টায়ার প্রেসার নিয়ে চিন্তিত?

আগস্ট 02, 2019

টায়ার প্রেসার নিয়ে চিন্তিত?

মোটর সাইকেল বা বাইকের টায়ার প্রেশার ঠিক কত হওয়া উচিত এ নিয়ে আমরা অনেকেই চিন্তিত। বাইকের টায়ার বাইকের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। সকল রাইডারই চান আরামদায়ক রাইডিং এবং ভালো কন্ট্রোলিং। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা। আর সেটা অবশ্যই টায়ারের। নির্ধারিত টায়ার প্রেশার না মানলে এমন আরামদায়ক রাইডিং স্বপ্নে পাওয়া সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না। কাজেই আমাদের আজকের আলোচনা মোটর সাইকেল বা বাইকের টায়ার প্রেশার নিয়ে। এই আলোচনা থেকে আমরা জানার চেষ্টা করবো মোটর সাইকেল বা বাইকের টায়ার প্রেশার কত হওয়া উচিত। আর কিভাবে সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব এসব নিয়ে।

সাধারণত বাইকের টায়ার তৈরি করা হয় রাবার দিয়ে। অর্থাৎ এই রাবারের ভিতরের অংশে পরিপূর্ণ বাতাস থাকে। প্রত্যেকটি মোটর সাইকেল বা বাইক এর টায়ারের প্রেশার নির্ভর করে সাইজ আর ধারণ ক্ষমতার উপর। বাইকে আমরা সবাই ভালো গ্রিপ পেতে চাই। কিন্তু আমরা জানি না এর জন্য কি করতে হয় বা হবে। ভালো গ্রিপ পেতে হলে মোটর সাইকেল বা বাইকের টায়ারকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পৌঁছাতে হয়। সঠিক তাপমাত্রার জন্য প্রয়োজন অবশ্যই নির্ধারিত টায়ার প্রেশার প্রদান করা। টায়ার প্রেশার নিয়ে আমরা সকলেই ভুল করে থাকি। আর অবাক করা ব্যাপার হলো ভুলও প্রায় সেইম সবার ক্ষেত্রে। আমরা দুটি ভুল করে থাকি সব সময়। হাই প্রেশার ও লো প্রেশারের ক্ষেত্রেই এই ভুল হয়। মূল কথা হলো আমরা রাইডাররা টায়ারের সঠিক প্রেশার সম্পর্কে জানি না এবং জানতেও তেমন একটা চাই না। জানলে বা জানার আগ্রহ থাকলে এমন ভুল হবার কথা না।

করণীয় মোটরসাইকেলের টায়ার প্রেশার সবসময় একুরেট রাখার চেস্টা করুন। এক্ষেত্রে সামনে এবং পিছনে কত পিএস আই প্রেশার রাখতে হবে সেটি লেখা আছে আপনার বাইকের পিছনের চাকার আশে পাশেই । একটু চেস্টা করলেই খুজে পাবেন । সাধারনত সামনে ২৯ এবং পিছনে ৩৩ রাখাই উত্তম তবে যাদের ওজন একটু বেশি বা পিলিয়ন নিয়ে চলেন তারা সামনে সর্বোচ্চ ৩৫ এবং পিছনে ৪০ পিএস আই রাখতে পারেন। তবে বৃষ্টির দিনে ভেজা রাস্তায় টায়ার প্রেশার অবশ্যই একটু কম রাখুন ভাল গ্রিপের জন্য। সঠিক টায়ার প্রেশার রাখলে ভাল গ্রিপ, ভাল ব্রেকিং এবং ভাল মাইলেজ পাবেন।

এবার জানা যাক আমরা যারা রাইডার তাদের করা ভুল দুইটি নিয়ে। অর্থাৎ লো প্রেশার আর হাই প্রেশার নিয়ে। চলুন আলোচনা শুরু করি।

লো প্রেশার অনেক রাইডার মনে করেন টায়ারের লো প্রেশার বাইককে অধিক গ্রিপ প্রদান করে। এবং স্লিপ করার হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু নির্ধারিত প্রেশারের চেয়ে কম প্রেশার প্রদান করলে তা টায়ারের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে টায়ারের আকৃতি ও সাইজের ক্ষতি হতে পারে। এটি মোটর সাইকেল বা বাইকের কর্মক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে। এটি মূলত টায়ারের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

হাই প্রেশার টায়ারে হাই প্রেশার ব্যবহারও এক ধরনের ভুল ধারণা। এটি মোটর সাইকেল বা বাইকের নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সৃষ্টি করে। একই সাথে গ্রিপেও সমস্যা দেখা দেয় এই ভুলের কারণে। এটি টায়ারের সাথে রাস্তার ফিকশনের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। যার ফলে একজন রাইডার ভাল গ্রিপ পান না এবং ব্রেকিং সিস্টেমে বড় সমস্যার সৃষ্টি করে। টায়ারে অধিক পরিমাণ প্রেশারের ফলে তা সহজেই পাংচার হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।

টায়ারের গুরুত্ব ভালো মানের টায়ারের প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যাবে না। আসলে বাইক আর রাস্তার মধ্যে যোগ সুত্রই তৈরি করে দেয় এই টায়ার। টায়ারের উপরেই নির্ভর করে বাইকের সাস্পেনশান আর ব্রেকিং সিস্টেম কেমন কাজ করবে, ইঞ্জিন যতই জ্বালানী সাশ্রয়ী হোক না কেন উপযূক্ত টায়ার না হলে এর থেকে আপনি সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাবেন না। আর আরাম? ভালো ও উপুযূক্ত টায়ার না হলে বাইক চালানোর সময় আরাম আপনার হারাম হয়ে যাবে। অনেক সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার মুলেই থাকে এই টায়ার । এই কারণে রেসিং এ আপনারা দেখবেন একটা নির্দিষ্ট সময় পরপরই টায়ার বদলে ফেলা হয়। রেসিং স্টাফকে এই ব্যাপারে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষন দেয়া হয়ে থাকে। তাই উপযুক্ত এবং ভালো মানের টায়ারের একদিকে যেমন আপনাকে ভালো সার্ভিস দিবে অন্যদিকে আপনি নিরাপদ আর আরামদায়ক ভ্রমণের নিশ্চয়তা পাবেন।

টায়ারের ধরণ ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরির মোটর সাইকেল বা বাইকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন টায়ার রয়েছে। স্পোর্টস বাইক, কমিউটার বাইক, টুরিং বাইক , ক্রুজার , অন রোড , অফ রোড ইত্যাদি। তাই টায়ার বুঝে তাদের প্রেশারের পরিমাণ ঠিক করতে হয়।

টিউব ও টিউবলেস টায়ারের ক্ষেত্রে : টিউব লেস টায়ার কে বাইকের একটা বাড়তি সেফটি ফিচার হিসাবে ধরা হয়। তুলনামূলক কম গরম হওয়া এই টায়ার দ্রুত গতিতে পাংচার হলে আপনাকে আনস্টেবল হবার হাত থেকে বাচাবে এবং কিছু দুরত্ব অতিক্রম করে মেরামতের সুযোগ দিবে। অন্য দিকে টিউব টায়ার মেরামত এবং বদলানোর খরচ কম। যদিও উভয় ধরণের টায়ার প্রেশারের দিকে নজর দেয়া উচিৎ। বিশেষ করে টিউব ট্যায়ারে যদি প্রেশার কম থাকে তবে টায়ার এবং টিউব দুটিরই আয়ু কমে যায়।

টায়ারের প্রেশার ঠিক রেখে ভালো পারফরমেন্স পেতে করণীয় ১. টিউব টায়ারে যদি লিক হয় , তাহলে সেলঢ সিলিং জেল ইউজ করবেন না । কারণ , টিউব যদি পাতলা হয় এবং লিক এর পরিমাণ যদি ২মি.মি এর বেশী হয় তাহলে এটা বেশীক্ষণ স্থায়ী নাও হতে পারে এবং একটা দূর্ঘটনা ঘটাতে পারে ।
২. শুধু বাইকের টিউব খুলে ফেলে টিউবলেস টায়ার তৈরীর চেষ্ট করবেন না । কারণ , এটা মোটেই ভাল কোন পদ্ধতি না । আপনার টিউবলেস টায়ার দরকার হলে বাজার থেকে টিউবলেস টায়ার কিনে এনে লাগিয়ে নিতে পারেন । আর টিউব খুলে আপনি টিউবলেস টায়ারের মত পারফরমেন্স পাবেন না ।
৩. চাকা , রিম এবং টায়ার টিউব নিয়ে এক্সপেরিমেন্টাল কিছু করার চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিতে হবে পুরোদমে।
৪. চাকাতে ওভার এয়ার প্রেশার এর বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।

বাইকের চাকার প্রেশার নিয়ে বিতর্ক অনেক দিনের। অনেকেই জানেন না প্রেশার ঠিক কত হওয়া উচিত। অন্য কে কত রাখলো তার উপর ভিত্তি করে চলেন আবার কেউ কেউ। কিন্তু এটা মোটেও উচিত নয়। আপনার মোটর সাইকেল বা বাইকের টায়ারের প্রেশার ঠিক কত হওয়া উচিত সেটা টায়ারের উপর ভিত্তি বা নির্ভর করে। বাইকের চাকায় সেটা লেখাও থাকে। কিন্তু খুঁজে বের না করে উল্টো বিতর্কে জড়িয়ে যান অনেকে। আগে সঠিক ভাবে জানতে হবে তারপর সেটা বাস্তবায়ন করা উচিত। না জেনে তর্ক বিতর্ক করে কোন লাভ হবে না। ভালো রাইড আর ভালো কন্ট্রোল পেতে প্রেশার ঠিক করার বিকল্প নেই। এছাড়া লং ড্রাইভের ক্ষেত্রেও সেইম। সঠিক প্রেশার রাখতে হবে। কাজেই বাইকের টায়ারের প্রেশার জেনে তবেই তা রাখা উচিত। অন্য কারো কথা মত না।