য দেশে সকল বাইক পরিবেশক কোম্পানি করে। আর ইয়ামাহা বাংলাদেশে বাইকারদের নিয়ে কাজ করতে চায়, আপনি দেখে থাকবেন ইয়ামাহা এর প্রোগ্রামে শুধু ইয়ামাহা বাইক ইউসার না সকল বাইক লাভারদের সমান ভাবে অংশ গ্রহনের সুযোগ থাকে।

আমরা এই কাজ টা এই জন্য করি কারন সকল পেশোনেট বাইকার, সকল ধরনের সেইফটি গিয়ার ব্যবহার করে, এতে নতুন বাইকার অনুপ্রাণিত হয়।