কার্বুরেটর নাকি ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন, কোনটা উত্তম?

জুলাই 14, 2019

কার্বুরেটর নাকি ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন, কোনটা উত্তম?

কার্বুরেটর নাকি ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন? এটা একটি জাতীয় প্রশ্ন। জাতীয় প্রশ্ন এক কারণেই বলছি সকল বাইকারদের মনে যে এই একটাই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে বারেবারে আসে। এই প্রশ্নটা উঠে আসার পেছনের গল্পটা জানা যাক আগে। বাজারে এখন দুই ধরনের মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক আছে। যার একটিতে পাওয়া যাচ্ছে কার্বুরেটর সিস্টেম। আর অন্য একটিতে পাওয়া যাচ্ছে ফুয়েল ইঞ্জিন সিস্টেম। বহু বছর থেকে অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু থেকেই কার্বুরেটর সম্বলিত মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক সড়কে রাজত্ব করে আসছে। কিন্তু কিছুদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে বাজারে এসেছে অন্য একটি সিস্টেম সম্বলিত মোটর বাইক। আর এটাকে বলা হয় ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন। কেউ কেউ বলছেন বহু বছরের কার্বুরেটর সম্বলিত সিস্টেমকে তাড়াতেই এমন সিস্টেম এসেছে। কিন্তু এবার সৃষ্টি হয়েছে সবচেয়ে বড় বিতর্কের। কোনটা সিস্টেমের মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকটা ভালো? সৃষ্টি থেকে চলো আসা কার্বুরেটর সিস্টেমের বাইক? না কি বাজারে নতুন আসা ফুয়েল ইঞ্জেকশন? কিন্তু আমি বা আপনি যদি এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই তবে অবশ্যই এর জন্য দুটো সিস্টেমের মধ্যে পার্থক্যটা জানতে হবে। না হলে যে আমরা নিজেরা এই বিতর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো না।

কার্বুরেটর সিস্টেম আর ফুয়েল ইঞ্জেকশনের পার্থক্য :

কার্বুরেটর সম্বলিত মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক ইঞ্জিনের দহনের জন্য জ্বালানি সংগ্রহ করে কার্বুরেটর সিস্টেমের মাধ্যমে। আসলে কার্বুরেটর এমন একটি যন্ত্র বা মূল্যবান অংশ যেটা বাতাস আর জ্বালানিকে কম্বাসশন চেম্বার সেক্টরে পৌঁছে দেয়।

আর এ দিকে ফুয়েল ইঞ্জেকশন পদ্ধতি মোটর বাইক বা মোটর সাইকেলের ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমের মাধ্যমে জ্বালানি ইঞ্জিনে পৌঁছে দেয়। এই মাধ্যমে ইঞ্জিনের কম্বাসশন চেম্বারে ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রোল ইঞ্জেকটরের মাধ্যমে জ্বালানি পৌঁছায়।

তবে একটা ব্যাপার কি কার্বুরেটর সিস্টেম বলি আর ফুয়েল ইঞ্জেকশন বলি দুটো ক্ষেত্রেই দহনের জন্য প্রয়োজন বাতাসের। এয়ার ফিল্টার থেকে ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল ইউনিট অথবা ইসি ইউ বাতাস সংগ্রহ করে জ্বালানি সমেত ইঞ্জিনে প্রেরণ করে। ইসি ইউতে একটি সেন্সর রয়েছে। এই সেন্সরের মাধ্যমেই ইঞ্জিনের তাপমাত্রা, অক্সিজেনের পরিমাণ, বাতাসের প্রবাহ, থ্রটল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

এবার আসবো মূল টপিকে। অর্থাৎ যেখানটায় শুরু করেছিলাম। আমরা এত সময় দুটো সিস্টেম আর তার পার্থক্য সম্পর্কে জানলাম। এবার জানতে হবে কোন পদ্ধতিটা ভালো। তবে আগেই বলে রাখছি এই দুটো পদ্ধতি কোনটাই একটা থেকে অন্য আহামরি কিছু এমনটা না। সুবিধা দুটোতেই আছে। কাজেই এখানে ভালো আর খারাপ খুঁজে বের করাটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর নির্ভর করে। নির্ভর করে কে কার্বুরেটর আর ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিনকে কিভাবে নির্বাচন করেন তার উপর।

কার্বুরেটর সিস্টেম অনেক পুরনো। একদম শুরু থেকে এই পদ্ধতি টাই চলে আসছে। এটিকে পুরনো না আদিম যুগের মনে করলেও এর কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তবে একই সাথে রয়েছে অসুবিধাও। সুবিধার কথা বললে শুরুতেই বলতে হয় কার্বুরেটর ফিডিং সিস্টেমের দাম কম। এই সিস্টেমের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও অনেক কম। যেকোনো অবস্থায় এটি থ্রটলকে দ্রুত রেসপন্স করে। তবে অবশ্যই কম সিসি আর কম দামের মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকের জন্য আদর্শ একটা ব্যাপার। আবার যদি অফ রোড বাইক বা ডার্ট বাইকের কথা চিন্তা করি তবে সেই দিক থেকেও এই সিস্টেমটা অনেক ভালো। কেননা, প্রয়োজন অনুযায়ী এটি দ্রুতই থ্রটলের চাহিদা মাফিক ইঞ্জিনে জ্বালানি পৌঁছে দেয়।

এবার আলোচনা করবো এই সিস্টেমের অসুবিধে নিয়ে। সুবিধা যেমন আছে তেমনি আছে অনেক অসুবিধেও। প্রধান যে সমস্যা বা অসুবিধে সেটা হলো এই সিস্টেমে যেসব বাইক চলো বা চলছে সেগুলোর মাইলেজ খুব কম। কার্বুরেটর ফুয়েল ফিডিং সিস্টেমে চালিত বাইক ঠান্ডা অবস্থায় ইঞ্জিন চালু করতে অনেক বেগ পেতে হয়। সহজে ইঞ্জিন চালু হয় না। আর এই বাইকে ধোঁয়া অনেক বেশি হয়। ময়লা জমে স্পার্কে। প্লাগে জ্যাম ধরে যায়। যার ফলে অনেকেই এখন এই সিস্টেমের বাইক এড়িয়ে চলতে চান। আবার অনেকের কাছেই অসুবিধের চেয়ে সুবিধা গুলো বেশি কার্যকরী মনে হয়। এজন্যই এ সিস্টেমের বাইকে আগ্রহী হয়ে থাকেন।

ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন হলো মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকের নতুন আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এর প্রধান সুবিধা হলো মাইলেজ বেশি পাওয়া যায়। ধোঁয়া একদম কম নির্গত হয়। যার জন্য এই সিস্টেমের মোটর বাইককে বলা হয় পরিবেশ বান্ধব। পরিবেশ ও রাইডিংয়ের অবস্থা বিবেচনা করে এই ইঞ্জিন স্বয়ংক্রিয় ভাবে এয়ার ফুয়েল মিশ্রণ ব্যালেন্সে রাখে। আর এর জন্য যতই ঠান্ডা অবস্থা থাকুক না কেন বাইক বা মোটর সাইকেল স্টার্ট হতে কোন সমস্যা হয় না।

এত সময় তো আমরা জানলাম এর সুবিধার দিক গুলো। এবার জানবো এর অসুবিধে গুলো। ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন সিস্টেমে অনেক গুলো অসুবিধে ও রয়েছে। প্রথমেই বলবো এটি বেশ জটিল একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতি বা ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন পদ্ধতিতে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক বেশি। এতটাই বেশি যে অনেক সময় এটা বহন করা চিন্তাও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক ইঞ্জিনিয়ারেরা বলেন এটি যেমন প্রযুক্তি নির্ভর তেমনি এটা অনেক ব্যয় বহুল। আর এজন্যই এটার চাহিদা কিছুটা কম। তবে প্রযুক্তির অত্যাধুনিকতার ফলে শুরুর দিকে চাহিদা ব্যাপার হারে দেখা দিয়েছিলো। ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিনে চালিত মোটর বাইকের জন্য ভালো বা সর্বোচ্চ মানের জ্বালানির প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ ভালো জ্বালানির বিকল্প অন্য কিছু নেই। যদি অন্য কিছু ব্যবহার করা হয় তবে সেটা বাইকের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়ায়। নষ্ট বা ডেমেজ হয়ে যেতে পারে বাইকের সচল ইঞ্জিন ও। এর জন্য অনেকেই এই সিস্টেম টাকে রিস্ক মনে করে। আর এর চেয়েও বড় কথা কম দামি বা কম সিসির বাইকের জন্য এই পদ্ধতি মোটেও সহায়ক না।

এত সময় আমরা আলোচনা করলাম কার্বুরেটর ইঞ্জিন ও ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিন চালিত মোটর সাইকেল ও মোটর বাইকের সুবিধা ও অসুবিধে নিয়ে। এখন ব্যক্তি ভেদে বা রুচি অথবা ইচ্ছের উপর নির্ভর করে। যার কাছে যেটা সুবিধা বা ভালো মনে হয় তারা সেই পদ্ধতির বাইক ই নির্বাচন করেন। যেমন দিন কয়েক আগে একজন বাইক ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা হলে তিনি জানান বাজারে এখন দুটো পদ্ধতির বাইকের ই চাহিদা ব্যাপক। সুবিধা অনুযায়ী যার যেটা পছন্দ তারা সেটাই কিনেন। তবে যদি প্রশ্ন উঠে কোনটা ভালো তবে সে ক্ষেত্রে দুটোই দুটোর দিকেই সাপোর্টের পাল্লাটা সমানে সমান। যদিও দেশের অনেক মোটর বাইক মেকানিকদের ভাষ্য কম সিসি, কম দামি এবং ডার্ট ও অফ রোড বাইকের জন্য আদর্শ পদ্ধতি কার্বুরেটর ইঞ্জিন। আর যদি আপনি বিলাসী হোন বা মোটর বাইকের পেছনে অর্থ ব্যয় করতে পারবেন মনে করেন তাহলে অধিক মাইলেজ এবং পরিবেশের কথা চিন্তা করে ফুয়েল ইঞ্জেকশন ইঞ্জিনের মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক নির্বাচন করতে পারেন।

পরিশেষে আমাদের একটাই কথা, এই দুটো পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক চলছে আজ অনেকদিন। কিন্তু বিতর্কের পেছনে না দৌড়ে আমাদের উচিত দুটে পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেওয়া। যদি ধারণা না নেওয়া হয় বা না জানা হয় তবে যে কেউই বিতর্কে জড়িয়ে যেতে পারেন। আমরা আবার ও বলছি আমরা বিশ্বাস করি দুটো পদ্ধতি আমাদের জন্য সুবিধা জনকই বটে। তবে এই দুটো পদ্ধতির বাইক নির্বাচক করা হোক নিজের সুবিধা অনুযায়ী, লোক মুখে শোনা কথায় নয়।