বাইকের চেইন লুব করার প্রয়োজনীয়তা

জুলাই 30, 2019

বাইকের চেইন লুব করার প্রয়োজনীয়তা

মোটর সাইকেল বা মোটর বাইকের যে অংশ গুলো নিজে যত্ন করার অংশ রয়েছে তার মধ্যে চেইন অন্যতম। আবার মোটর সাইকেলের যদি কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকে তবে চেইন তাদের মধ্যে একটি। আজ আমরা আলোচনা করবো এই অংশের অর্থাৎ চেইনে ল্যুব করার প্রয়োজনীয়তা এবং পদ্ধতি নিয়ে। কারণ ভালো মাইলেজ পেতে, ভালো সার্ভিস পেতে এই ল্যুবিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

বাইকের চেইন ল্যুব করার প্রয়োজনীয়তা:

বাইকের চেইন ল্যুব করতে হয় নিয়ম মেনে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রমের পরে নিয়ম মেনে ল্যুব করে নিতে হবে। ৫০ সিসি থেকে ১২৫ সিসি পর্যন্ত কমিউটার বা সাধারন ব্যবহারের বাইক গুলোতে সাধারনত চেইনে একটি চেইন কাভার থাকে। বাংলাদেশের মতো দেশে রাস্তা–ঘাটে ধুলো–বালি–কাদা স্বাভাবিক জিনিস। তাই মোটরসাইকেলের চেইনকাভার এইসব ধুলোবালি–কাদা থেকে রক্ষা করে। কিন্তু বর্তমানে অনেক বাইক বিশেষ করে স্পোর্টস ক্যাটেগরীর বাইকগুলোতে চেইন কাভার থাকে না। বা উপরের অংশে অল্প পরিমানে থাকে ফলে চেইনের লুব্রিকেন্ট/গ্রিজ ইত্যাদির সাথে রাস্তার ধুলো ময়লা জমে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে চেইনে ময়লা জমে যায়। এতে বাইকের স্বাভাবিক গতি হ্রাস পায়, চেইন এবং স্প্রোকেটের আয়ু কমে যায়, চেইন দুর্বল হয়ে ছিড়ে যাবার সম্ভবনা তৈরী হয়। প্রয়োজন নিয়মিত চেইন পরিস্কার করা ও পরীক্ষা করা। পরীক্ষা করে দেখতে হবে চেইনটি ঢিলা হয়ে গেছে কিনা অথবা অতি ব্যবহারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে কিনা। প্রয়োজনে চেইন বদলে ফেলতে হবে।

প্রতি ৫০০–১০০০ কিলো মিটার বাইক রাইডের মধ্যেই একবার অন্তত চেইন পরিস্কার করা দরকার। বিশেষকরে যাদের চেইনকাভার নেই তাদের ৫০০কিমি অন্তর পরিস্কার করাই ভালো। অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দিয়ে নিয়মিত এই কাজটি করিয়ে নিতে পারেন। হাতে সময় থাকলে বা নিজের প্রয়োজনেও এই কাজটি নিজ হাতে করতে পারেন। প্রয়োজন সামান্য কিছু জিনিস যা বাসাতেই পাওয়া যাবে আর থাকতে হবে কাজের আগ্রহ। বাইকের যেসব পার্টস এ ল্যুবিং এর প্রয়োজন হয় সেগুলো হলো চেইন আর সাসপেনসন। চাইলে চেইন ল্যুবিং নিজেই করা যায় বাসায়।

বাইকের চেইন ল্যুবিং করার পদ্ধতি:

প্রথম ধাপ :

চেইনের ময়লা পরিষ্কার। এর জন্য কেরোসিন ব্যবহার করা যেতে পারে। একটা ব্রাশের মাধ্যমে চেইনের ময়লা কেরোসিন দিয়ে সাফ করুন ভালো মতো। তারপর একটি ন্যাকড়ার মাধ্যমে কেরোসিন মুছে নিন।

দ্বিতীয় ধাপ:

তারপর চেইনে লুব্রিক্যান্ট হিসাবে সিলাই মেশিনের তেল ব্যাবহার করতে পারেন। সবশেষে আরেকবার ন্যাকড়া দিয়ে চেইন মুছে নেন। সেলাই মেশিনের তেল খুবই সহজলভ্য এবং দামও কম। আপনি যদি লুবিং সার্ভিসিং এর দোকানে করাতে চান তাহলে খরচ পড়বে ১০০–১৫০ টাকা। লুবিং করার সময় কোন অবস্থাতেই ডিস্ক ব্রেকে তেল দেয়া যাবে না, তাহলে ব্রেক অকেজো হয়ে পড়বে।

একটি সমতল স্থানে মোটর সাইকেলকে ডাবল স্ট্যান্ড করান। চেইন কাভার থাকলে খুলে ফেলুন, অন্তত নীচের পার্টটি খুললেও চলবে। যাদের চেইন কাভার নেই তাদের এই কাজটি করতে হচ্ছে না। এবারে কেরোসিনে টুথব্রাশ ডুবিয়ে টুথব্রাশটি দিয়ে চেইনে কেরোসিন লাগাতে থাকুন। এক হাত দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে অন্য হাতে চেইনে কেরোসিন লাগান। এভাবে পুরো চেইনটি যেনো কেরোসিনে ভিজে যায়। এরপর মিনিট দশেক অপেক্ষা করুন। আশা করা যায় এই সময়ের মধ্যে চেইনে লেগে থাকা ময়লা কিছুটা হলেও নরম হবে। এবার টুথব্রাশ দিয়ে ঘষে ঘষে চেইন থেকে ময়লা পরিস্কার করতে থাকুন। (এক ধরনের চেইন ব্রাশ পাওয়া যায় যার ৩দিকে ব্রাশ লাগানো থাকে, যেটি দিয়ে খুব সহজেই চেইন পরিস্কার করা যায়, চাইলে সেটিও কিনে ব্যাবহার করতে পারেন।) পুরো চেইনটি ব্রাশ করা হয়ে গেলে আবার ব্রাশের সাহায্য পুরো চেইনে কেরোসিন দিয়ে ভিজিয়ে দিন। ৫মিনিট অপেক্ষা করুন। আবার ঘষে ঘষে ব্রাশ করুন। যদি মনে হয় যে শক্ত হয়ে লেগে থাকা ময়লা উঠে গেছে সেক্ষেত্রে নরম কাপড় দিয়ে ঘষে ময়লা/কেরোসিন মুছে ফেলুন। পেছনের চাকা ঘুরিয়ে দেখে নিতে পারেন চেইনের কোথাও ময়লা লেগে আছে কি না। থাকলে ব্রাশে কেরোসিন ভিজিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন এবং কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন। একই ভাবে পেছনের স্প্রোকেটও একই ভাবে পরিস্কার করতে হবে।

চেইনে গ্রীজ জাতীয় জিনিস ব্যবহারের নিষেধ করা হয় কয়েকটি কারনে।প্রথমত গ্রীজের ঘনত্ব বেশি বলে ময়লা আটকে আরো জটিলতা তৈরী করে। দ্বিতীয়ত শীতের দিনে গ্রীজ এবং ময়লা জমে শক্ত হয়ে গিয়ে চেইনকে স্বাভাবিকভাবে ঘুরতে বাধা দেয়। তাই চেইনের জন্য ব্যবহৃত লুব্রিকেন্ট অথবা গিয়ার ওয়েল অথবা পাতলা ইনজিন ওয়েল(মবিল) ব্যবহার করতে পারেন। টুথব্রাশের মাধ্যমে লুব্রিকেন্ট চেইনে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে এদিক ওদিক কিছুটা ছিটাবে। চাইলে সুই বিহীন সিরিন্জ ব্যবহার করেও সুন্দর মতো চেইনে লুব্রিকেন্ট লাগাতে পারেন। পেছনের চাকা ঘুরিয়ে পুরো চেইনে লুব্রিকেন্ট লাগাতে হবে। হাত দিয়ে চাকাটি কয়েকবার ঘোরাতে হবে যেনো পুরো চেইনে ঠিক মতো ল্যুবটি লেগে যায়। কিছুক্খন অপেক্ষা করুন যেন অতিরিক্ত অয়েলটি ঝরে যায়। এরপরে বাইকের চেইন কাভার থাকলে সেটি লাগান।

লুবিংয়ে সর্তকতা:

১. লুবিং করতে হবে সর্তকতা অবলম্বন করে। যেন কোন ভাবেই চেইনে হাত আটকে না যায়। লুবিং করার সময় একটু অসচেতনাই বিপদ ডেকে আনতে পারে। কাজেই সতর্কতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। ২. টায়ারে যদি লুবিং অয়েল লেগে যায় তবে সেটি সাথে সাথে পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় টায়ারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। ৩. কিছু চেইন রয়েছে যেখানে প্রতিটি জয়েন্টে রাবারের গোলাকৃতি রিং(O Ring) ব্যবহার হয়েছে। এ ধরনের চেইনের জন্য নির্ধারিত ক্লীনার ব্যবহার করে চেইন পরিস্কার করাই ভালো।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম মোটর সাইকেল বা বাইকের সঠিক নিময় ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। সব কিছুরই একটি সঠিক নিয়ম থাকে। আমাদের দেশের রাস্তার অবস্থা সবারই জানা। এই রাস্তার জন্যই কয়েকদিন পরে পরে অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে বাইকের চেইন ল্যুব করা প্রয়োজন। আর ল্যুব করার ক্ষেত্রে অনেকেই অবহেলা করেন। কেউ কেউ আবার বলেন চেইনের কাজে এত নিয়ম মানতে হয় না কি। কিন্তু এই কাজটাই সবচেয়ে নিখুঁত ভাবে করা উচিত। কারণ না হলে উল্টো আরো বিপদ হতে পারে। কাজেই আমাদের উচিত নির্দিষ্ট সময় পর পর নিয়ম মেনে মোটর সাইকেল ও বাইকের চেইন ল্যুব করা।