কেন বাইকের ইঞ্জিন অয়েল কমে যায়

জুলাই 19, 2019

কেন বাইকের ইঞ্জিন অয়েল কমে যায়

মোটর সাইকেল যারা চালান তারা সবাই ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কে জানেন কম বেশি। বাংলাদেশে ইঞ্জিন অয়েল মোবিল নামে পরিচিত। যদিওবা এই মোবিল ইঞ্জিন অয়েলের একটি ব্র্যান্ডের নাম। আমাদের দেশে এই ব্র্যান্ডটা এতটাই জনপ্রিয় যে ইঞ্জিন অয়েলের নাম পাল্টে নিজেদের নামের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি হয়ে গেছে। ইঞ্জিন অয়েল মোটরসাইকেলের দীর্ঘস্থায়িত্ব ও সঠিক পারফরমেন্স নিশ্চিত করার সবচেয়ে বেসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আজ আমাদের আলোচনার বিষয় হলো কেন মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকের ইঞ্জিন অয়েল কমে যায়।

ইঞ্জিন অয়েল গ্রেড :
ইঞ্জিন অয়েলের গ্রেড বাংলাদেশের অন্যতম বিতর্কিত বিষয়। এ নিয়ে যেন বিতর্কের শেষ নেই। কোন গ্রেড ব্যবহার করবো, কেন করবো। অন্যটি কেন করবো না। এমন তর্ক আর বিতর্ক যেন চলেই আসছে। কিন্তু এর শেষ কোথায়? এর সহজ উত্তর হচ্ছে বাইক অনুযায়ী ইঞ্জিন গ্রেড ব্যবহার করা, আপনার বাইকের ইঞ্জিন স্ট্রাকচার। আপনার মোটর সাইকেলটি তৈরি করার আগে ম্যানুফ্যাকচারাররা কোটি কোটি ডলার খরচ করে রিসার্চ করেছে এবং আপনার ইঞ্জিনের জন্য সবচেয়ে ভালো কি হবে সেগুলো নির্ধারন করেছে। তাই বাইকের ইউজার ম্যানুয়ালে যে গ্রেড লেখা থাকবে, সব সময় সেই গ্রেড ব্যবহার করবেন। অনেক বাইকের ম্যানুয়াল থাকে দুইটি। একটি ইউজার ম্যানুয়াল, একটি সার্ভিস ম্যানুয়াল। সার্ভিস ম্যানুয়াল সাধারণত দেশে তৈরি করা হয় আর এখানে গ্রেড বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সব সময় ইউজার ম্যানুয়াল অনুযায়ী ইঞ্জিন অয়েল দিবেন। কিন্তু অনেকেই এটা মানতে ও চান না উল্টো বিতর্কের সৃষ্টি করেন। সহজ ভাষায় হলো আপনার বাইকের জন্য যে গ্রেড লেখা আছে এটাই ব্যবহার করতে হবে। অন্যজন কি ব্যবহার করলো সেটা আপনার জানার কোন প্রয়োজন নেই।

10W30 আসলে কী? : ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করে। এই 10W30 একটি মাল্টিগ্রেড ইঞ্জিন অয়েল, যেখানে Wহচ্ছে Winter। Wএর আগে যেই সংখ্যাটি থাকে সেটি নির্ধারন করে ঠান্ডা আবহাওয়ায় আপনার ইঞ্জিন কেমন পারফর্ম করবে। W এর সাথের সংখ্যাটা যত ছোট ঠান্ডায় পারফরমেন্স ততোই ভালো। কিন্তু সবকিছু বিবেচনা করলে W এর আগের সংখ্যাটার মাহাত্ম্য যে খুব একটা বেশি তা কিন্তু না। আসল সংখ্যাটাই হচ্ছে W এর পরের সংখ্যাটা। এই সংখ্যা দিয়ে বোঝায়

১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অয়েলের ভিস্কোসিটি (প্রবাহ/সান্দ্রতা) কেমন হবে। সংখ্যাটি যত বড় হবে, ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অয়েলের সান্দ্রতা তত বেশি হবে। সান্দ্রতা হচ্ছে অয়েলের ফ্লো হওয়ার ক্ষমতা। Wএর আগের সংখ্যাটি পরিবর্তন হলে কোন সমস্যা না হলেও পরের সংখ্যাটি পরিবর্তন করলে বাইকের পারফরমেন্স এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ ইঞ্জিনের ভিতরের ছোট ছোট মিলিমিটার সাইজে গ্যাপ থাকে, সেখান দিয়ে অয়েল সার্কুলেট হয় এবং ইঞ্জিনে প্রোপার লুব্রিকেশন হয় এবং ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকে। Wএর পরের সংখ্যাটি পরিবর্তন হয়ে গেলে ইঞ্জিন গ্যাপ দিয়ে অয়েল ঠিক মত ফ্লো করতে পারবে না, এতে সাউন্ড স্মুথ মনে হলেও ভবিষ্যতে ইঞ্জিনের বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ড্রেইন ইন্টারভাল : মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনের সাথে ড্রেইন ইন্টারভাল শব্দটি আড়াআড়িভাবে জড়িয়ে আছে। ড্রেইন ইন্টারভাল বলতে বোঝায় কত কিলোমিটার পর পর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করবেন। উন্নত দেশগুলোতে ড্রেইন ইন্টারভাল অনেক বেশি হয় এবং তারা নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল টপ আপ করে। কিন্তু আমাদের দেশে টপ আপের কোন সিস্টেম নেই। আর এজন্যই সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় এখানে। আর এক একটা সমস্যা জন্ম দেয় নতুন বিতর্কের। মোটর সাইকেল চলতে চলতে ইঞ্জিন অয়েলের পরিমাণ কমে যাওয়া খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। কারণ পিস্টন রিং এর পাশ দিয়ে সামান্য অয়েলে ইঞ্জিনের ভেতর বার্ন হয়। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে টপ আপের নিয়মটি নেই বললেই চলে। বাইকের ম্যানুয়ালে সাধারণ ড্রেইন ইন্টারভাল লেখা থাকে ৬০০০-১০,০০০ কিলোমিটার, যা টপ আপের কথা চিন্তা করে লেখা। কিন্তু আমরা যদি সেই অনুযায়ী ড্রেইন দেই, তাহলে ইঞ্জিনের বারোটা বাজতে সময় লাগবে না। তীব্র যানজট, ভাঙ্গাচোরা রাস্তা ইত্যাদি মিলিয়ে আমাদের ইঞ্জিন অয়েলের ভিস্কোসিটি খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তাই সময় মত ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা খুবই জরুরি।

ক্লাসিফিকেশন :
বাজারে ইঞ্জিন অয়েল পাওয়া যায় মোট তিন ধরনের। সেগুলো হলো – মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল, সিনথেটিক মিনারেল অয়েল এবং সেমি সিনথেটিক মিনারেল অয়েল। মোটর বাইক বুঝে এবং সুবিধা অসুবিধা বিচার করে এসব ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা হয়।

ইঞ্জিন অয়েল কমে যাওয়ার কারণ :
বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থাৎ উন্নত দেশগুলোতে ড্রেইন ইন্টারভাল অনেক বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া তারা নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল টপ আপ করতে পারে। আমাদের দেশে এই সার্ভিস একেবারে নেই বললেই চলে। মোটর সাইকেল অনেক বেশি সময় ধরে চলতে চলতে ইঞ্জিন অয়েল কমে যাওয়াটা একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। এর প্রধান কারণ হলো পিস্টন রিং এর পাশ দিয়ে সামান্য অয়েলে ইঞ্জিনের ভেতর বার্ন হয়ে থাকে। আবার ইঞ্জিন অয়েল কমে গেলে মোটর বাইকের সাউন্ডে তার প্রভাব পড়ে। আমাদের দেশের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মোটর সাইকেল ব্যবহারকারীরা মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেন। এছাড়া অনেকেই সিনথেটিক ও সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করেন যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মিনারেল থেকে উদ্ভূত গ্রুপ – ৩ বেজ অয়েল বা গ্রুপ – ৩ মিক্স করা মিনারেল অয়েল। মিনারেল অয়েলের একটি নেগেটিভ সাইড রয়েছে। আর তা হলো ইঞ্জিন চলার সময় এই হাই টেম্পারেচারে যখন মিনারেল অয়েল অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসে তখন অক্সিজেনের সাথে খুব ধীর প্রসেসে রিয়েক্ট করে একটি নতুন অণু তৈরি করে। মূলত এ জন্যই ইঞ্জিন অয়েল কমে যাবার প্রবণতাটা বেশি। এবার প্রশ্ন আসতে পারে বাকি দুই ইঞ্জিন অয়েল অর্থাৎ সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল আর সেমি সিনথেটিক ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে ইঞ্জিন অয়েল কমে যাবে কি না। হ্যাঁ, যাবে। তবে এর পরিমাণ অনেকটাই কম। অর্থাৎ মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে যতটুকু কমে যাওয়ার কথা এর থেকে কম অংশ কমবে অন্য দুটি ইঞ্জিন অয়েলে।

এই ইঞ্জিন অয়েল কমে যাওয়ার যে প্রবণতা এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে উপরের আলোচনায় উঠে আসা প্রতিটা কারণ ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। তা হলে বিতর্কে না জড়িয়ে ইঞ্জিন অয়েল কমে যাওয়ার সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব।