কোন ঋতুতে মোটরবাইক সবচেয়ে বেশি তেল খায়?

মার্চ 09, 2022

কোন ঋতুতে মোটরবাইক সবচেয়ে বেশি তেল খায়?

মোটরবাইকের মাইলেজের উপর আবহাওয়ার প্রভাব।

মোটরসাইকেল উৎপাদন এর ক্ষেত্রে কোম্পানি গুলো মোটরসাইকেলের Fuel Economy উপর আবহাওয়ার কেমন প্রভাব পরতে পারে তা নিয়ে চিন্তিত থাকে।

তারা তাদের ইঞ্জিন ডিজাইনটি এমন ভাবে করে থাকে জাতে করে সেটা বিভিন্ন আবহাওয়ায় যেকোনো অবস্থা মোকাবেলা করতে পারে এবং সর্বোচ্চ জ্বালানী সাশ্রয় করতে পারে।

যেহেতু আমাদের বেশিরভাগ মোটরসাইকেল ব্যাবহারকারি কমিউটার মোটরসাইকেল ব্যাবহার করে, তাই আমাদের এই ফুয়েল ইকোনমির উপর আবহাওয়ার প্রভাব নিয়ে চিন্তা করা উচিত। তাই আমরা এখন এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে যাচ্ছি।

সাধারন রোদ্রোজ্জল দিনের ফুয়েল ইকোনমি:

একটি সাধারন রোদ্রোজ্জল দিন মোটরসাইকেল ইঞ্জিনের সর্বোত্তম ফুয়েল ইকোনমি নিশ্চিত করার জন্য এটি সবচেয়ে আদর্শ আবহাওয়া । এই আবহাওয়াতে ইঞ্জিন স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং টেমপারেচারে থাকে এবং ইঞ্জিন খুব স্মুথ ভাবে চলে। বাতাস এবং ফুয়েলের মিশ্রন খুব ভালো ভাবে সম্পন্ন হয় এবং সর্ব্বোচ্চ এ্যাফিসিয়েন্সি নিশ্চিত করে। এই পরিস্থিতিতে বাতাসে আদ্রতা থাকে না, তাই ইঞ্জিন তার সর্ব্বোচ্চ পাওয়ার ডেলিভারি করতে পারে এবং সর্ব্বোচ্চ ফুয়েল ইকোনমি নিশ্চিত করে।

বর্ষার মৌসুমে আবহাওয়ার প্রভাব:

বর্ষার দিনে গ্রীষ্মের তুলনায় বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে যায়। উচ্চ আদ্রতার কারনে বাতাস ভারী থাকে, এতে করে ইঞ্জিন ঠিক ভাবে Fuel Combustion করতে পারে না । এই ধরনের আবহাওয়াতে বাতাস এবং ফুয়েলের মিশ্রনের রেশিও ঠিক থাকে না যার ফলে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন ফুয়েল ভালোভাবে পোড়াতে পারে না। এতে করে Combustion এ সমস্যা হয় এবং ইঞ্জিন পাওয়ার আউটপুট দিতে গিয়ে বেশি ফুয়েল খরচ করে। এজন্য আমরা দেখি বর্ষার সময় ইঞ্জিন বেশি পাওয়ার দিতে পারে না এবং ফুয়েলও বেশি খরচ হয়।

শীতকালীন, ঠান্ডা বা কুয়াশার প্রভাব:

শীতকালে বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় মোটরসাইকেল ইঞ্জিনটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং তাপমাত্রায় পৌঁছাতে অনেক সময় নেয়, মানে ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকার কারনে স্টার্ট হতে একটু সমস্যা হয় । প্রাথমিকভাবে, ইগনিশন বাধাগ্রস্ত হয় এবং অপারেটিং তাপমাত্রায় পৌঁছাতে অনেক বেশি সময় লাগে। ফলস্বরূপ, স্ট্যান্ডার্ড তাপমাত্রা থেকে এটি তখন বেশি ফুয়েল পোড়ায়। তাই ব্যবহারকারী যখন ইঞ্জিনটি বন্ধ করে আবার স্টার্ট করে তখন ইঞ্জিন আরও বেশি ফুয়েল বার্ন করে।

তাছাড়া, শীতকালে ঠান্ডা বাতাস ইঞ্জিনের Combustion প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে স্ট্যান্ডার্ড আবহাওয়ার তুলনায়। তার উপর কুয়াশার কারনে বাতাসে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় Combustion প্রক্রিয়া আরও বেশি সমস্যার বাধাগ্রস্ত হয়। ফলস্বরূপ, পাওয়ার সরবরাহের পরিমাণ কমে যায় এবং ফুয়েলের খরচ বৃদ্ধি পায়।

হাই-অ্যালটিটুড, লো এয়ার প্রেসার:

হাই-অ্যালটিটুড বা অনেক উচ্চতায় ফুয়েল ইকনোমিতে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। পাহাড় বা পাহাড়ের মতো উচু এলাকায়, বায়ুর পরিমান কম থাকে এবং ঠান্ডা থাকে তাই বাতাস এবং ফুয়েলের মিশ্রণ সঠিক ভাবে হয় না।

তাছাড়া কম অক্সিজেনের কারণে ইগনিশন বাধাগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় ইঞ্জিন বাতাসের জন্য স্ট্র্যাগল করতে থাকে, এর ফলে অক্সিজেন এবং ফুয়েল এর একটা অংশ অ অব্যাবহৃত থেকে যায়, যার কারনে স্ট্যান্ডার্ড পাওয়ার ডেলিভারিতে সমস্যা হয় এবং এর প্রভাব সরাসরি ফুয়েল ইকোনমিতে পড়ে।

ভোরে বা রাতে মোটরসাইকেল ফুয়েল ইকনমির প্রভাব:

শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও সত্যি যে ভোরবেলা বা রাতের সময় মোটরসাইকেল ফুয়েল ইকোনমি কমে যায়।

এই অবস্থায় মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের পাওয়ারও কমে যায়।

এর পেছনের কারন হচ্ছে মূলত ঠাণ্ডা আবহাওয়া এবং বাতাসের আদ্রতা। সেই কারনে ভোর বেলা বা রাতে বাইক স্টার্ট করলে ইঞ্জিন তার পারফমিং লেভেলে পৌঁছাতে বেশ সময় নেয়।

তবে আধুনিক টেকনোলজির মোটরসাইকেলে ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট (ইসিইউ), ইলেকট্রনিক ফুয়েল ইনজেকশন (ইএফআই) সিস্টেম, অক্সিজেন সেন্সর (O2) মতো হাই-টেক গ্যাজেট গুলো খুব দক্ষতার সাথে উপরের সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করে এবং সমস্যাগুলো উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে দিতে পারে।

অবশেষে, আবহাওয়া পরিস্থিতি যাই হোক না কেন একটি মোটর সাইকেল কয়েক কিলোমিটারের চলার পর এর ইঞ্জিনের তাপমাত্রা একটি স্ট্যান্ডার্ড অবস্থানে পৌঁছায়। সেই সময় ইঞ্জিন কম ফুয়েল খরচ করে।

একটা স্টার্টিং এর সময়ের শুরুতে এটি সর্বোচ্চ পরিমাণে ফুয়েল খরচ করে এবং এটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং তাপমাত্রায় পৌঁছানোর সময় হ্রাস পায়, তাছাড়া উচু যায়গায় ইঞ্জিনের অপারেশন একটি আলাদা বিষয় যা সবসময়ই ফুয়েল ইকোনমি এবং ইঞ্জিনের অপারেশনে প্রভাব ফেলে ।

ইকবাল আব্দুল্লাহ রাজ

এডমিন #CURIOUS BIKER