বাইক থাকবে নতুনের মত, আজীবন

মার্চ 15, 2022

বাইক থাকবে নতুনের মত, আজীবন

যেভাবে মেইনটেইন করলে বাইক চালিয়ে সবসময় মজা পাবেন।

প্লাগঃ

প্লাগ খুবই ছোট্ট একটা জিনিস তবে এটা ছাড়া বাইক স্টার্টই হবে না, তাই প্লাগ নিয়ে কোনো অবহেলা নয়। আমাদের দেশের ভ্যাজাল তেলের কারনে প্লাগে কার্বন জমে নোংরা হয় দ্রুত, তাই পরিষ্কার করুন নিয়মিত।

প্রতি ১০ হাজার কিমি পর পর এই ছোট্ট জিনিসটি পালটে দিলে এক্সিলারেশন এবং মাইলেজ ঠিকঠাক থাকবে।

অয়েল ফিল্টারঃ

সকল বাইকেই ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার অথবা অয়েল স্ট্রেইনার থাকে যার কাজ ইঞ্জিনের ডাস্ট পার্টিকেল গুলো ছেকে দেয়া যেন ইঞ্জিনের লুব্রিকেশন পয়েন্টগুলো জ্যাম না হয়। ফিল্টারের ক্ষেত্রে প্রতি ২/৩ হাজার কিমি পর পর অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে এবং স্ট্রেইনারের ক্ষেত্রে ৮-১০ হাজার কিমি পর পর ক্লিন করতে হবে যেন ইঞ্জিন অয়েল সার্কুলেশন যথাযথভাবে হতে পারে।

ক্লাচ কেবল এবং এক্সিলেটর কেবলঃ

একবার হলেও ক্লাচ কেবল ছিড়ে রাস্তায় বেক্কলের মত দাঁড়িয়ে হেল্প হেল্প বলে ডাকাডাকি করেননি এরকম বাইকার পাওয়া কঠিন।

ক্লাচ কেবল ছিড়ে যাবার মুল কারন কারণ হল বিষয়টিকে পাত্তা না দেয়া এবং মেইনটেইন না করা।

ক্লাচ কেবল প্রতি ৩-৪ হাজার কিমি পর পর ক্লিন এবং লুব করা উচিত এবনহ ১০/১২ হাজার কিমি পর চেঞ্জ করে ফেললে সবচেয়ে ভালো। সাথে ফ্রি প্লে এডজাস্ট করাও জরুরি।

এক্সিলেটর বা থ্রোটল কেবল সাধারণত ইন্সুলেট করা থাকে তাই লুব করার প্রয়োজন হয় না তবে এটাও বছরে অন্তত ১ বার চেঞ্জ করে ফেলা উচিত।

এয়ার ফিল্টারঃ

এয়ার ফিল্টার বক্সের ভিতর থাকে ফিল্টার।

এটা ইঞ্জিনের নাকের মত, ফিল্টার দিয়ে বাতাস ছেকে ইঞ্জিন তার প্রয়োজনীয় দম নেয়।

ফিল্টার নোংরা থাকলে ইঞ্জিন ঠিকঠাক শ্বাস নিতে পারেনা। তখন এক্সিলারেটর মোচড়ালে ইঞ্জিন কম রেস্পন্স করে, তেল খরচ বেড়ে যায়। বেশি ধুলোবালি যুক্ত এলাকায় বাইক চালালে প্রতি ২-৩ হাজার কিমি পর পর এয়ার ফিল্টার ক্লিন এবং ৬-৭ হাজার কিমি পর চেঞ্জ করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ইঞ্জিন অয়েলঃ

ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখা এবং ইন্টার্নাল ফ্রিকশন কমিয়ে ইঞ্জিনের সেরা পার্ফর্মেন্স আউটপুট নিশ্চিত করাই ইঞ্জিন অয়েলের কাজ। তাই নকল বা ভ্যাজাল ইঞ্জিন অয়েল থেকে সাবধান। ইঞ্জিনের দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে সঠিক গ্রেড ও জেনুইন অয়েলের কোনো বিকল্প নেই।

ব্যাটারিঃ

ব্যাটারি নিয়েও সচেতন থাকা উচিত কারন দুর্বল ব্যাটারির কারনে সেল্ট স্টার্ট না হওয়া, হর্ন ঠিকঠাক না বাজা, লাইটের আলো কমে যাওয়া সংক্রান্ত নানান ঝামেলায় পড়তে পারেন।

যাদের বাইকে লিকুইড সেল ব্যাটারি তারা ২-৩ মাস পর পর লিকুইড লেভেল চেক করুন এবং প্রয়োজনে টপ আপ করুন ও চার্জ দিন।

যারা মেইন্টেনেন্স ফ্রি ড্রাই সেল ব্যাটারি ইউজ করেন তারাও ২/৩ মাস পর পর টার্মিনাল গুলো টাইট আছে কিনা চেক করবেন এবং ভোল্টেজ চেক করান।

ড্রাই সেল ব্যাটারি সাধারণত ২৪-৩৬ মাস পর্যন্ত ভালো সার্ভিস দেয়। দুর্বল হতে শুরু করলে পালটে ফেলুন।

চেইনঃ

চেইন নিয়েও বিন্দুমাত্র অবহেলা নয় কারন ড্রাইভ চেইনের মাধ্যমেই ইঞ্জিনের শক্তি চাকায় ট্রান্সফার হয়, সুতরাং চেইন রাখতে হবে পরিস্কার, নিয়মিত লুব করতে হবে প্রতি ৫০০ কিমি পর পর।

চেইন রাখতে হবে সঠিক টেনশনে। টেনশন মানে কিন্ত দুশ্চিন্তা নয়, চেইনের ক্ষেত্রে সঠিক টেনশন মানে হচ্ছে স্ল্যাক লেভেল চেক করে সঠিক মাপে টাইট করে রাখা যেন চেইন অতিরিক্ত টাইট বা লুজ না থাকে।

টায়ার এবং টায়ার প্রেশারঃ

দুইটা চাকা ছাড়া বাইক চিন্তা করাই অসম্ভব এবং চাকায় ভর করেই কিন্ত বাইক এবং বাইকার চলাফেরা করে তাই চাকার গুরুত্ব ভুলে গেলে কপালে দুঃখ আছে।

লিকেজ বা পাংচার হলো কিনা তা চট করে বুঝতে চাইলে নিয়মিত টায়ার গ্রিপ ও টায়ার প্রেশার চেক করা উচিত।

বেস্ট ব্রেকিং এবং মাইলেজ পেতে চাইলে রিকমেন্ডেশন অনুযায়ী হাওয়া দিন চাকায়।

ব্রেক এবং ব্রেক প্যাডঃ

বাইক ৯৯% ওকে শুধু মাঝে মাঝে ব্রেক ধরেনা, এরকম বাইক চালানোর সাহস কারো আছে?? থাকার কথাও না, তাই ব্রেক প্যাড কতটা ক্ষয় হলো, ক্যালিপার এবং মাস্টার সিলিন্ডার ১০০% একুরেট ফাংশনাল আছে কিনা এটাও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। বছরে অন্তত একবার হাইড্রলিক ব্রেকের অয়েল চেঞ্জ করা ভালো।

উপরোক্ত বিষয়গুলো আপ-টু-ডেট থাকলে বাইক নিয়ে নিশ্চিন্তে দীর্ঘ ভ্রমনে বেরিয়ে পড়ার জন্য আপনার বাইক থাকবে সদা প্রস্তুত।

আরো কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট বক্সে রেখে যান।

ভালো থাকুক আপনার বাইক।

লেখাঃ

ইকবাল আব্দুল্লাহ রাজ

এডমিন # Curious Biker