মোটর বাইক পিলিয়ন

আগস্ট 15, 2019

মোটর বাইক পিলিয়ন

যদি প্রশ্ন করা হয় কেমন যানবাহন পছন্দ তবে প্রায় নব্বই ভাগ মানুষ বলবে এমন বাহন প্রয়োজন যা গতি এবং স্বাধীনতা উভয় কম্বিনেশনে প্রস্তুত। আর গতি এবং স্বাধীনতা এই দুটো কম্বিনেশন আছে কেবল মোটর সাইকেল বা বাইকেই। আমাদের দেশে এই কম্বিনেশনে তৈরি যানবাহন অর্থাৎ মোটর সাইকেল বা বাইকের চাহিদা আগে অতোটা ছিলো না। কিন্তু এখন চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো বাইকের পিলিয়ন বা সহযাত্রী নিয়ে। আমরা সকলেই প্রয়োজনবোধে মোটর সাইকেল বা বাইকে সহযাত্রী নিয়ে রাইড করি। কিন্তু এর জন্যও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। আজকের এই আলোচনা থেকে এসবই তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

হেলমেট ব্যবহার :
পিলিয়ন সহ রাইডে হেলমেট ব্যবহারের বিষয়ে আমরা প্রায় সবাই অবগত। কিন্তু তারপরও অনেকেই জানেন না এই নিয়ম সম্পর্কে। এখানে নিয়ম হলো পিলিয়ন বা সহযাত্রী সহ রাইড দিলে সহযাত্রীকে হেলমেট পড়তে হয়। আর এটা বাধ্যতামূলক।

হেলমেটে হেলমেটে ঠুকাঠুকি :
রাইডারের সাথে সহযাত্রীও হেলমেট পড়বেন। আর এই নিয়মটা মানতেই হবে। তবে সমস্যাটা এখানে না। সমস্যা অন্য জায়গায়। অনেক সময় দেখা যায় দুজনই হেলমেট পড়ে থাকায় গিয়ার পরিবর্তন কিংবা ব্রেক করার সময় হেলমেটে হেলমেটে ঠুকাঠুকি হয়। যদিও এটা বড় কোন সমস্যা না অবশ্যই। তবে এর জন্য অনেক সময় বিরক্ত হতে হয় দুজনকেই।

ব্রেকিংয়ের নিয়ম :
অনেকেই ভাবতে পারেন ব্রেকিং তো আর ব্রেকিংই। কিন্তু না। একা ব্রেক করা আর পিলিয়ন বা সহযাত্রী নিয়ে ব্রেক করার মধ্যে পার্থক্য আছে। সহযাত্রী সহ ব্রেকিংয়ে একা ব্রেকিংয়ের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তির প্রয়োজন হয়। আবার যদি খুব জোরে ব্রেক করা হয় তবে সেখানে দুর্ঘটনার সম্ভবনা থাকে। যেমন জোরে ব্রেক করার ফলে সহযাত্রী এসে হুমড়ি খেয়ে রাইডারের উপরে পড়বে আর এতে করে বাইক কন্ট্রোলে সমস্যা হতে পারে। এজন্যই উচিত ঠান্ডা মাথায় সহযাত্রী থাকা অবস্থায় ব্রেক করা। ধীরে স্থিরে ব্রেক না করলে তখন দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।

নারী সহযাত্রী :
আমাদের দেশে নারী সহযাত্রীর মোটর সাইকেল বা বাইকে চড়ায় ভিন্নতা আছে। আর এই ভিন্নতা হলো আমাদের দেশের নারীরা সাধারণত এক দিকে বসেন। আর এতে করে বাইক বা মোটর সাইকেল কন্ট্রোল বা ব্যালেন্সে সমস্যা হয়। এবং অনেক সময় এর ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। যেমন অনেক সময় নারী সহযাত্রীর শাড়ি বা ওড়না পেছিয়ে যেতে পারে। আর এতে করে ঘটে দুর্ঘটনা। এর পরে যে সমস্যাটা বলবো তার তুলনায় এই শাড়ি/ওড়না পেছানোর সমস্যাটা প্রাথমিক হিসেবে বিবেচ্য হবে। কেননা আমাদের দেশের নারী সহযাত্রীরা হেলমেটে একদমই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। অর্থাৎ হেলমেট ব্যবহারে এরা একদমই অভ্যস্ত নয়। রাইডারদের উচিত নারী সহযাত্রী থাকলে অবশ্যই তাদেরকে হেলমেট ব্যবহার করতে বাধ্য করা এবং বাইক চলা অবস্থায় নড়াচড়া থেকে বিরত রাখা। এবং একইসাথে রাইডারের করণীয় হলো তুলনামূলক কম গতিতে রাইড করা এবং কন্ট্রোল আর ব্যাল্যান্সে মনোযোগী থাকা।

শিশু সহযাত্রী :
শিশু সহযাত্রীর ক্ষেত্রে আমাদের দেশের একটি কমন দৃশ্য হলো শিশুকে তেলের ট্যাংকের উপর বসিয়ে বাইক চালানো। এই শিশুর মাথায় নেই কোন হেলমেট, চোখে নেই কোন চশমা। রাস্তার ধূলাবালি থেকে যে মুক্তি পাবে এই সুযোগও নেই। আবার অনেক সময় খেয়াল করা যায় সামনে বসে বাচ্চা ঘুমাচ্ছে আর বেশ গতিতে রাইডার বাইক চালাচ্ছেন। এমন অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটলে কি হতে পারে সেটা অবশ্যই আন্দাজ করা সম্ভব। যাই হোক আমাদের উচিত শিশু সহযাত্রীকে হেলমেট পড়তে বাধ্য করা।

বৃদ্ধ সহযাত্রী :
পিছনে বৃদ্ধ সহযাত্রী থাকলে কিছু জিনিস মেনে বাইক চালানো বাধ্যতামূলক। যেমন, গতি বাড়ানো কিংবা কমানোর ব্যাপারটা খুব সহজ ভাবে করতে হবে। হুট করে কিছু করা উচিত না। কর্ণারিং করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। এবং ব্রেক করার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। হুট করে ব্রেক করলে বিপদ হতে পারে। কারণ সহযাত্রী হিসেবে প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ যতটা সতর্ক আর জানা শোনা বৃদ্ধ সহযাত্রীর ক্ষেত্রে সেটা থাকবে না। আর এজন্যই রাইডারকে বৃদ্ধ সহযাত্রী নিয়ে রাইড দেওয়ার সময় বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

বন্ধু সহযাত্রী :
পেছনে বন্ধু থাকলে যেমন রাইড করা সহজ আবার তেমনি বিপদজনক। কারণ আপনার সহযাত্রী হিসেবে যখন আপনার কোন বন্ধু থাকবে তখন অবশ্যই আপনারা গল্পে মেতে উঠবেন। তখন হয়তো বাইকের ব্যালেন্স আর কন্ট্রোলিংয়ের ব্যাপারটা আপনার আয়ত্তে না ও থাকতে পারে। যার ফলে হতে পারে দুর্ঘটনা। আবার ভালে দিক হলো সহযাত্রী হিসেবে আপনার বন্ধু থাকলে তখন ভালো করে বসার কথা বা বাইক চলন্ত অবস্থা নড়তে বারণ করতে পারবেন। কিন্তু সিনিয়র কেউ থাকলে আমরা সাধারণত বলতে চাই না দ্বিধা বোধ করি। এটা একেবারেই কাম্য নয় যদিও। বন্ধু সহযাত্রী নিয়ে বাইক চালালে আপনি চালাবেন স্বাধীন ভাবে। মেতে উঠবেন গতির খেলায়। মেতে উঠবেন ওভারটেকিংয়ের খেলায়। আর এসব থেকেই হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এজন্যই বন্ধু সহযাত্রী নিয়ে বাইক চালানো যেমন সহজ তেমনি অনেক বিপদজনকও বটে।

দৃশ্যমান থাকা :
বাইক রাইডের সাথে পোশাকেরও একটা সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই সেটা জানি না। বাইক রাইডের সময় এমন পোশাক পড়া প্রয়োজন যেন সহজেই অন্য চালকের চোখে সেটা ভেসে উঠে। আর এমন পোশাক রাইডারের পাশাপাশি সহযাত্রীর পরিধান করা উচিত। রাতের রাইডে কালো পোশাক এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ রাতের বেলা অন্ধকারে কালো পোশাক দেখা যায় না। যদি সম্ভব হয় তবে রিফ্লেক্টর সহ ভেস্ট পড়তে হবে। আর সহযাত্রী নিয়ে বাইক রাইডের এ নিয়ম গুলো একদম অপরিহার্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা এমনটা মেনে চলি না। আর এর ফলেই প্রতিনিয়ত বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এমনকি প্রাণও হারাতে হয়।

একসঙ্গে বসা :
বাইকের সিট বেশ লম্বা হয়। আর এজন্য পেছনে সহযাত্রী থাকলে সে যদি বেশি দূরে বসে তাহলে রাইডারের সমস্যা হয়। তাই সহযাত্রীকে বলা হয় যত সম্ভব সামনে এসে বসার। কারণ সামনে এসে বসলে আর বাইকের সাথে লেগে থাকলে কন্ট্রোল আর ব্যালেন্সে সমস্যা হয় না। অর্থাৎ রাইডারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে যদি সহযাত্রী তার সাথে লেগে বসে। আর না হলে কর্ণারিংয়ের সময় বিপদ হতে পারে। আর কর্ণারিংয়ের সময় সহযাত্রীর উচিত রাইডার যে দিকে আছে ওদিকে থাকা। উল্টো বা বিপরীত দিকে গেলে তখন মোটর সাইকেল বা বাইক মাটিতে হেলে পড়তে পারে।

চেইন গার্ড ব্যবহার করা :
বাইকে সহযাত্রী নিয়ে রাইড দিলে আমাদের উচিত অবশ্যই চেইন গার্ড ব্যবহার করা। এই চেইন গার্ড ব্যবহার না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা অনেকেই এই ব্যাপারটায়ও এড়িয়ে চলি। কিন্তু এটা একদমই উচিত নয়।

বাইকের সহযাত্রী বা পিলিয়ন নিয়ে রাইড করার জন্য বিশেষ নিয়ম থাকলেও আমরা তার সবগুলো মেনে চলি না বা চেষ্টা করি না। কিন্তু এই নিয়ম মেনে না চলার ফলেই ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। হতে পারে আমাদের কাছে এগুলো খুব ছোট বিষয়। কিন্তু এই ছোট বিষয় গুলোই অনেক সময় হয়ে উঠে দুর্ঘটনার বড় কারণ। তাই আমরা নিয়ম মেনে পিলিয়ন বা সহযাত্রী নিয়ে রাইড করবো এবং নিরাপদে থাকবো। আমাদের আজকের আলোচনায় উঠে এলো পিলিয়ন নিয়ে বাধ্য বাধকতা আর নিয়মগুলো। আশা করছি বাইকাররা এই নিয়ম মেনে চলবেন আর নিরাপদে রাইড দিবেন।