নতুন বাইকের যত্ন আত্তি

জুলাই 12, 2019

নতুন বাইকের যত্ন আত্তি

বাহন হিসেবে বাইকের জনপ্রিয়তা অনেক। দু চাকার এই বাহন হয়ে উঠে গেছে জনপ্রিয়তার চরম শিখরে। নতুন কলেজে ওঠা ছাত্রকে স্বপ্নের কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে এই দু চাকার বাহনের গল্প। হয়তো নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সকল বাবা – মা বাচ্চাকে এমন বাহন কিনে দেন না। তবে সত্যিই এই বাহন ব্যস্ত জীবনধারাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। ঢাকার মত ব্যস্ত শহরে বাইক রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পরে ব্যস্ততা অনেকটাই কমে গেছে। জ্যাম ঠেলে সঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারছেন কর্মীরা। কিন্তু এই বাহন তো আপনাকে তার শতভাগ দিয়ে যাচ্ছে। বিনিময়ে আপনি কি দিচ্ছেন? সঠিক যত্ন করছেন তো শুরুর দিন থেকে? না কেবল শো রুম থেকে বের করে নিয়েই ইচ্ছে মত ছুটে চলছেন?

বাইক চালাতে গিয়ে একদম শুরুর দিন থেকেই আমাদের প্রায় ছোটখাটো বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয় বা তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আর এমন সমস্যার সমাধান আমাদের সকলেরই জানা। অর্থাৎ সার্ভিসিং সেন্টারে ছুটে যাওয়া। সেখানেই পাওয়া যায় সমাধান। তবে নতুন বাইকের ক্ষেত্রে সার্ভিসিং করানোর জন্য ও একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে।

কখন সার্ভিসিং করানো উচিত :
বাইক চালাতে গিয়ে অসুবিধায় পড়লে বা ঠেকলে দ্রুত সার্ভিসিংয়ে ছুটে যাওয়াকে আমরা সমাধান মনে করি। কিন্তু নতুন বাইকের ক্ষেত্রে এই নিয়মটা ভিন্ন। যদিও বা প্রশ্ন হচ্ছে এমন নিয়ম কয়জনই বা মেনে চলে। খালি চোখে সমস্যা ধরা না পড়লে নতুন বাইকের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে তিন মাস সময় বা দেড় হাজার কিলোমিটার চালানোর পরেই সার্ভিসিংয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। এর আগে বড় সমস্যা চোখে দেখা না গেলে সার্ভিসিংয়ে নিয়ে যাওয়া একদমই উচিৎ না। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ না। অন্য ধরনের সমস্যা ও দেখা দিতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখা উচিত নতুন বাইকে তেল কেমন লাগছে। শো রুম থেকে বলে দেওয়া বা মোটর বাইকের ব্র্যান্ড অনুযায়ী এটা মানানসই কি না এখানে প্রশ্ন থাকে। এছাড়াও বাইক জ্যাম হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমাদের উচিত কেবল এমন বড় সমস্যার বেলায়ই সার্ভিসিংয়ে নিয়ে যাওয়া। এর বাইরে যদি বাইকের টিউব সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেয় তবে যাওয়া উচিত আলাদা টিউব, টায়ারের দোকানে। আর এসব দোকানে খুব সহজেই কম টাকায় টায়ার টিউবের ফুটো পূরণ করার কাজ করা হয়।

নতুন বাইকের নিয়মবিধি :

নতুন বাইকের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম থাকে। যেগুলো পালন করা বাধ্যতামূলক। তা না হলে বাইক থেকে মনের মত সার্ভিস পাওয়া তো দূরের কথা, আশাও করা যাবে না। যেমন, আরপিএম এর নিয়ম কিংবা সহযাত্রী ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট সময় বাইক রাইড দেওয়ার নিয়ম। আমরা এর আগেও এই নিয়ম গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আবারো করছি। মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক একটি মেশিনারি জিনিস। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই বাইক চালাতে হয়। রাস্তায় বের হলে যেমন কিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়, সিগনাল মানতে হয়। অনেকটাই এ রকমই। নতুন বাইকের ক্ষেত্রে এক একটা নিয়ম এক একটা সিগনাল। এগুলো মেনে চলা বাধ্যতামূলক। বাইক যদি যত্ন না করেন, নিয়ম না মেনে রাইড দেন তবে সেটা আর বাইক থাকে না। দেখা যাবে মাস ছয়েকের মধ্যে ইঞ্জিনের সমস্যায় পড়েছেন। দেখা যাবে দিন কে দিন সমস্যা আরো বড় হচ্ছে। আরো সহজ ভাবে যদি বুঝাতে হয় তাহলে আপনি যখন ভালো ইনভেস্টমেন্টে একটি নতুন দোকান চালু করেন তবে আপনার ভালোর জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। যেমন নিময় করে দোকানে যেতে হবে, বাকি দেওয়া যাবে না, সবকিছুর ঠিকঠাক হিসেব রাখতে হবে, বাজারের অবস্থা বুঝে প্রোডাক্ট নিতে হবে। বাইকের ক্ষেত্রে ও ঠিক এমনই। যদি ভালো করে মেনে না চলেন তবে আপনার পুরো ইনভেস্টমেন্টটাই জলে যাবে।

বাইক ওয়াশ :
বর্ষাকালে বাইক বেশি নোংরা হয়। আমাদের দেশে এর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। কেন না আমাদের রাস্তা ঘাটের অবস্থা দিনের পর দিন খারাপ হচ্ছে। মফস্বল বা ছোট খাটো টাউনের দিকের অবস্থা আরো খারাপ। রাস্তায় বাইক নিয়ে বের হলে কাদা বালি লাগে। আর এগুলো যদি বেশি দিন লেগে থাকে তাহলে বাইকের বডিতে এক ধরনের মরিচা পড়ে। এটা বাইকের জন্য অনেক ক্ষতিকর। ক্ষতিকর হওয়ার কারণ হলো নতুন বাইকে বেশ কিছু ধাতব পদার্থ থাকে ইঞ্জিনে যেগুলো ঠিক মত বসতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। তবেই এগুলো কাজ করতে শুরু করে পারফেক্টলি। কিন্তু যদি এই সময়টায় এমন মরিচা পড়ে বা কাদা বালি ভিতরে লেগে যায় তবে একটু একটু করে সমস্যা বড় আকাশ ধারণ করতে পারে। অনেক সময় অনেক বেশি দিন কাদা বালি নতুন বাইকের ইঞ্জিনের ভেতরে থাকলে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যেতে পারে। এ দিকটায় সর্তকতা অবলম্বন করার বিকল্প নেই। কাজেই বর্ষাকালে নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে এক দুইবার বাইক ওয়াশ করাতে হবে। তবে এ সমস্যা যে কেবল নতুন বাইকের ক্ষেত্রে তা কিন্তু না। পুরনো বাইকেও সর্তক থাকতে হবে। না হলে পুরনো বাইকেও বেশ কিছু সমস্যার দেখা দিবে। আপনি চাইলে নিজের বাসায়ই বাইকের ওয়াশের কাজটা করতে পারেন। হোসপাইপ, ওয়াটারগান, ব্রাশ, কাপড়, পলিশ এগুলো থাকলে আপনি নিজের বাসায়ই বাইক ওয়াশ করতে পারেন। কিন্তু এ কাজে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। কাজেই নতুন হলে দক্ষ কারো সাহায্য নেওয়া উচিত। কারণ সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গেলে সিট খুলে ওয়াশ করা সম্ভব। আর গুঁড়া সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে বাইক পরিষ্কার করা হয়। পরিষ্কার শেষ হলে পলিশ করে দেওয়া ও হয়। যার ফলে এসব থেকে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবনা একদমই থাকে না। এখানে আপনার খরচ হতে পারে বড় জোর ২০০ বা ৩০০ টাকা। তবে স্থান ভেদে এর কমও হতে পারে।

বাইকের ডেন্টিং ও পেইন্টিং :
দুর্ঘটনায় পড়লে বাইকের অনেক ক্ষতি হয়। অনেক সময় দেখা যায় ছোট খাটো একটি দুর্ঘটনাও অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। আর এমন ক্ষতির জন্য প্রয়োজন হয় ডেন্টিং আর পেইন্টিংয়ের। দুর্ঘটনার কবলে পড়লে বাইকের রং আর প্লাস্টিকের প্লেটের উপরে বিশ্রী দাগ লাগতে পারে বা ক্ষত জায়গার প্লাস্টিক প্লেট উঠে যেতে পারে। এজন্য নতুন করে ডেন্টিং আর পেইন্টিং করাতে হয়। ডেন্টিয়ে খরচ খুব বেশি একটা হয় না। এক থেকে দুই হাজার টাকার বেশি হয় না কখনোই। আর পেইন্টিং নির্ভর করে বাইকের রং আর প্লাস্টিকের প্লেটের উপরে। পেইন্টিংয়ে খরচ একটু বেশি। তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা মধ্যে খরচ পড়ে থাকে।

অনেকেই দেখা যায় শো রুম থেকে বাইক বের করে নিয়ে আসলে এমন নিয়ম কানুন কানেও জায়গা দিতে চান না। যেন এক কান দিয়ে প্রবেশ করে অন্য কান দিয়ে বের হয়ে যায়। বিশেষ করে একদম নতুন বাইকারদের ক্ষেত্রে এমনটা লক্ষ্য করা যায়। আসলেই কি এমনটা হওয়া উচিত? যদি উচিতই হবে তবে এতবার এই ব্যাপার গুলো নিয়ে আলোচনা করা হতো না বা প্রয়োজন হতো না। নিয়মের মধ্যে দিয়ে চললে লাভটা আপনারই হবে। কেউ কেউ আবার বলেন মেকানিকরা যেন কিছু টাকা আয় করতে পারে এজন্য এমন কঠিন নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়। আসলে এমন কথা হাস্যকর। আপনি এমন নিয়ম মেনে না চললে বরং তখনই মেকানিকদের লাভ। কারণ প্রথম দিকে যেখানে সামান্য কিছু টাকায় কাজ হয়ে যেতো সেখানে আপনাকে হাজার হাজার টাকা গুণতে হবে। তাই নতুন বাইক কিনলেই হয় না, যত্ন আত্তিও করতে হয় অনেক।