চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিনে আগুন লেগে যাবার কারণ ও প্রতিকার

জুলাই 17, 2019

চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিনে আগুন লেগে যাবার কারণ ও প্রতিকার

গ্রীষ্মকাল কিংবা বর্ষাকাল। এই গরম তো এই ঠান্ডা। প্রায়ই শোনা যায় চলন্ত অবস্থায় মোটর সাইকেলে আগুন লাগার কথা। কিন্তু কিভাবে এই আগুন লাগলো? কিংবা এর কারণই বা কি? চলুন আজকের আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে চেষ্টা করি চলন্ত অবস্থায় মোটর সাইকেলে আগুন লাগার কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে।

মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকে শর্ট সার্কিট হয়ে থাকে ওয়ারিং বেশি পুরনো হয়ে গেলে। আর মোটর সাইকেলে যে ব্যাটারি গুলো ব্যবহার করা হয় সব গুলোই লিমিটেড ভোল্টের। কিন্তু শুধুমাত্র শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে আগুন লাগার কথা না। আগুন লাগার সাথে ইঞ্জিন ওভারহিট হওয়ার কারণ ও জড়িত রয়েছে।

মোটর সাইকেলে যে ফুয়েল ব্যবহার করা হয় তার সংযোগ লাইনে ক্রুটি থাকলেই আগুন লাগতে পারে। আরো সহজ করে বললে, যদি স্পার্কিং হয় তখনই এই ফুয়েল এবং ইঞ্জিনের ওভারহিট আগুন জ্বালাতে সক্ষম। ফুয়েল পাইপে কোন লিক থাকলেও এমনটি ঘটতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্ন মানের মোটর সাইকেলে এমন আগুন লেগে থাকে।

আমরা প্রায়ই কিছু লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখি যেখানে বলা হয় অনেক সল্প মূল্যে মোটর সাইকেল পাওয়া সম্ভব। আর এর কারণ হলো সল্প মূল্যে একটি বাইক তৈরি করতে বাইক কোম্পানি গুলো অনেক নিম্ন মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে। একই সাথে মোটর সাইকেলের ওয়ারিং হয় আরো নিম্নমানের। তাই মোটর সাইকেল কেনার আগে কিছু ফিচার সম্পর্কে ধারণা নিতে হয়। এবং যাচাই বাছাই করে তবেই কেনা উচিত।

মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনে চলন্ত অবস্থায় আগুন লাগার কারণ হিসেবে অনেকেই অনেক রকমের মতামত উপস্থাপন করেন। কিন্তু এতে রয়েছে অনেকেরই দ্বিমত। আর এই দ্বিমত থেকেই সৃষ্টি হয় বিতর্কের। কাজেই আমরা এই বিতর্কের অবসান করতে এখন জানবো ঠিক কি কি কারণে মোটর সাইকেলে আগুন লাগতে পারে।

মোটর সাইকেলে আগুন লাগার সঠিক কারণ :

১. মোটর সাইকেলের ওয়ারিং থেকে আগুনের সৃষ্টি হয় অনেক ক্ষেত্রেই। বাজারে বেশ কিছু কম মূল্যের মোটর বাইক বা মোটর সাইকেল এসেছে। আর এই আগুন লাগার প্রবণতা এসব বাইকে বেশি। কারণ এসব বাইকের ওয়ারিং ফিউজ থাকে না। আর থাকলেও সেটা নিম্নমানের। ওয়ারিং ফিউজ থাকে না বলেই আগুন লাগার প্রবণতা সৃষ্টি হয়।

২. নতুন মোটর সাইকেলের ক্ষেত্রে কেবল গুলো থাকে মোটামুটি মানের। নিম্ন মানের কেবলের ফলে কেবল লাইন লিক হয়ে যাওয়ার

সম্ভবনা থাকে। আর এই কেবল লাইন লিক হয়ে গেলে ব্যাটারির চার্জিং লেভেল পুড়ে যেতে পারে অনেক সময়। আর এখান থেকেই আগুন লাগতে পারে।

৩. বাজারে আসা নিম্ন মানের মোটর বাইক গুলোতে ইঞ্জিন ওয়ারহিট হয় প্রতিনিয়ত। এমন সমস্যা প্রতিনিয়ত চলতে থাকে। যার ফলে ইঞ্জিনে আগুন লাগার সম্ভবনা তৈরি হয়।

৪. অনেক সময় একই জায়গায় রোদে মোটর বাইক পার্ক করে রাখলে ইঞ্জিন গরম হয়ে যায়। আর রোদের তাপে গরম হয়ে যাওয়া ইঞ্জিন খুবই বিপদ জনক। আর এখান থেকেই আগুনের সৃষ্টি হতে পারে।

৫. ফুয়েল লাইন লিকেজ বা লিক হয়ে যায় অনেক সময়। যার ফলে এই লাইনে আগুন লাগার মত যেকোনো এক উপকরণ পৌঁছালেই আগুন লেগে যেতে পারে।

মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনে আগুন লাগা থেকে বিরত রাখতে বা তার প্রতিকার হিসেবে যে কাজ গুলো করা উচিত তা আলোচনা করা হচ্ছে :

১. প্রতিটি মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকে ওয়ারিংয়ে ফিউজ থাকা আবশ্যক। এতে করে শর্ট সার্কিট হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। ফিউজ শর্ট সার্কিট রোধ করে।

২. একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বার বার ব্যাটারি চার্জিং লেভেল পরীক্ষা করা উচিত। মোটর সাইকেলে অতিরিক্ত ফিচার যেগুলো আছে এগুলো ব্যবহার করলে অবশ্যই নিম্ন মানের কেবল পাল্টে ভালো কেবল লাগাতে হবে। অতিরিক্ত ফিচার যেমন, হর্ণ, লাইট এগুলো।

৩. নতুন মোটর বাইক কেনার আগে ভালো মেকানিকের সাহায্য নিয়ে ওয়ারিং চেক করতে হয়।

৪. ইঞ্জিন ওভারহিট হচ্ছে কি না খেয়াল রাখতে হবে। এমন কোন সমস্যা যদি থাকে তাহলে যে কোম্পানির মোটর সাইকেল ব্যবহার করছেন তাদের সাথে জরুরী ভাবে যোগাযোগ করেন।

৫. অনেক সময় দেখা যায় ফুয়েলে লিক থাকে। আর ফুয়েল গড়িয়ে পড়ছে। তাই ফুয়েলে লিক আছে কি না এবং ফুয়েল গড়িয়ে পড়ছে কি না সে দিকে ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে।

৬. মোটর সাইকেলের জন্য নিম্ন মানের ফুয়েল ব্যবহার করা হুমকি স্বরূপ। তাই ভালো মানের ফুয়েল ব্যবহার করতে হবে।

৭. মোটর সাইকেল পার্ক করার ব্যাপারটায়ও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, গ্রীষ্মকালে প্রচুর গরম থাকে। তাছাড়া রোদের তেজও থাকে অনেক বেশি। অনেকেই ইচ্ছে মত স্থানে তীব্র রোদে মোটর সাইকেল পার্ক করে রাখেন ঘন্টার পর ঘন্টা। এতে করে মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন সহ যাবতীয় যন্ত্রাংশ রোদের তেজে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। এজন্যই ঠান্ডা জায়গায় যেখানে রোদের আলো কম লাগছে এমন জায়গায় মোটর সাইকেল পার্ক করতে হবে।

৮. একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনকে রেস্ট দিতে হবে। তা না হলে ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিবে।

মোটর সাইকেল নতুন হোক বা পুরনো যত্নের ব্যাপারে কখনোই অবহেলা করা উচিত না। উচিত না এ কারণেই আপনি হয়তো ভাববেন যত্নের অভাবে খানিকটা খারাপ সার্ভিসই দিবে শুধু। আসলে যত্নের অভাবে ছোট খাটো সমস্যা প্রাণঘাতী হয়েও উঠতে পারে। যেমন, হুট করেই ইঞ্জিনে আগুন লেগে যাওয়া। মোটর সাইকেল কিনলে কেউ কেউ বলেন মেকানিকের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় আর দিন কয়েকের ব্যবধানে তাদের সাথে দেখা হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপায় হয়ে দাঁড়ায়। আসলেই ঠিক তাই। সব সময় মোটর সাইকেলের মেকানিকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে ইঞ্জিন জনিত কারণে তাদের পরামর্শ ছাড়া কিছুই করা উচিত নয়। না হলে আপনার জন্যই অমঙ্গলের বার্তা বয়ে আসবে।

আমরা অনেক সময় ছোটখাটো সমস্যাকে গুরুত্ব দেই না। পরে দেখা যায় এই ছোট সমস্যা গুলোই বড় আকার ধারণ করে। এ জন্য সমস্যা ছোট হোক বা বড় তার সঠিক সমাধান করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। উপরের আমরা যেসব আলোচনা করলাম এগুলো মেনে চললে মোটর সাইকেলের ইঞ্জিনে চলন্ত অবস্থায় আগুন লাগা রোধ করা সম্ভব।