কিভাবে বুঝবেন বাইকের ক্লাচ প্লেট নষ্ট হয়েছে

জুলাই 12, 2019

কিভাবে বুঝবেন বাইকের ক্লাচ প্লেট নষ্ট হয়েছে

আমরা যারা মোটর বাইকের সাথে বহু বছর ধরে পরিচিত তাদের কাছে ক্লাচ শব্দটাও বেশ পরিচিত। আর এ কারণেই পরিচিত যে মোটর বাইক চালানো শিখতে হলে এই ক্লাচের ব্যবহারটাও শুরুতে সঠিকভাবে শিখতে হয়। চলুন তবুও জেনে নেওয়া যাক ক্লাচটা আসলে কি।

ক্লাচ কি :
ক্লাচ হলো মেকানিকাল কাপলিং যা ইঞ্জিনে রোটেশনাল এনার্জি সাপ্লাই হতে সাহায্য করে। আবার অনেক সময় এই কাপলিং এনার্জি সাপ্লাইয়ে বাঁধারও সৃষ্টি করে। যখন ক্লাচ পুল করা হয় তখন ইঞ্জিনের পাওয়ার ট্রান্সমিশন বন্ধ থাকে। আবার ক্লাচ ছেড়ে দিলে এই পাওয়ার ট্রান্সমিশন চলতে থাকে।

বাইকের ক্লাচ প্লেটের অবস্থা বুঝতে হলে অবশ্যই পরীক্ষার প্রয়োজন। কেন না পরীক্ষা ছাড়া আপনি বা আমি সহজে বুঝে উঠতে পারবো না।

ক্লাচ প্লেট পরীক্ষা :
শুরুতেই আপনাকে একদম শান্তি শিষ্ট একটি রাস্তা নির্বাচন করতে হবে। যেন এমন রাস্তায় গাড়ি চলাচল কম বা একেবারেই হয় না এমন রাস্তা। সে ক্ষেত্রে কোন আবাসিক মহল্লা বা গলির রাস্তা বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাস্তা হলে ভালো হয়। মোটর বাইক স্টার্ট করলেন ৩য় গিয়ারে। কিন্তু এখানে আরপিএম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ক্লাচ প্লেট পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে। একটি নির্দিষ্ট আরপিএম প্রয়োজন। ৩k আরপিএমে আপনাকে বেশিক্ষণ চালাতে হবে। এই ৩k আরপিএম আর ৩য় গিয়ারে চালাতে থাকেন। চালাতে চালাতে হঠাৎ করেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। আর সেটা হলো হঠাৎ করেই ফুল থ্রটল দিয়ে ধরে রাখুন। এবারই আসল ব্যাপার বুঝা যাবে। মোটর বাইক কি আপনার কাজে সারা দিচ্ছে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন। এখানে দুটো জিনিস ঘটতে পারে। আর তার উপরই নির্ভর করবে আপনার বাইকের ক্লাচ প্লেট কেমন আছে। যদি স্পীড হঠাৎ বেড়ে গিয়ে ফুল থ্রটল আরপিএম এর সাথে বাইকের স্পিডে দ্রুত মিশে যাচ্ছে বা সমন্বয় তৈরি করছে তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনার বাইকের ক্লাচ প্লেট ঠিক আছে। এবার ২য় জিনিস যেটা ঘটতে পারে তা হলো যদি দেখা যায় ফুল থ্রটল দেওয়ার পরে উচ্চ আরপিএম এর সাথে স্পিড আস্তে আস্তে বাড়ছে এবং সমন্বয়ে একটু বেশি সময় নিচ্ছে তবে বুঝে নিতে হবে আপনার মোটর বাইকের ক্লাচ প্লেটে সমস্যা আছে। এখন সবচেয়ে বড় কথা হলো এভাবে খুবই সূক্ষ্ম ভাবে বেশ কয়েকটা পরীক্ষা করতে হবে। মাত্র এক দুইবার পরীক্ষা করেই রোগ নির্বাচন করাটা বোকামী। সময় নিয়ে ভালো করে বুঝতে হবে পুরো ব্যাপারটা। তবেই আপনি বুঝতে পারবেন মোটর বাইকের ক্লাচ প্লেটের অবস্থা।

এখন যে পরীক্ষার ব্যাপারে বললাম এটা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না বা সবাই সঠিকভাবে করতে পারে না। তাই এখন ক্লাচ প্লেট টেস্ট করার আরেকটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো। এই টেস্ট বা পরীক্ষা করতে হয় মোটর বাইকের ইঞ্জিন খুলে।

বিকল্প পদ্ধতিতে ক্লাচ প্লেট পরীক্ষা :
ক্লাচ এসেম্বলি মূলত পাঁচটি অংশ নিয়ে থাকে। ক্লাচ প্রেসার প্লেট, ক্লাচ প্লেট, প্রেসার প্লেট, ক্লাচ প্লেট, ক্লাচ হাউজিং। এই পাঁচটি ধাপকে ঘিরেই এই পরীক্ষা। শুরুতেই ইঞ্জিন থেকে সকল ক্লাচ অংশ খুলে নিতে হবে। আর একইসাথে সকল পেট্রোল শুকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর যেটা করণীয় সেটা হলো ক্লাচ আর প্রেসার প্লেটের পুরুত্ব মাপতে হবে ভার্নিয়ার স্কেলের মাধ্যমে। ভার্নিয়ার স্কেল ছাড়া এটা সম্ভব হবে না। ক্লাচ প্লেট তো মোটামুটি সবারই চেনা জানা। কিন্তু কোটিং ম্যাটেরিয়াল সম্পর্কে ধারণা খুব কম মানুষের আছে। এই পরীক্ষার আগে কোটিং ম্যাটেরিয়াল কি সেটা জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটা মূলত ছোট ছোট বাদামী রংয়ের হয়ে থাকে। গভীরতার মাপের সাথে কোটিং ম্যাটেরিয়ালের পুরুত্ব ও মাপতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। এবার প্রতিটা ক্লাচ প্লেট আর প্রেসার প্লেটের মাপ নিতে হবে। প্রতিটি মাপ মনে রাখতে হবে। অথবা প্রয়োজন কোন জায়গায় লেখে রাখতে পারেন। এরপর প্রয়োজন একটি নতুন ক্লাচ প্লেট এবং তার পুরুত্বের হিসাব। এবার আপনার মোটর বাইকে ব্যবহৃত আর নতুন ক্লাচ প্লেটের মধ্যে পুরুত্ব মেপে দেখেন। যদি নতুন ক্লাচ প্লেটের সাথে ব্যবহৃত ক্লাচ প্লেটের পার্থক্য ০.২০-০.২৫ এম এম এর বেশি হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার বাইকের জন্য নতুন ক্লাচ প্লেট প্রয়োজন। তবে বাইক অনুযায়ী এই পার্থক্যের গড়মিল হতে পারে। তবে বেশি হলেই যে ক্লাচ প্লেট খারাপ এমনটা না। আমি এখানে গড় হিসেবেরটা বললাম। কিন্তু বাজারে এখন অনেক বাইক আছে যেগুলো পার্থক্য আরো বেশি হওয়ার সম্ভবনা বেশি। সেজন্য অবশ্যই একজন বাইক ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। আর ক্লাচ প্রেসার প্লেটের ক্ষেত্রে রুক্ষ, সমতল, টাইট আর মসৃণ আছে কি না দেখতে হবে। না হলে ক্লাচ প্রেসার প্লেট বদলে নেওয়া জরুরী। অনেক বেশি বাইক চালানোর ফলে এই প্রেসার প্লটে গভীর ক্ষতে পরিণত হয়। এগুলো বদলে নিতে হয়।

ক্লাচ প্লেট নষ্ট হয়েছে কি না সেটা বুঝার চেষ্টা করলাম এই আলোচনার মাধ্যমে। এবার আলোচনা হবে ক্লাচ প্লেটের দীর্ঘ স্থায়ীত্বতা নিয়ে।

ক্লাচ প্লেটের দীর্ঘস্থায়ীত্ব :
ক্লাচ লিভার মানিয়ে নেওয়ার যে ব্যাপারটা এখানটায় অনেক বাইকারেরই অভিযোগ থাকে। কিন্তু উচিত ক্লাচ লিভার সেটআপ শেষ হলেই এটাকে ফিক্সড মনে করে নিজেকে এর সাথে মানিয়ে নেওয়া। বাইক চালাতে হলে ক্লাচ লিভারের সম্পর্কটা জরুরী। যেমন কখনো হাফ ক্লাচ করা যাবে না। আর ক্লাচ লিভার ছাড়তে আর ধরবে হবে খুবই সহজ ভাবে। জোরে ধরে এটা বুঝানো যাবে না এর সাথে আপনার বা আমার যুদ্ধ হচ্ছে। আর ব্যাপারটা একদম ধরলেও ফুল আর ছাড়লেও ফুল হতে হবে। মাঝামাঝি কিছু সম্ভব নয়। এভাবেই ক্লাচ প্লেটকে দীর্ঘ স্থায়ী করতে হয়। তবুও এই পুরো ব্যাপারটি বাইকারের কাছে। আমরা কেবল বুঝিয়ে দিতে পারবো কিন্তু কাজের কাজ তাদেরই করতে হয় এবং করছেন প্রতিদিন। অনেকেই দেখা যায় এত জোরে ক্লাচ ধরা আর ছাড়ার কাজটা করে থাকেন যে কয়েকদিন পরে পরেই এই প্লেট পাল্টাতে হয়। কিন্তু এভাবে করলে নিজের লস ছাড়া লাভ বিন্দুমাত্র হবে না।

এবার আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আসলে ক্লাচ প্লেটের ব্যাপারটা আসলে এগুলো এমনিতেই চলে আসে। চলে আসে এ কারণেই ক্লাচ সম্পর্কে সঠিক ধারণা বা জানা শোনা না থাকলে সব ক্ষেত্রেই আমি বা আপনি ক্লাচ প্লেটের দোষ, ভুল বা ঘাটতি খুঁজে বেড়াব। এই ব্যাপারটা খুবই খারাপ আর বাজে। তাই কিছু সাধারণ জিনিস জেনে নেওয়া উচিত। যেমন :

১. ক্লাচ প্লেটে বাইক অনুযায়ী দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। কারো বাইকের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার কিলো মিটার আবার কারো ক্ষেত্রে ৪০ বা ৫০ কিলো মিটারও হতে পারে। এজন্যই না জেনে না বুঝে অন্য বাইকের সাথে তাল মিলিয়ে বা অন্যের কথায় ক্লাচ প্লেট বদলাতে যাবেন না।

২. ক্লাচ প্লেট বদলালে তার সাথে করে ক্লাচ প্লেটের স্প্রিং গুলোও বদলাতে হয়। আমরা অনেকেই এ ব্যাপার টা জানি না। কিন্তু এটা খুব ছোটখাটো হলেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

৩. মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকে সাদা ও কালো ধোয়ার সাথে ক্লাচের কোন সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারটির সাথে আমরা বেশ পরিচিত। একটু ধোয়া নির্গমন হলেই আমরা ক্লাচ প্লেটের ভুল ত্রুুটি খুঁজতে বের হয়ে যাই। সেটা আসলেই না জানার কারণ কিংবা মনের ভুল। ক্লাচ প্লেট কখনোই এর জন্য দায়ী না। আর একইসাথে ক্লাচ এসেম্বলিরও এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই। কাজেই এভাবে বিভ্রান্তিতে ছড়িয়ে পড়ার কিছু না।

বাইক চালান নিরাপদে। জানুন বাইক সম্পর্কে। তবেই আর শোনা কথায় বিভ্রান্ত হবেন না। বাইক সম্পর্কে সঠিক তথ্য গুলো নিজে জানুন অন্যকে জানতে সাহায্য করুন। আমরা আপনাদের সঠিক জিনিসগুলো জানতে, জানাতে পাশে থাকবো।