কার্বুরেটর ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?

জুলাই 31, 2019

কার্বুরেটর ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?
মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকের কার্বুরেটর ইঞ্জিন নামটার সাথে মোটামুটি সবাই পরিচিত। কিন্তু কেবল পরিচিত হলেই কি হবে? এটা কিভাবে কাজ করে, কার্বুরেটর ইঞ্জিন কি এগুলো তো জানতে হবে।

মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকের কার্বুরেটর ইঞ্জিন নামটার সাথে মোটামুটি সবাই পরিচিত। কিন্তু কেবল পরিচিত হলেই কি হবে? এটা কিভাবে কাজ করে, কার্বুরেটর ইঞ্জিন কি এগুলো তো জানতে হবে।

কার্বুরেটর ইঞ্জিন কি? :
মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকের কার্বুরেটর হলো এমনই এক যন্ত্র যা একটি অন্তঃদহ ইঞ্জিনে বায়ু ও জ্বালানীর মিশ্রণ ঘটায়। অন্তঃদহ ইঞ্জিন হলো যে ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে দহন ঘটে। কার্বুরেটর বায়ু চাপের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে এর প্রধান কাজ যেমন বায়ু ও জ্বালানীর মিশ্রণ ঘটায়। মোটর সাইকেল বা বাইকের কার্বুরেটরের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম নয়। ইঞ্জিনের পিস্টন উপরে উঠে যাওয়ার কারনে সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে ফাঁকা স্থানের সৃষ্টি হয় যা সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে নিন্মচাপ যুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি করে। কিন্তু বাইরের তীব্রচাপ বাইরের বায়ুকে ভিতরে প্রবেশ করতে প্রচুর চাপ প্রয়োগ করে ফলে বাইরের সতেজ বায়ু গ্যাস চেম্বারে প্রবেশ করে।

কার্বুরেটরের আবিষ্কার :
কার্বুরেটর আবিষ্কার হয় ১৮৭৬ সালে। আবিষ্কারক লুইজ ডি ক্রিস্টফারিস নামক একজন ইতালীয় নাগরিক। এর পরে ১৮৮২ সালে পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাগারে এনরিক বার্নাডি নামক একজনের কল্যাণে কার্বুরেটর ইঞ্জিনের অনেক উন্নতি সাধন হয়। তিনি মূলত করেছিলেন তার মটরিস পিয়া”এর জন্য, যেটা ছিল প্রথম পেট্রোল ইঞ্জিনের (১ সিলিন্ডার ১২২৫ সিসি) প্রোটোটাইপ (সাধারন গঠন), এটা তিনি তৈরী করেন ১৮৮২ সালের ৫ আগস্ট।

কার্বুরেটরের আকৃতি :

মোটর সাইকেল বা বাইকের কার্বুরেটর আলাদা। অন্যান্য গাড়ির কার্বুরেটরের মত নয়। যেখানে একটি কারের কার্বুরেটর ইঞ্জিনের গতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় সেখানে একটি মোটর সাইকেল বা বাইকের কার্বুরেটর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে যেগুলো ইঞ্জিনে বায়ুর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে । সর্বোচ্চ গতিতে যে ব্যবস্থাটি কাজ করে সেটিকে বলে প্রধান জেট । এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি খোলা অংশ যেটা বায়ুকে খুব দ্রুত প্রবেশ করায় । প্রধান জেটের ভিতরে একটি জেট নিডল ( কাটার মত অংশ) রয়েছে । থ্রটল যত দ্রুত বৃদ্ধি করা হয় এই জেট নিডলটি ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে ফলে কার্বুরেটরের মধ্যে থাকা বায়ু প্রবেশ করার প্রবেশপথটি বায়ু প্রবেশ করার জন্য খুলে যায় । সর্বোচ্চ থ্রটলে থাকা অবস্থায় এই প্রবেশপথটি সম্পূর্ণ খুলে যায় । পাইলট জেট ও স্লাইড ভালভ হল দুটি আলাদা ব্যবস্থা যেগুলো মোটরসাইকেল যখন কম গতিতে চলে তখন ছোট ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে বায়ুর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে ।

কার্বুরেটর কিভাবে গঠিত :
কার্বুরেটরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অংশটা হলো টিউব। পুরো একটি প্লেটের মাধ্যমে বায়ুর টিউবের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করার প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ হয়, আর এই প্লেটকে বলা হয় থ্রটল। টিউবের কিছু কিছু জায়গা কিছুটা চাপা এগুলোকে বলা হয় ভেঞ্চুরি এবং এই চাপা জায়গাগুলোর মধ্য দিয়ে বায়ু পরিবাহিত হয়। এই চাপা জায়গাগুলোতে একটি গর্ত থাকে একে বলা হয় জেট যা বায়ুকে জ্বালানীর দিকে পরিবাহিত করে । জ্বালানী ট্যাঙ্ক হতে জ্বালানী কার্বুরেটরে প্রবেশ করে । এ জ্বালানী কতগুলো ফিল্টারের মধ্য দিয়ে যায় যা জ্বালানীর সাথে থাকা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তুর কার্বুরেটরে যাওয়া আটকে দেয় । কার্বুরেটরের অভ্যন্তরে একটি পাত্রে জ্বালানী জমা হয় যাতে প্রয়োজন মত সরবরাহ করা যায় । জ্বালানীর সরবরাহ একটি নিডল ভালভ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং একটি ফাঁপা দণ্ড জ্বালানীর উপরে নিচে উঠানামা করে । জ্বালানী লেবেল যখন সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায় তখন দণ্ডটি নিডল ভালভ বন্ধ করে দেয় ফলে কোন জ্বালানী আর পাত্রে প্রবেশ করতে পারে না । জ্বালানী পাত্রটি হতে জেট ও ভেঞ্চার টিউবে প্রবাহিত হয় । এটা অনেকটা নলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার মত।

কার্বুরেটর ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে? :
কার্বুরেটর ইঞ্জিন একজন বিজ্ঞানীর দেখিয়ে যাওয়া পথ অনুসরণ করে বা হাঁটে। অথবা বলা যায় তার নীতিমালা মেনেই চলে। ডাচ বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল বার্নোলী এই নীতিমালা তৈরি করেছিলেন। তার নীতিমালায় বলা হয়েছে, যখন কোন সংকীর্ণ জায়গা দিয়ে তরল পদার্থ প্রবাহিত হয়, দ্রুত প্রবাহিত তরল ধীরে ধীরে প্রবাহিত হওয়া তরলের চেয়ে কম চাপ তৈরি করে। এই সূত্র আমাদের চার পাশেই লক্ষ্য করা যায়। মূলত কার্বুরেটর, ইঞ্জিনের তৈরি ভ্যাকুয়ামে বায়ু ও গ্যাসোলিনের মিশ্রণ তৈরি করে। এখানে বাতাস ট্যাকনিক্যালি গ্যাস রূপে আসে এবং তরল পদার্থ হিসেবে প্রবাহিত হয়। কার্বুরেটরের মাধ্যমে বাতাস একটি ফিল্টারে প্রবেশ করে তার মাধ্যমে টিউবের উপরিভাগে প্রবাহিত হয়। কিছু কিছু কার্বুরেটরে টিউবের উপরিভাগে আবদ্ধ ভাল্ব দেখা যায় যেটা দিয়ে নিয়ন্ত্রিত বাতাস ও ফুয়েল প্রবেশ করে। কার্বুরেটর চক সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। আর এই দুটি হলো : ম্যানুয়েল আর ইলেকট্রিক। ম্যানুয়েল কার্বুরেট চকে বাতাসের পরিমাণ ইচ্ছে মত বাড়ানো এবং কমানো সম্ভব। কিন্তু ইলেকট্রিক কার্বুরেটর ভিন্ন। ইলেকট্রিক কার্বুরেটরে নিজে থেকেই বা অটোমেটিক ভাবে বাতাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। ম্যানুয়েল কার্বুরেটর চকের অভ্যন্তরে লিভার মিটার থাকে যেটার দ্বারা বাতাস প্রবাহের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অন্য দিকে ইলেকট্রিক কার্বুরেটর চকে কোন লিভার মিটার থাকে না বাতাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। যার ফলে নির্দিষ্ট পরিমাণ বাতাস নিজে থেকেই প্রবাহিত হয়ে থাকে।

আলোচনার শুরু থেকে যদি দেখি তবে কার্বুরেটর ইঞ্জিন হলো মোটর সাইকেলে কার্বুরেটর হল সেই যন্ত্র যা একটি অন্তঃদহ ইঞ্জিনে (যে ইঞ্জিনের অভ্যন্তরে দহন ঘটে) বায়ু ও জ্বালানীর মিস্রন ঘটায় । কার্বুরেটর বায়ু চাপের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে এর প্রধান কাজ অর্থাৎ বায়ু ও জ্বালানীর মিশ্রণ ঘটায় । মোটরসাইকেলের কার্বুরেটরও এর ব্যতিক্রম নয় । ইঞ্জিনের পিস্টন উপরে উঠে যাওয়ার কারনে সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে ফাঁকা স্থানের সৃষ্টি হয় যা সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে নিন্মচাপ যুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি করে। কিন্তু বাইরের তীব্রচাপ বাইরের বায়ুকে ভিতরে প্রবেশ করতে প্রচুর চাপ প্রয়োগ করে ফলে বাইরের সতেজ বায়ু গ্যাস চেম্বারে প্রবেশ করে এবং গ্যাসের সাথে মিশ্রিত হয়। এবং কার্বুরেটর ইঞ্জিনের কাজ কি এবং কিভাবে কাজ করে এটাও জানলাম উপরের আলোচনায়। কাজেই কার্বুরেটর ইঞ্জিন এবং তার কাজ নিয়ে সকল বাইকারেরাই ধারণা নিয়ে রাখতে পারবে।