ভালো টায়ার চিনবো কিভাবে?

নভেম্বর 29, 2022

ভালো টায়ার চিনবো কিভাবে?
আমাদের দেশে যে বাইকগুলো আসে তার মধ্যে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত যে টায়ারগুলো স্টক টায়ার হিসেবে আসে সেগুলো এবং এর চেয়ে ভালো কোনো টায়ার কিনতে গেলে আপনি কোন ব্রান্ড এবং প্যাটার্ন পছন্দ করে কিনলে তা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়।

টায়ার মোটরসাইকেলের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এই যে আমরা বাইক চালাই তা কিন্ত এই টায়ারের উপর ভর করেই কিন্ত টায়ার বিষয়ে আমাদের রয়েছে প্রচুর উদাসীনতা।

আমাদের দেশে যে বাইকগুলো আসে তার মধ্যে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত যে টায়ারগুলো স্টক টায়ার হিসেবে আসে সেগুলো এবং এর চেয়ে ভালো কোনো টায়ার কিনতে গেলে আপনি কোন ব্রান্ড এবং প্যাটার্ন পছন্দ করে কিনলে তা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে সেটাই আজকের আলোচনার বিষয়।

আরো পড়ুন

আমাদের দেশে কমনলি ৩-৪ টা দেশ থেকে মোটরসাইকেল আসে। যেমন মোটরসাইকেলের বড় একটা অংশ আসে পাশের দেশ ইন্ডিয়া থেকে, বাদবাকিটা চায়না, ইন্দোনেশিয়া এবং থাই রিজিওন থেকেও বেশ কিছু বাইক আসে।

ইন্ডিয়া থেকে জাপানিজ ও ইন্ডিয়ান ব্রান্ডের যে বাইকগুলো আসে তার মধ্যে স্টক টায়ার হিসেবে ৩ টা ব্রান্ডের টায়ার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

যেমন ১। MRF ২। Ceat ৩। TVS

ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ড থেকে যে বাইকগুলো আসে সেগুলোতে সাধারণত IRC ব্রান্ডের টায়ার সবচেয়ে বেশি ইউজ হতে দেখা যায়৷

বাকি রইলো চায়না বাইকগুলো। দেশে আসা চায়না বাইকগুলোতে CST টায়ার বেশি দেখা যায়।

অনেকেই প্রশ্ন করেন টায়ার কিনতে গেলে কোন টায়ারটা ভালো হবে?

উত্তরটা একটু জটিল কারন আসলে ভালো টায়ার নির্বাচন করা বা সাজেস্ট করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইনফরমেশন এবং পারপাস অফ ইউসেজ জানা খুব জরুরি।

যেমন আপনি কোন ক্যাটাগরির বাইক ব্যাবহার করেন?

কোন ধরনের রোড কন্ডিশনে বাইক বেশি চালান?

টায়ার থেকে কেমন গ্রিপ এবং কেমন লাইফস্প্যান আশা করেন? ইত্যাদি।

আরো পড়ুন

যদি আপনি কমিউটার সেগমেন্টের বাইক ইউজার হন তাহলে উদাহরণ হিসেবে হোন্ডা হরনেট, বাজাজ পালসার, সুজুকি জিক্সার, ইয়ামাহা এফ জেড অথবা টিভিএস এপাচি আরটিয়ার ইউজার হতে পারেন।

এক্ষেত্রে আমরা দেখি শুধু এপাচি আরটিয়ার ছাড়া বাকি সবাই MRF অথবা Ceat টায়ার দিচ্ছে স্টক টায়ার হিসেবে তবে FZS এবং Gixxer এ দেয়া হয় রেডিয়াল এবং নাইলন টাইপ টায়ারের কম্বিনেশন আর বাকি বাইকগুলোতে দেয়া হয় শুধুই নায়লন টায়ার।

নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের রোড কন্ডিশনে MRF টায়ার যথেষ্ট ভালো গ্রিপ এবং ভালো ব্রেকিং দেয় সেই সাথে দামটাও নাগালের মধ্যেই। বাজেট টায়ারগুলোর মধ্যে MRF এবং CEAT দুইটাই চমৎকার টায়ার ব্রান্ড এবং নির্ভরযোগ্য।

তবে নায়লন টাইপ টায়ারের চাইতে রেডিয়াল টায়ারের পার্ফমেন্স সবসময়ই ভালো হয়, কিন্ত কোম্পানি খরচ বাচাতে অনেকক্ষেত্রেই রেডিয়াল না দিয়ে নায়লন টায়ার দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে চেঞ্জ করতে গেলে চেস্টা করা উচিত সেইম ব্রান্ডের সেইম সাইজের রেডিয়াল টায়ার কেনার। এতে ভাল পার্ফমেন্স পাবেন।

কেমন ধরনের রোড কন্ডিশনে আপনি নিয়মিত বাইক চালান সেই অনুযায়ী টায়ার প্যাটার্ন নির্বাচন করুন। সবসময় ভালো রাস্তায় চালালে রোড টায়ার আপনাকে ভালো মাইলেজ এবং গ্রিপ দেবে।

ভালো খারাপ উভয় ধরনের রাস্তায় চালালে ডুয়াল পারপাস টায়ার পছন্দ করতে পারেন, এই টায়ার গুলো ব্লক প্যাটার্ন হয়। MRF এবং Ceat দুইটা ব্রান্ডেরই অফরোড টায়ার বাজারে পেয়ে যাবেন।

তবে ব্লক প্যাটার্ন এর টায়ার ব্যাবহার করলে গ্রিপ বেড়ে যাবে এবং এই কারনে এক্সিলারেশন ও মাইলেজ কিছুটা কমতে পারে।

আরো পড়ুন

যদি আপনি স্পোর্টস সেগমেন্টের বাইক ইউজার হন তাহলে আপনি ইন্ডিয়ান স্পোর্টস না ন্যাকেড স্পোর্টস বাইক গুলোতে স্টক টায়ার হিসেবে mrf টায়ারই পাবেন, কিছুক্ষেত্রে রেডিয়াল ও নায়লনের কম্বিনেশন পেতে পারেন।

ইন্দো বা থাই বাইকের ইউজার হলে IRC ব্রান্ডের টায়ার পাবেন বাইকের সাথে।

ভালো রাস্তায় IRC বেশ ভালো সাপোর্ট দেয়, কিন্ত কাদা বালিতে গ্রিপ লস করে তবে টায়ারগুলো নরম কম্পাউন্ডের হওয়ায় ব্রেকিং পার্ফমেন্স বেশ ভালো হয়।

অনেকেই স্পোর্টস বাইকের সাথে আসা স্টক টায়ারে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না বা আরো ভালো কিছু খোজেন। তাদের জন্য কয়েকটি ব্রান্ড সাজেস্ট করছি। পিরেলি রসো সিরিজ, মিশেলিন পাইলট স্ট্রিট সিরিজ, MRF revz সিরিজ এর টায়ারগুলো কিন্ত চমৎকার চয়েস হতে পারে আপনার জন্য।

তবে বাইকের অপ্টিমাম পার্ফমেন্স ও মাইলেজ পেতে টায়ারের সাইজ স্টক সাইজের সাথে মিল রাখুন৷

মনে রাখবেন টায়ার যত সফট কম্পাউন্ডের হবে আপনি সেই টায়ার থেকে তত বেশি গ্রিপ, ব্রেকিং এবং স্ট্যাবিলিটি পাবেন। তবে নরম টায়ারগুলোর লাইফটাইম কিছুটা কম হয়ে থাকে।

যদি আপনি চান একটা টায়ার থেকে খুব বেশি মাইলেজ এবং এক্সিলারেশন ও টপ স্পীড তাহলে আপনাকে হার্ড কম্পাউন্ডের টায়ার কিনতে হবে।

হার্ড কম্পাউন্ডের টায়ারগুলোর মধ্যে টিভিএস টায়ারগুলো উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য ব্রান্ডের টায়ারের চেয়ে টিভিএস টায়ারে গ্রিপ কম তাই ফ্রিকশন কম, তাই ক্ষয়ও হয় অনেক কম। তবে টিভিএস টায়ার এর লাইফস্প্যান অনেক বেশি, সেই সাথে ব্রেকিং এবং স্ট্যাবিলিটিও সন্তোষজনক না।

এরপর আসে চায়না টায়ার।

চায়না টায়ারের মধ্যে CST টায়ার মোটামুটি ভালোর কাতারেই ফেলা যায় প্রাইস অনুযায়ী তবে নতুন অবস্থায় কম্পাউন্ড নরম থাকলেও কিছুদিন পর শক্ত হওয়া শুরু করে এবং গ্রিপ কমে যায় চায়না টায়ারের ক্ষেত্রে। তাই চায়না ব্রান্ডের টায়ার এড়িয়ে যাওয়াটাই ভালো।

কিছু টিপস দিচ্ছি, আশা করি উপকৃত হবেন।

১। টায়ার থেকে ভালো গ্রিপ এবং এক্সিলারেশন পেতে টায়ার প্রেসার একুরেট রাখার কোন বিকল্প নেই।

২। একান্তই বাধ্য না হলে টায়ারে জেল ব্যাবহার করার প্রয়োজন নেই৷

৩। দীর্ঘদিন বাইক চালানো না হলে টায়ারের নিচে কাঠ জাতীয় কিছু দিয়ে রাখলে টায়ার ভালো থাকবে।

৪। অবশ্যই নতুন টায়ার কেনার ক্ষেত্রে ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট দেখে কিনবেন। দুই বছরের বেশি পুরাতন টায়ার কিনবেন না।

৫। মাঝে মাঝে টায়ার প্রেশার চেক করুন এবং কোনো লিকেজ বা ফাটল আছে কিনা পরিক্ষা করুন।

যারা ভালো ব্রান্ড ও ভালো মানের টায়ার কিনতে ও ব্যাবহার করতে চান তাদের জন্য Pirelli, Micheline , Dunlop, MRF এবং CEAT ভালো অপশন হতে পারে।

আরো কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানিয়ে দিন।