দুর্ঘটনা এড়ানোর অব্যার্থ অস্ত্র

এপ্রিল 24, 2022

দুর্ঘটনা এড়ানোর অব্যার্থ অস্ত্র

বেশিরভাগ মোটরবাইক দুর্ঘটনা খুব মারাত্বক হয়ে থাকে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এতটাও হতে পারে যা রিকভার করা কঠিন বা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তাই সবার চেস্টা করা উচিত দুর্ঘটনাকে এড়িয়ে চলা।

দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য সবচেয়ে বেশি যেটা জরুরি সেটা হচ্ছে সেইফ রাইডিং।

মনে রাখতে হবে দামী সেফ রাইডিং মানে অনেক দামী, অনেক মোটা, অনেক ভারী সেফটি গিয়ার নয়।

সেইফ রাইডিং হচ্ছে একটা এক্সট্রা স্কিল, এক্সট্রা রাইডিং সেন্স যেটা ডেভলাপ করা অনেক বেশি জরুরি। পাশাপাশি ভালো সেফটি গিয়ার ব্যাবহার করলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার স্বীকার হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমে যেতে পারে।

মোটর সাইকেল চালকদের জন্য ভীষন গুরুত্বপুর্ণ কিছু করনীয় নিচে উল্লেখ করার চেষ্টা করছি, এগুলো মেনে চললে আপনার রাইডিং হতে পারে আরো নিরাপদ।

১।গতির নেশা থেকে দূরে থাকুনঃ

বেপরোয়া মোটর সাইকেল চালানো রীতিমত বোকামি। এটা কোন বীরত্বের কাজ নয়। খুবই সহজ কাজ বরং ধীরে চালানো কঠিন কাজ।

অতিরিক্ত গতিতে সাই সাই করে চালালে সবাই গালি দেয় বিরক্ত হয়, এমনকি আপনার পাশ দিয়ে কেউ ওভারস্পীডে চালালে আপনিও বিরক্ত হবে।

কেউ কেউ তো অতিষ্ট হয়ে গালিই দিয়ে বসে। অভিশম্পাত করে অনেকে বলে, এরা মরে না কেন? তাই অতিরিক্ত গতি আজকে থেকেই বাদ দিন।

২। চোখ কান খোলা রাখুনঃ

আমাদের দেশে প্রায় সকল রাস্তাতেই ভ্যান, রিক্সা, সিএনজি, ভটভটি (নছিমন), ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা ইত্যাদি চলে এমনকি হাইওয়েতেও।

এই সকল যানবাহনের চালক কেউ’ই প্রশিক্ষিত নয়। ট্রাফিক আইন বা রাস্তায় চলাচলের নিয়ম কানুন কিচ্ছু জানে না। গিয়ার দেয়া, স্টিয়ারিং ধরা-শিক্ষা বলতে এটুকুই। ওদের ভুলের কারণে অন্য মানুষের মৃত্যু হতে পারে-শিশু সন্তান এতিম হবে-এ ভাবনা ওরা ভাবে না। নিজেরও মৃত্যু হতে পারে-এ চেতনাটুকুও ওদের মধ্যে খুব একটা কাজ করে না। ওরা নিয়ম মেনে রাস্তায় চলবে-এমনটি আশা করা যায় না। দেখা যায় হঠাৎ ডানে বা বামে ঘুরে গেছে। কোন সিগনাল বা ইশারা পর্যন্ত দেয় না। এমন কি ডানে সিগনাল দিয়ে বামে ঘোরে। সেজন্য নিজে যত বেশি সতর্ক হয়ে চলা যায়,ততই মঙ্গল। মোটর-সাইকেল একটু আস্তে বা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চালালে ব্রেক চেপে অ্যাকসিডেন্ট থেকে বাঁচা যায়।

৩। অন্যের ভুল সম্পর্কে ধারনা রাখাঃ

মোটর সাইকেলের অ্যাকসিডেন্ট মানেই বুঝতে হবে মারাত্নক দুর্ঘটনা। সামান্য ভুলের কারণে মৃত্যুবরণ। মাত্র ১ সেকেন্ড। ভুলটি হয়ত অন্য কেউও করবে কিন্তু মৃত্যু হবে আপনার। তাই কে কি ধরনের ভুল করতে পারে তার সম্ভাব্য একটা ধারনা মনে মনে ভেবে রাখুন এবং সাবধান থাকুন।

যেমন, সামনের গাড়ি যদি কোনো সিগ্নাল না দিয়ে হঠাত হার্ড ব্রেক করে বসে তখন আপনি কি করবেন, তাই ব্রেক করার মত যথেষ্ট দুরত্ব রেখে চালাতে পারেন।

৪। নিজের বাইক টা পর্যবেক্ষনে রাখাঃ

বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ব্রেকিং সিস্টেম এবং চাকাতে কোন সমস্যা আছে কিনা দেখে নেয়া ভালো এতে আপনি রাস্তায় কনফিডেন্ট থাকবেন। সাথে সাথে লাইট, হর্ন এগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা শিওর হয়ে নিন৷

৫। সময় বাচানোর অনর্থক চেস্টা বাদ দিনঃ

দ্রুত চালালে খুব তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছা যায় এটা যারা বিশ্বাস করেন তাদের মত বোকা আর নেই। স্বাভাবিক গতিতে চালিয়েও অল্প সময়ে অনেক দূর যাওয়া যায়। স্বাভাবিক গতিতে চালিয়ে গন্তব্যে পৌছাতে যে সময় লাগবে, পাগলের মতো ছুটলে হয়ত তার চেয়ে ৮-১০ মিনিট কম লাগবে। এটা দ্রুত পোঁছা হলো? এক কাপ চা খেতেও ১০ মিনিট লাগে, তাই সামান্য সময় বাচাতে জীবনের ঝুকি নেবেন না৷

৬। নিয়ন্ত্রনের বাইরে না যাওয়াঃ

নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চললে যে কোন সমস্যা আগেই বুঝা যায়। ফলে বড় রকমের কোন দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়।

৭। হাইওয়ে রাইডে করনীয়ঃ

বিশ্বরোড বা যে সকল রোডে ভারী যানবাহন বেশি চলাচল করে, সে সকল রোডে মোটর সাইকেল চালানো উচিত অতিরিক্ত সতর্কতার সাথে।

৯। নুন্যতম ভালো শার্প রেটিং আছে এমন হেলমেট ব্যাবহার করুনঃ

হেলমেট ছাড়া বাইকে উঠা হারাম এটা মুখস্থ করে নিন।

হেলমেট ব্যবহার অনেকের কাছে বিরক্তিকর তবে মনে রাখবেন, মাথাটা দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে ভারী এবং সেনসেটিভ। তাই একসিডেন্ট হলে, বিশেষ করে পড়ে গেলে মাথাটাই আগে রাস্তার আছাড় খায়।

মাথায় খুব সামান্য আঘাতেও মানুষ মারা যেতে পারে। তাই মাথার সুরক্ষায় সার্টিফাইড হেলমেটের বিকল্প নেই৷ নুন্যতম ৫ এর মধ্যে ৩-৪ পেয়েছে এরকম শার্প রেটিং যুক্ত হেলমেট ব্যাবহার করুন৷

১০। রাইডিং এর সময় মোবাইলে কথা বলবেন নাঃ

চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা মোটেও উচিত নয়, কারন এতে মনোযোগ অন্যদিকে চলে যায়।

হয়ত মনে হতে পারে রানিং অবস্থায় তো কতই মোবাইলে কথা বলেছি কিছুই তো হলোনা, হয়নি বলে হবে না-এমন চিন্তাই আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে।

১১। টেইল গেটিং করবেন নাঃ

সামনে থাকা গাড়ির একদম কাছাকাছি থেকে পিছনে পিছনে যাওয়া ঠিক নয়। সামনের গাড়ি কোন সিগনাল না দিয়েই ইউটার্ন করতেই পারে, এতেই আপনি বিপদে পড়ে যেতে পারেন মুহুর্তের মধ্যে। ব্রেক করে নিজেকে রক্ষা করা যায় এতটুকু দূরত্ব বজায় রেখে চলুন।

১২। বিপদজনক ওভারটেক করবেন নাঃ

চালানোর সময় কেউ ওভারটেক করে সামনে গেলে তাকে ওভারটেক করে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়। এ ধরনের মানসিকতা নিতান্তই ছেলেমানুষী। তবে স্বাভাবিক গতিতে যদি কাউকে ওভাটেক করতে হয় সেটা করতেই পারেন, তবে লেন মেনে দেখেশুনে তবেই ওভারটেক করবেন।

১৩। হার্ড ব্রেকিং করার আগে ভেবে নিনঃ

সর্বশক্তিতে ব্রেক চেপে ধরলেই বাইক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসবে এটা চিন্তাই করবেন না, বরং এতে নিয়ন্ত্রণ হারানোর চান্স সবচেয়ে বেশি।

প্যানিক ব্রেক করতে হলে আগে লুকিং গ্লাস দেখে তারপর ইঞ্জিন ব্রেক সহ হাত ও পায়ের ব্রেক চাপুন।

অনেক আল্ট্রা লিজেন্ড মুর্খতার বশে ফতোয়া দেন যে ইঞ্জিন ব্রেক ক্ষতিকর, ইঞ্জিনের ক্ষতি হয় ইত্যাদি ইত্যাদি অথচ ইঞ্জিন ব্রেক করার কথা ম্যানুফ্যাকচারারই ম্যানুয়াল বইতে বলে দিয়েছে।

ক্লাচ ইউজ করবেন শুধু গিয়ার শিফটের বেলায় এবং গতি খুব অল্প থাকলে।

ইঞ্জিন ব্রেকের ব্যাবহার বাইকের গতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে দারুন কার্যকর।

১৪। ব্লাইন্ড কর্নারে বেশি এটেনশন দিনঃ

অন্ধবাঁকে খুব আস্তে চালানো উচিত।

যে বাঁকে সামনে কে আসছে বা যাচ্ছে দেখা যায় না তাকে ব্লাইন্ড কর্নার বলে। এরকম জায়গাতে আগে থেকে প্রচুর হর্ন দিন ও গতি কমিয়ে পার হোন।

  • The effect of water on hot disc brakes

১৫। রাইডিং এ সর্বোচ্চ মনোযোগ দিনঃ

চলন্ত অবস্থায় কথা বলা বা মনে মনে কোন অংক কষা, টাকা-পয়সা বা অন্য কিছুর হিসেব নিকেশ করা বা কোন দুঃশ্চিন্তা বা সুখের চিন্তা করবেন না। অন্যমনস্ক হয়ে রাইড করলে এক্সিডেন্ট নিশ্চিত।

নিরাপদ হোক আপনার রাইডিং।