কার্বুরেটর নাকি ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন ?

মে 11, 2020

কার্বুরেটর নাকি  ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন ?

বাজারে এখন দুই ধরনের মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক আছে। যার একটিতে পাওয়া যাচ্ছে কার্বুরেটর সিস্টেম। আর অন্য একটিতে পাওয়া যাচ্ছে ফুয়েল ইঞ্জিন সিস্টেম। বহু বছর থেকে অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু থেকেই কার্বুরেটর সম্বলিত মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক সড়কে রাজত্ব করে আসছে। কিন্তু কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে বাজারে এসেছে অন্য একটি সিস্টেম সম্বলিত মোটর বাইক। আর এটাকে বলা হয় ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন। কেউ কেউ বলছেন বহু বছরের কার্বুরেটর সম্বলিত সিস্টেমকে তাড়াতেই এমন সিস্টেম এসেছে। কিন্তু এবার সৃষ্টি হয়েছে সবচেয়ে বড় বিতর্কের। কোনটা সিস্টেমের মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকটা ভালো? সৃষ্টি থেকে চলো আসা কার্বুরেটর সিস্টেমের বাইক? না কি বাজারে নতুন আসা ফুয়েল ইঞ্জেকশন? কিন্তু আমি বা আপনি যদি এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই তবে অবশ্যই এর জন্য দুটো সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্যটা জানতে হবে। না হলে যে আমরা নিজেরা এই বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো না।

কার্বুরেটর সিস্টেম আর ফুয়েল ইঞ্জেকশনের পার্থক্য :

কার্বুরেটর সম্বলিত মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক ইঞ্জিনের দহনের জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করে কার্বুরেটর সিস্টেমের মাধ্যমে। আসলে কার্বুরেটর এমন একটি যন্ত্র বা মূল্যবান অংশ যেটা বাতাস আর জ্বালানিকে কম্বাসশন চেম্বার সেক্টরে পৌঁছে দেয়।

আর এ দিকে ফুয়েল ইঞ্জেকশন পদ্ধতি মোটর বাইক বা মোটর সাইকেলের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমের মাধ্যমে জ্বালানি ইঞ্জিনে পৌঁছে দেয়। এই মাধ্যমে ইঞ্জিনের কম্বাসশন চেম্বারে ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রোল ইঞ্জেকটরের মাধ্যমে জ্বালানি পৌঁছায়।

তবে একটা ব্যাপার কি কার্বুরেটর সিস্টেম বলি আর ফুয়েল ইঞ্জেকশন বলি দুটো ক্ষেত্রেই দহনের জন্য প্রয়োজন বাতাসের। এয়ার ফিল্টার থেকে ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল ইউনিট অথবা ইসি ইউ বাতাস সংগ্রহ করে জ্বালানি সমেত ইঞ্জিনে প্রেরণ করে। ইসি ইউতে একটি সেন্সর রয়েছে। এই সেন্সরের মাধ্যমেই ইঞ্জিনের তাপমাত্রা, অক্সিজেনের পরিমাণ, বাতাসের প্রবাহ, থ্রটল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

পরিশেষে আমাদের একটাই কথা, এই দুটো পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক চলছে আজ অনেকদিন। কিন্তু বিতর্কের পেছনে না দৌড়ে আমাদের উচিত দুটে পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া। যদি ধারণা না নেওয়া হয় বা না জানা হয় তবে যে কেউই বিতর্কে জড়িয়ে যেতে পারেন। আমরা আবার ও বলছি আমরা বিশ্বাস করি দুটো পদ্ধতি আমাদের জন্য সুবিধা জনকই বটে। তবে এই দুটো পদ্ধতির বাইক নির্বাচক করা হোক নিজের সুবিধা অনুযায়ী, লোক মুখে শোনা কথায় নয়।

ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম

১৯৮০ সালের দিকে সর্বপ্রথম মোটরসাইকেলে ইলেক্ট্রনিক্স FI সিস্টেম ব্যবহার হওয়া শুরু হয়। এটি মোটরসাইকেল জগতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন বলা যেতে পারে। ইলেক্ট্রনিক্স প্রসেসর নিয়ন্ত্রিত সিস্টেমটি জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করে।

ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেমটি মুলত কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত একটি অংশ যা মোটরসাইকেলের অবস্থান, গতি, তাপমাত্রা ইত্যাদির অবস্থা বিবেচনা করে ইনজিনে প্রয়োজনীয় সঠিক মাপের শক্তি যোগানের স্বার্থে ইনজিনে জ্বালানি তেলের প্রবাহ নিশ্চিতা করা। এই সিস্টেমে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি ব্রেইন বা প্রসেসর ব্যবহার করা হয় যাকে ECU (Electronic Control Unit) বলে। যার সংগে যুক্ত থাকে একাধিক সেন্সর। যারা মোটরসাইকেলের বিভিন্ন অংশের অবস্থানগত তথ্য ECU এর কাছে পাঠায়। ECU সেন্সরগুলোর পাঠানো তথ্য বিচার করে সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ইনজিনে কি পরিমান জ্বালানির জোগান প্রয়োজন, এবং সেই পরিমান জ্বালানি দিতে Fuel Injector কে নির্দেশ প্রদান করে।

কার, ট্রাক ও অন্যান্য আধুনিক যানবাহনের ইঞ্জিনের মতো বাইকের ইঞ্জিনের ফুয়েল ইঞ্জেকশনও একইভাবে কাজ করে। ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট বা ইসিইউ হিসেবে পরিচিত একটি ক্ষুদ্র কম্পিউটার বৈদ্যুতিক পদ্ধতিতে ইঞ্জিনের ফুয়েল ইঞ্জেকশন নিয়ন্ত্রণ করে। কম ধোঁয়া উৎপাদন, শক্তির অপচয় কমানো ও অধিক অ্যাক্সিলারেশন নিশ্চিত করতে ইঞ্জিনে কতোখানি ফুয়েল ইঞ্জেক্টর থেকে প্রবেশ করবে সেটা থ্রটল, আরপিএম, বায়ু ও ইঞ্জিনের তাপমাত্রা এবং ক্র্যাঙ্কশ্যাফটের অবস্থান প্রভৃতি ভ্যারিয়েবলের ভিত্তিতে ইসিইউ নির্ধারণ করে।

আধুনিক বাইকগুলোতে ফুয়েল ইঞ্জেক্টরগুলো সেকেন্ডে একাধিক বার খুলতে ও বন্ধ হতে পারে। একভাবে বললে বৈদ্যুতিক চিরাচরিত কার্বুরেটরের চেয়ে অনেক সহজ পদ্ধতিতে কাজ করে। সংক্ষেপে বললে, ইএফআই হচ্ছে একটি নজল যেটা কম্পিউটারের নির্দেশ মতো ইঞ্জিন প্রকোষ্ঠে প্রয়োজন অনুসারে বায়ুতে ফুয়েল স্প্রে করে।

ফুয়েল ইনজেকশন এর সুবিধা

  • এর সবথেকে বড় সুবিধা হল জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার।
  • সব সময় একইপরিমান শক্তির যোগান দেয়।
  • এটি সরাসরি স্টার্টার মোটর থেকে শক্তি নেই তায় ঠান্ডায় সহজেই স্টার্ট হয়
  • নিখুত থ্রটল রেসপন্স দেয়
  • তুলনামুলক বেশি মাইলেজ দেয়
  • রাইডিং মোড অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ করে বিধায় জ্বালানি খরচ কম

এখন আসা যাক মুল প্রশ্নে কার্বুরেটর নাকি ফুয়েল ইঞ্জেকশন—কোনটি বেশি ভালো?

আমার মতে ফুয়েল ইঞ্জেকশন সিস্টেম ভাল, কারন

ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিনগুলো বেশি টেকসই হয়, কারণ এতে ইএফআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা নির্ভুলভাবে বায়ু-জ্বালানির অনুপাত নির্ধারণ করতে পারে। ফলে ইঞ্জিনে কখনো অত্যধিক বেশি বা খুব কম তাপমাত্রা তৈরি হওয়ার সুযোগ পায় না। এর কারণেই মূলত স্পার্ক প্লাগগুলো বেশিদিন টিকে, ভাল্বগুলো পুড়ে না এবং পিস্টন রিংগুলো দ্রুত ঝেরঝেরে হয় না। যার ফলে ইঞ্জিন দীর্ঘস্থায়ী হয়।