মোটর বাইক ব্লাইন্ড স্পেস

আগস্ট 19, 2019

মোটর বাইক ব্লাইন্ড স্পেস

আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। আর এখানে যতটা দুর্ঘটনা হয় নিজের ভুলে তার থেকে বেশি দুর্ঘটনা হয় অন্য জনের ভুলের কারণে। এজন্য সতর্ক থাকতে হয় স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি। সতর্ক থাকা ছাড়া অন্য কোন সমাধান নেই এখানে। প্রতিটি গাড়ির জন্য নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থাকে আর সেটা চালকের চোখ এড়িয়ে যায়। আর বাইকারদের উচিত এসব জায়গায় বাইক নিয়ে না যাওয়া। ঠিক একইভাবে বাইকেরও কিছু নির্দিষ্ট জায়গা বা স্পষ্ট রয়েছে যেগুলো বাইকের লুকিং গ্লাসে ধরা পড়ে না বা পড়বে না।

ব্লাইন্ড স্পট কি :
ব্লাইন্ড স্পট বা অদৃশ্য অংশ সেই জায়গা গুলোকে বলে যেটি চালকের নিজ চোখে গাড়ীর লুকিং মিররে দৃশ্যমান হয় না। অর্থাৎ আপনার বাইকের লুকিং গ্লাসের পেছনের যে অংশগুলো দেখা যায় এর বাইরেও আরো কিছু জায়গা থাকে আর এই জায়গায় অন্য কোন গাড়ি থাকলেও সেটা দেখা অসম্ভব। আবার বড় গাড়ী যেমন কার, বাস, ট্রাক, লরীতে রযেছে বড় বড় ব্লাইন্ড স্পট যেখানে আপনি বাইক নিয়ে অবস্থান করলেও চালক আপনাকে দেখতে পাবে না, ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা থাকে। কাজেই আমাদের উচিত মেইন রোডে এমন জায়গা বাছাই করা যেখানে আমাদেরকে সহজেই দেখতে পায় অন্য গাড়ির চালকেরা। আর বাইক এমনিতেই সাইজে বেশ ছোট আর গতিও তুলনামূলক অনেক বেশি কাজেই বড় গাড়ির চালকদের দেখার ভুল হতেই পারে। তাছাড়া একটি সত্য কথা হলো আমাদের দেশে

কার বা ট্রাক মোটর সাইকেল বা বাইককে আঘাত করলে তাদের তেমন ক্ষতি হবার সম্ভবনা থাকে না বলে মোটর সাইকেলকে তারা খুব একটা পাত্তাও দেয় না বা দিতে চায় না। কিন্তু আমি একটি কথা বিশ্বাস করি আর সেটা হলো একজন ড্রাইভার বা চালক ইচ্ছে করে অন্য একটা গাড়ি বা বাইকে আঘাত করতে চায় না।

বাইকে ব্লাইন্ড স্পট থেকে আকর্ষণ পাওয়ার জন্য যা করা উচিত :

১. দিনের বেলায় আলোর সল্পতা থাকলে হেড লাইট বা পার্কিং লাইট জ্বালিয়ে রাখা উচিত।

২. টার্ন নেওয়ার সময় সিগন্যাল দিতে পারেন তবে অবশ্যই টার্ন নেওয়া হয়ে গেলে সিগন্যাল লাইট বন্ধ করতে ভুলে যাওয়া যাবে না।

৩. বাজে রাস্তা ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪. কোন যানবাহন আপনাকে অতিক্রম করার সময় যানবাহনের দিকে না তাকিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বাইক চালাতে হবে।

৫. রাস্তার এমন একটি দিক বাছাই করুন যেখান থেকে পুরো রাস্তার দিকে নজর দেওয়া সম্ভব এবং আপনাকেও যেন অন্য ড্রাইভার বা চালক সহজে দেখতে পায়।

৬. উভয় মিরর বা গ্লাসকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা বাইকাররা সাধারণত ডান পাশের গ্লাসকে বেশি গুরুত্ব দেই। ভেবে নেই পেছন থেকে তো গাড়ী আসবে ডান পাশ থেকে। অথচ কোন অতি জ্ঞানী চালক আপনার বামপাশ দিয়ে ঢুকে পড়লে আচমকা আপনাকে চমকে দিতে পারে।

৭. কোন গাড়িকে ওভারটেক করার জন্য উভয় মিরর বা গ্লাসে নজর রাখতে হবে সজাগ দৃষ্টিতে।

৮. বাইকে মালামাল বা পেছনে সহযাত্রী থাকলে বাইকের পেছনের অনেক অংশই দেখা যায় না, সর্বোচ্চ দৃষ্টিগোচরের জন্য লুকিং মিরর বা গ্লাস সেট করে নিন।

৯. বাজারে ব্লাইন্ড স্পট মিরর কিনতে পাওয়া যায়, প্রয়োজনে তেমন মিরর বাইকে লাগিয়ে নিতে পারেন।

বাইক দুর্ঘটনার কারণ :
আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি বাইক দুর্ঘটনা হয় সামনের যানবাহনের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব না রাখার কারণে। যদি নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রাখা হয় তবে সামনের গাড়িটি হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলে তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ রাস্তায় বাইক অনেক গতিতে চলে। এই দুর্ঘটনার রেজাল্ট বা ফলাফল হয় দুটো কারের মুখোমুখি সংঘর্ষের সমান। কাজেই জীবন নিয়ে ঝুঁকি থাকবেই। আর এভাবেই অনেক বাইকাররা মূল্যবান জীবন পর্যন্ত হারিয়ে বসেন। এমন অবস্থায় আপনার বাইকের থেকে সামনের যানবাহনে ওজন যত বেশী হবে ফলাফল তত খারাপ হবে । আর যেহেতু আপনি গতিতে থাকবেন তাই যত বেশী গতিতে থাকবেন খতির পরিমাণও তত হবে। বাইককে সিঙ্গেল ট্রেক বাহন বলা হয় অর্থাৎ দুই চাকার উপরে ব্যাল্যান্স করে চলতে হয় তাই এই রকমের পরিস্থিতিতে পড়লে হঠাত হকচকিয়ে নার্ভাস হয়ে যেতে পারেন এবং বাইকের ব্যাল্যান্স হারিয়ে ফেলতে পারেন।

নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা :
রাস্তায় পরিস্থিতির পরিবর্তন হতেই থাকে। একজন দায়িত্ববান রাইডার হিসেবে আপনার টাইমিং এবং প্রয়োজনীয় দূরত্ব সম্পর্কে ভালমত জানা প্রয়োজন। নিরাপদে মোটর সাইকেল বা বাইক চালাতে আপনার মাথা ঠান্ডা রাখাটা জরুরী। পরিস্থিতি বুঝে কাজ করতে হবে। ভাল রাইডাররা জানেন কখন গতি কমাতে হয় এবং কখন গতি আর কৌশলের সমন্বয়ে বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে কিছু করে বসলে দূর্ঘটনার সম্ভবনা থাকে। কোন যানবাহনের পিছনে এমন জায়গায় থাকুন যাতে সে তার রিয়ারভিউ মিররে সহজেই আপনাকে দেখতে পায়। আপনার গতি যদি ঘন্টায় ৪০ কি: মি: এর নীচে হয় তাহলে দুই সেকেন্ড দূরত্বে থাকুন। এই দুরুত্ত্বে বিষয়টি অনুধাবনের তারপরেও চিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম । গতির অনুপাতে দুই থেকে বারো সেকেন্ড দূরত্বে থাকার চেষ্টা করুন। বাইকের গতি বেশী থাকলে দুরত্ত্ব বেশী রাখবেন।

দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয় :
দুর্ঘটনা এড়াতে আপনার বাইকের ব্লাইন্ড স্পটের দিকে যেমন সজাগ দৃষ্টি রাখবেন তেমনি অন্য গাড়ীর ব্লাইন্ড স্পট এড়িয়ে চলবেন। অন্যের ব্লাইন্ডস্পটে যেতে হলে নিজের উজ্বল পোশাকে, বাইকের লাইটে বা হর্নের মাধ্যমে চালকের দৃষ্টি আকর্ষন করুন।

আজকের এই আলোচনা থেকে আমরা জানলাম বাইকের ব্লাইন্ড স্পষ্ট নিয়ে। আমরা অনেকেই এই ব্লাইন্ড স্পট সম্পর্কে জানি না আর জানলেও এ ব্যাপারে সচেতনতা আমাদের একদমই নেই। এর এই একটু অসচেতনার ফলেই হতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। হারাতে পারে জীবনও। আমাদের উচিত এ ব্যাপারে জানা এবং যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করা।