গ্রীন ভেহিক্যালস বা ইলেক্ট্রিক যানবাহন ও এর ভবিষ্যৎ

জানুয়ারি 26, 2022

গ্রীন ভেহিক্যালস বা ইলেক্ট্রিক যানবাহন ও এর ভবিষ্যৎ

ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ পেট্রোল, কয়লা, ক্রুড অয়েল, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদির যোগান কিন্ত সীমিত এবং এই ধরনের জ্বালানীগুলো নবায়ন অযোগ্য বা Non- Renewable.

পৃথিবীতে যত ইঞ্জিনচালিত যানবাহন,মেশিন এবং কলকারখানা আছে তার ৮০% ফসিল ফুয়েলের উপর নির্ভরশীল।

প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ বিলিয়ন মেট্রিক টন ফসিল ফুয়েল ব্যাবহৃত হয় এবং এই চাহিদা বেড়েই চলেছে।

আমরা যানি চাহিদার চেয়ে যোগান কম হলে মুল্য বৃদ্ধি পায় এবং ফসিল ফুয়েল ও এর ব্যাতিক্রম নয়, আর তেল/গ্যাসের দাম আমাদের চোখের সামনেই

হু-হু করে বাড়ছে।

বিশ্বব্যাপী তেলের সংকট খুব শীঘ্রই আরো প্রকট আকার ধারন করবে।

যোগানের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি ফসিল ফুয়েল ব্যাবহারের কিছু ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। যেমন তেল পুড়িয়ে ইঞ্জিন চালিয়ে শক্তি উৎপাদনের পর যে কার্বন (CO2) নির্গত হয় তা পরিবেশের ভারসাম্য নস্ট করছে এবং এটা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরপ।

তাছাড়া তেল/গ্যাস পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করার সাথে সাথে পরিবেশে যে পরিমাণ অস্বাভাবিক তাপ ছড়িয়ে পড়ে তা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর অন্যতম প্রধান কারন।

আমরা যে অস্বাভাবিক ঋতু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এটার পিছনেও কিন্ত রয়েছে এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রত্যক্ষ প্রভাব।

যোগান কমতে থাকার কারনে তেলের দাম যখনই বাড়তে থাকলো তখন থেকেই সারা পৃথিবীর ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি গুলো ফুয়েল এফিসিয়েন্সির দিকে মনোযোগ দিলো, যার ফলে আধুনিক ইঞ্জিনগুলোতে ফুয়েল ইঞ্জেকশন বা FI টেকনোলজির সর্বোচ্চ ব্যাবহার দেখা যায়।

কিন্ত তারপরেও যেভাবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে যানবাহন এবং ইঞ্জিনের চাহিদা বাড়ছে একই ভাবে পাল্লা দিয়ে তেল/গ্যাসের যোগান কমছে।

এইসব কারনেই সারা পৃথিবী এখন নবায়নযোগ্য শক্তি বা Renewable Energy র দিকে মনোযোগ দিয়েছে, কেননা তেলের যোগান শেষ হয়ে গেলে সারা পৃথিবীর সমস্ত ইঞ্জিন চালিত যানবাহন এবং কল কারখানা অচল হয়ে পড়বে৷

বিগত দশকে আমরা দেখলাম বড় বড় ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো হাইব্রিড ইঞ্জিন এবং EV অর্থাৎ ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যালস নির্মানে সর্বোচ্চ ফোকাস দিয়েছে।

টেকনোলজি এতটাই উন্নত হয়েছে যে এখন ইলেক্ট্রিক বাইক এবং গাড়ির পাশাপাশি এখন ট্রেন এবং ক্যারিয়ার ট্রাক অর্থাৎ

লং-ভেহিকলগুলোকেও ইলেক্ট্রিক মোটরে চালানো যাচ্ছে এবং এগুলোর এফিসিয়েন্সি অনেক বেশি।

সবচেয়ে বড় যে এডভান্টেজ আমরা পাচ্ছি তা হলো ইলেক্ট্রিক যানবাহনগুলো পরিবেশের কোনো ক্ষতি করছে না যার কারনে এই যানবাহনগুলো গ্রীন ভেহিক্যালস হিসেবে সমাদৃত।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যালস জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, ইলেক্ট্রিক গাড়ি এবং থ্রি হুইলার ইজিবাইকের পাশাপাশি ইলেক্ট্রিক মোটরবাইকের দিকেও অনেকে ঝুকছে।

এসব ইলেক্ট্রিক মোটরবাইকের মেইন্টেনেন্স এবং সার্ভিস খরচ অনেক কম তো বটেই তার সাথে পাওয়ার আউটপুট ইঞ্জিন চালিত মোটরসাইকেলের চেয়ে কোনো অংশে কম না।

ইতিমধ্যে বেশ কিছু ইলেক্ট্রিক মোটরবাইক দেশের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো সাশ্রয়ী মুল্যের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির ব্রাশলেস মোটর,উন্নত ব্রেকিং সিস্টেম, নান্দনিক ডিজাইন, লং ব্যাটারি ব্যাক-আপ এর মত দারুন কিছু ফিচার অফার করছে।

যেহেতু বিদ্যুৎ শক্তির মাধ্যমে ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যাল চার্জ হয় এবং চলে তাই দেশে ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যালস জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে পেট্রোল পাম্পের মত বিভিন্ন স্থানে প্রচুর চার্জিং স্টেশন বসানো এখন সময়ের দাবী।

তবে ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যালের সুফল তখনই পাওয়া সম্ভব যখন দেশে ভালো ব্রান্ডের মানসম্মত যানবাহন সহজলভ্য হবে। তাছাড়া রাস্তায় ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যাল চলাচলের ক্ষেত্রে সরকারি কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এটিও সম্ভাবনাময় এই সেক্টরটিকে অনেকটা পিছিয়ে রাখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।

জানা গেছে ইত্যিমধ্যেই সড়ক ও পরিবহন বিভাগ ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যালস তথা ২/৩/৪ চাকা বিশিষ্ট ইলেক্ট্রিক যানবাহনকে রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনাএবং চালকের জন্য লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

আশা করছি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় খুব দ্রুতই রাস্তায় ইলেক্ট্রিক চালনা নিয়ে একটি চমৎকার নীতিমালা আসবে যার সুফল ভোগ করবে ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যালস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, আমদানীকারক এবং ভোক্তা।

লেখাঃ ইকবাল আব্দুল্লাহ রাজ

এডমিন#কিউরিয়াস বাইকার