শহরের জ্যাম রাস্তা হোক বা হাইওয়ে, বাইকে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এই আনন্দের পথে, সুরক্ষার কথাটা কিন্তু সবার আগে মনে রাখতে হবে। একটু অসতর্কতার কারণে জীবনের গতি থেমে যেতে পারে। তাই বাইক চালানোর সময় কিছু বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকা জরুরি। মোটরসাইকেল বা বাইকের দাম যতই হউক না কেন জীবনের মুল্য ও গুরত্ব তার থেকে বহুগুণে বেশি।
আজকে আমরা বাইক ড্রাইভিং এর সময় যে সকল বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরী সেই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করবো। ফলে, আনন্দের সাথে বাইক রাইড করতে পারবেন নিরাপদে।
জয়েন করুন 76 হাজারের বেশি বাইকারের গ্রুপ কিউরিয়াস বাইকার
১. হেলমেট
বাইক চালাচ্ছেন আর হেলমেট নেই, এটা ভাবাই যায় না। হেলমেট শুধু আইন রক্ষার জন্য নয়, এটা আপনার জীবন রক্ষার জন্য সবচেয়ে জরুরি। দুর্ঘটনা কখন কিভাবে আসবে, কেউ বলতে পারে না। কিন্তু ভালো মানের একটা হেলমেট থাকলে, মাথার আঘাত অনেকটাই কমানো সম্ভব। হেলমেট কেনার সময় ISI বা DOT-এর মতো স্ট্যান্ডার্ড মার্ক আছে কিনা, দেখে কিনুন। আর হ্যাঁ, শুধু হেলমেট পরলেই হবে না, এটা সঠিকভাবে পরতে হবে। স্ট্র্যাপ লক করে নিশ্চিত করুন, হেলমেট যেন আপনার মাথা থেকে না সরে যায়। ভাবুন তো, একটা হেলমেট আপনার জীবন বাঁচানোর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ! হেলমেট মাথায় থাকলে দুর্ঘটনায় যেমন জীবন রক্ষা পাবে, তেমনি পুলিশের কাছে মামলা খেতে হবেনা।
২. বাইকের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ
আমরা যেমন নিজের শরীরের যত্ন নেই, তেমনই বাইকেরও যত্ন নেওয়া দরকার। বাইকের ইঞ্জিন অয়েল, ব্রেক, টায়ার, লাইট – এগুলো নিয়মিত চেক করা উচিত। টায়ারের হাওয়া কম থাকলে বা ব্রেক ঠিকঠাক কাজ না করলে, দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। নিয়মিত সার্ভিসিং করালে বাইকের ছোটখাটো সমস্যাগুলো আগে থেকেই ধরা পড়ে এবং বড় কোনো দুর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়।
৩. ট্র্যাফিক আইন ও রাস্তার নিয়মকানুন
রাস্তায় চলার কিছু নিয়ম আছে, যা আমাদের নিজেদের ভালোর জন্যই তৈরি করা হয়েছে। ট্র্যাফিক সিগন্যাল মেনে চলুন, রাস্তার বাঁকগুলোতে স্পিড কমান, আর অবশ্যই লেন মেনে চলুন। অনেকে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে উল্টো পথে বা ভুল লেনে বাইক চালান, যা খুবই বিপজ্জনক। নিজেও বাঁচুন, অন্যকেও বাঁচান। ট্র্যাফিক আইন মেনে চললে এটা সহজেই সম্ভব। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বা গান শুনতে শুনতে বাইক চালানো খুবই রিস্কি। বাইক রাইড করার সময় রাস্তায় মনোযোগ দিন।
৪. গতিসীমা মেনে চলুন
বাইক রাইড করার সময় অনেক বেশি স্পিডে গাড়ি চালানো সবার পছন্দ হলেও এটি খুবই বিপজ্জনক।। হাইওয়েতে বা ফাঁকা রাস্তায় হয়তো একটু বেশি গতিতে চালানো যায়, কিন্তু শহরের রাস্তায় বা যেখানে মানুষজন বেশি, সেখানে গতি কমানো বুদ্ধিমানের কাজ। বেশি গতিতে বাইক চালালে কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে পড়ে, আর ব্রেক করলেও সময় লাগে। গতি যত কম, দুর্ঘটনার ঝুঁকিও তত কম। জীবন একটাই, তাই গতি কমিয়ে নিরাপদে চলুন।
৫. পোশাক ও অন্যান্য সুরক্ষা সরঞ্জাম
বাইক চালানোর সময় সঠিক পোশাক পরাটাও জরুরি। ফুলহাতা জামা, প্যান্ট আর ভালো জুতো পরলে, পড়ে গেলে বা সামান্য দুর্ঘটনায়ও আঘাত কম লাগে। অনেকে স্টাইলিশ হাফ-হাতা জামা বা স্যান্ডেল পরে বাইক চালান, যা মোটেও নিরাপদ নয়। বৃষ্টির সময় বা ঠান্ডায় রাইডিং গিয়ার (rain gear) ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায় এবং ঠান্ডাও লাগে না। রাতে বাইক চালালে রিফ্লেক্টিভ ভেস্ট (reflective vest) পরা ভালো, যাতে অন্য গাড়ির চালকরা আপনাকে সহজেই দেখতে পায়। এতে করে বড় ধরনের এক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে যাওয়া সম্ভব।
৬. ক্লান্ত অবস্থায় রাইড নয়
ক্লান্ত শরীর আর দুর্বল মন নিয়ে বাইক চালালে মনোযোগ কমে যায়। ঘুম পেলে বা শরীর দুর্বল লাগলে, রাইড করা উচিত না। ক্লান্ত অবস্থায় এক্সিডেন্টের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। লম্বা পথ রাইড করার আগে যথেষ্ট বিশ্রাম নিন, আর রাস্তায় বিরতি দিয়ে চা-কফি খেয়ে শরীর ও মনকে সতেজ রাখুন।
বাইক রাইডিং সত্যিই খুব আনন্দের। কিন্তু জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই। উপরের এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে, আপনার বাইক রাইডিং আরও নিরাপদ হবে। মনে রাখবেন, সাবধানতা কখনও দুর্বলতা নয়, বরং এটা বুদ্ধিমানের কাজ। তাই, বাইক রাইড করবেন, অবশ্যই উপরোক্ত সতর্কতাগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
লেখাটি লিখে পাঠিয়েছেন বিডি স্টল