পুরাতন বাইক কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা

জুলাই 27, 2019

পুরাতন বাইক কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতা

আমরা অনেকেই পুরনো বা সেকেন্ড হ্যান্ড মোটর সাইকেল বা বাইক কিনতে চাই বা কিনি। কিন্তু পুরাতন বাইক কেনার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। আমাদের আজকের আলোচনা এই পুরনো বাইক কেনার সতর্কতা নিয়ে।

পুরনো মোটর বাইকের দাম :
এক্সটার্নাল এবং ইন্টারনাল মেকানিক্যাল কন্ডিশন এর উপর নির্ভর করে মোটর সাইকেলের ব্যবহারের সময়, কতদিন চলবে এবং এর কন্ডিশন এখন কেমন ? এই বিষয়গুলোর মাধ্যমে মোটরসাইকেলের দাম নির্ধারিত করা হয়। তার পর উভয় পক্ষের সম্মতিতে কেনা বেচা সম্পূর্ণ হয়ে থাকে।

বাইকের কন্ডিশন বা অবস্থা :

মোটর সাইকেলের কন্ডিশন এবং বাইকটির অবস্থা কেমন তা বোঝার জন্য সব থেকে ভাল আপনি বাইকটির টেস্ট রাইড করে দেখুন । তাই সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার আগে সব সময় বাইকটির টেস্ট রাইড করে দেখা উচিত। নিরাপত্তার জন্য টেস্ট রাইড করার আগে বাইকের মালিককে পিলিয়ন সিটে বসার জন্য বলবেন যাতে করে মালিক কোন বিভ্রান্তির শিকার না হয় । এছাড়াও একজন দক্ষ এসিস্টেন্স এবং অবজারভেশনও খুব জরুরী । এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে বাইকের এক্সটার্নাল বা ইন্টার্নাল কোন সমস্যা আছে কি না । এছাড়া একজন দক্ষ কেউ থাকলে বাইক কেনার সময় আপনাকে অনেক বিষয় সাহায্য করতে পারবে । এর চেয়েও ভালো হয় যদি একজন মেকানিকের সাহায্য নিতে পারেন। কারণ মেকানিক বাইকের অবস্থা বিবেচনা করে বলতে পারবে এটা কেনা যায় কি না।

রিপেয়ার কস্ট :
আপনি যখন একটি পুরনো মোটর সাইকেল বা মোটর বাইক কিনবেন তখন অবশ্যই আপনাকে কিছু কাজ করাতে হবে টাকা খরচ করে। এটাকেই বলে রিপেয়ার কস্ট। প্রতিটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল বা ইউজড মোটর সাইকেলে কিছুটা হলেও রিপেয়ার খরচ বা রেস্টোরেশন এর কাজ লাগে । অনেক সময় মোটরসাইকেল মোডিফিকেশন এর জন্য অনেক খরচ পড়ে যায় । কিন্তু আসলে ইউজড এবং পুরাতন মেশিন হওয়ার কারনে কিছুটা হলেও খরচ করা লাগে। তাই টেস্ট রাইড বা ইন্সপেকশন করার সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত । ইন্সপেকশন এর সময় দেখে নেবেন কোন পার্টস রিপেয়ার বা রেস্টোরেশন করা লাগবে । এ সময়ের মধ্যে আপনার হিসাব করা উচিত যে রিপেয়ার, রেস্টোরেশন, মেইনটেন্স কস্ট এবং কাস্টমাইজেশন কস্ট মিলে কত খরচ পড়বে । এই চিন্তার মাধ্যেম আপনার বাজেট সর্ম্পকে আপনি হিসাব রাখতে পারবেন । অতএব এই সব বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনি মোটর সাইকেলের দামাদামি করতে পারবেন ।

পুরনো মোটর সাইকেলের কাগজ পত্র :
একটি পুরনো মোটর সাইকেল বা বাইক কিনতে বেশ কিছু স্টেজ থাকে। মূল্য নির্ধারণ, কন্ডিশন বা অবস্থা, রিপেয়ার কস্ট এর পরেই আসে এই কাগজ পত্রের ব্যাপারটা। সবার আগে দেখতে হবে মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকটি রেজিস্টার করা আছে কি না। যদি রেজিস্টার করা হয়ে থাকে তবে সেটা ঠিক ভাবে করা হয়েছে কি না সেটাও দেখতে হবে। কেননা, বাজারে এখন অনেক নকল রেজিস্টার কাগজ পত্রও পাওয়া যায়। এর পরে দেখতে হবে সরকারি ফি ঠিক ভাবে পরিশোধ করা হয়েছে কি না। একই সাথে এর সাথে জমা দেওয়া কাগজ পত্র সঠিক কি না। আর যদি তার উল্টোটা হয়। অর্থাৎ মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকটি রেজিস্টার করা হয় নি তবে কত দূর পর্যন্ত রেজিস্টার কার্যক্রম চলেছে সেটা জানতে হবে। আর কেন রেজিস্টার করা হলো এ ব্যাপারটা জানতে হবে। যদি শেষে আর বাইকটি রেজিস্টার করার মত অবস্থায় না থাকে তবে সে ক্ষেত্রে প্রথম মালিকের সকল কাগজ পত্র নিতে হবে এবং আইন অনুযায়ী দক্ষ কারো সাহায্য নিয়ে রেজিস্টার করতে হবে। তবে এ দিকটায় অনেক ঝামেলায় পড়তে হবে। অনেক ক্ষেত্রে জরিমানাও গুণতে হবে। কেননা আগে বাইক চালানো হয়েছে কিন্তু রেজিস্টার করা হয় নি এটা আইন বিরোধী বা আইন ভঙ্গের নিয়মে পড়ে। রেজিষ্ট্রার বা রেজিষ্ট্রার না করা বাইক বিষয় সর্বশেষ কথা হল বাইকের সব ধরনের ডকুমেন্ট ঠিক আছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা । এছাড়াও বাইকের ইঞ্জিন এবং চেসিস নাম্বার ঠিক আছে কিনা তা লক্ষ্য রাখা । মনে রাখবেন যদি বাইকের রেজিষ্ট্রেশন না করা থাকে বা বাইকের নাম ট্রান্সফার করা সম্ভব না হয় তাহলে বাইকটি না কেনাই শ্রেয়।

রিসেল ভ্যালু :
রিসেল ভ্যালুতে যাওয়ার আগে আপনাকে শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে মোটর বাইকটির ওউনারশিপ বা মালিকানা, রেজিস্ট্রেশন, ও মোটর সাইকেল বিষয়ক অন্য সব কাগজ পত্র ঠিক আছে কি না। এবং এর পরের কাজ হলো একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে আর তা হলো এই মোটর বাইকটির দাম কত। এছাড়া যখন আপনি সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কিনবেন তখন আরো একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে সেই মডেলের বাইকের রিসেল ভ্যালু কেমন। এটি আপনাকে এই মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকটির বর্তমান মূল্য কেমন তা সম্পর্কে ধারণা দিবে।

সেকেন্ড হ্যান্ড মোটর সাইকেলের প্রাইস :
সবশেষ বিষয়টা হলো বাইকটির দাম। অবশ্যই স্পেসিফিক মডেল এবং ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলের দাম বর্তমানের মোটরসাইকেলের বাজারে যে দাম আছে তেমন হবে । এছাড়া যখন বায়ার সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার সময় যখন বাইকটির কন্ডিশন, রিপেয়ার কস্ট এবং ডকুমেন্ট স্ট্যাটাস সর্ম্পকে বুঝবে তখন দামাদামি করা সহজ হবে । আপনি যখন বাইকটি কিনবেন তখন কোন উইটনেস রাখবেন এবং সেখানে গর্ভমেন্ট ফর্মালিটিগুলো পূরন করে নেবেন ।

বাইকের দূরত্ব মিটার :
পুরাতন বাইক কিনতে গেলে সেই সময় পর্যন্ত যতটুকু চালানো হয়েছে তার হিসেব থাকে। এই হিসেব দেখলেই বুঝা সম্ভব এই মোটর বাইকটি ঠিক কতটা রাস্তা পাড়ি দিয়েছে। পুরাতন বাইক কেনার ক্ষেত্রে এই দিকটা আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।

বাইকের যন্ত্রাংশ পরীক্ষা :
বাইকের সবথেকে দামী অংশগুলো হল ফ্রেম , ফর্ক ,ফুয়েল ট্যাঙ্ক ইন্জিন কভার এবং ইন্জিন । তাই বাইকের এই অংশগুলোতে কোন সমস্যা আছে কীনা সেটা ভালভাবে যাচাই করুন । এই অংশগুলো ভালভাবে পর্যবেক্ষণ না করলে এই গুলো আপনার অনেক টাকা খরচের একটা বিষয় হয়ে দাড়াতে পারে ।

পুরাতন বাইক কিনতে গেলে অবশ্যই এই বিষয় গুলো মেনে চলা উচিত। কারণ এই নিয়মগুলোর বাইরে গেলে অবশ্যই আপনাকে ঝামেলার মধ্যে পড়তে হবে। অনেকেই আবার সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক কেনাটাকে ঝামেলা মনে করেন। কিন্তু সঠিক ভাবে এই বিষয় গুলো মেনে চললে ঝামেলার কিছুই নেই। বাইকের কন্ডিশন বা অবস্থা, কাগজ পত্র সব বিবেচনা করেই মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। এছাড়া যদি সম্ভব হয় তবে অবশ্যই পুরাতন বাইক কেনার আগে একজন মেকানিককে বাইক দেখিয়ে পরামর্শ নেওয়া উচিত।