মোটরসাইকেল বন্ধ করা, মাথা ব্যাথায় মাথা কেটে ফেলারই নামান্তর

জুলাই 04, 2022

মোটরসাইকেল বন্ধ করা, মাথা ব্যাথায় মাথা কেটে ফেলারই নামান্তর
যদি আপনি যদি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অর্থাৎ বাস ব্যাবহার করেন তাহলে সকাল ৯ টায় অফিসে ঢুকতে হলে আপনাকে কয়টায় বাসা থেকে বের হতে হবে??? কমপক্ষে ভোর সাড়ে ৫ টায় বা ৬ টায়।

আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল সৌখিন বাহন হিসেবে ব্যাবহৃত হতে দেখা যেতো। কিন্ত সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জনসংখ্যা এবং এই বিশাল জনগোষ্ঠীর যাতায়াত ব্যাবস্থা ও যোগাযোগ ব্যাবস্থা তথা রাস্তাঘাট ও যানবাহন কিন্ত সমান তালে বাড়েনি।

যার ফলাফল আমাদের চোখের সামনেই বর্তমান।

ধরুন আপনার বাসা উত্তরায় এবং অফিস মতিঝিল,

যদি আপনি যদি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অর্থাৎ বাস ব্যাবহার করেন তাহলে সকাল ৯ টায় অফিসে ঢুকতে হলে আপনাকে কয়টায় বাসা থেকে বের হতে হবে??? কমপক্ষে ভোর সাড়ে ৫ টায় বা ৬ টায়।

আবার বিকাল ৫ টায় অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় পৌছাতে কয়টা বাজতে পারে?? রাত ৯ টা থেকে ১০ টা, তাইতো??

তার মানে দাড়াচ্ছে, প্রতিদিনের মোটামুটি ৬-৭ ঘন্টা সময় আপনার জীবন থেকে চলে যাচ্ছে রাস্তায় যানযটের কারনে৷ অথচ প্রতিদিন এই ৬-৭ ঘন্টা সময় কাজে লাগাতে পারলে আপনি আরো সচ্ছল হয়ে উঠতেন, আপনার জীবনের মান আরো উন্নত হতো, এতে দেশের সমগ্র আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি হতো৷ তাছাড়া তীব্র এই যানযটের কারনে প্রতিদিন নস্ট হচ্ছে আপনার জীবনীশক্তি, যুদ্ধ করে ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠতে পারলেও সীট না পেয়ে ঝুলে থাকতে হচ্ছে প্রায়ই, ঘামে গায়ের কাপড় লেপ্টে যচ্ছে গায়ের সাথে।

আর এইসব কারনেই বিকল্প বাহন হিসেবে সময় বাচিয়ে একটু সস্তিতে প্রয়োজনীয় কাজ সারার জন্য একটা মোটরসাইকেল কিনতে গেলেন, সরকার আপনার এই নিত্যপ্রয়োজনীয় বাহনটার জন্য বিশাল অংকের একটা অযৌক্তিক ট্যাক্স নিয়ে নিলো আপনার কাছ থেকে (১৫৩%)।

ফলে মাত্র ১ লাখ টাকা মুল্যমানের একটা মোটরসাইকেল আপনাকে কিনতে হলো প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ করে, এরপর আসে রেজিষ্ট্রেশন এবং রোড ট্যাক্স। আবারও সরকার ভালো অংকের একটা টাকা আপনার কাছ থেকে পেলো।

সবশেষে রাস্তায় বের হলে পুলিশি হয়রানি তো আছেই, এখন আবার দুদিন পর পর এই নিষেধাজ্ঞা, ওই নিষেধাজ্ঞা। অমুক রাস্তায় বাইক চালানো যাবে না, তমুক সেতুতে বাইক চালানো যাবে না।

আরে অদ্ভুত ব্যাপার!!

এগুলো কি কোনোভাবে মেনে নেয়ার মত কথা?

এক শ্রেনীর কুচক্রীমহল তাদের লাভের জন্য আপনাকে জিম্মি করতে চাইছে, আপনার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার এখনই সময়।

দেড়শো পার্সেন্ট ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে, রেজিষ্ট্রেশন প্রসেস সম্পন্ন করে রোড ট্যাক্স দিয়ে আপনি রাস্তায় নামছেন সেফটি এনশিওর করে, যানযট কমাতে ভুমিকা রাখছেন, রাস্তার কাউকে বিরক্ত না করে যানযটের কারন না হয়ে সামান্য একটু জায়গা ব্যাবহার করে গন্তব্যে পৌছে যাচ্ছেন, এখানে আপনার অপরাধ টা কোথায়???

মোটরসাইকেলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা মাথামোটা শ্রেনীর কিছু লোকজন বলছে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে নাকি এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যা নিতান্তই হাস্যকর। বাস - ট্রাক, প্রাইভেট, সিএনজি কোন যানবাহন টা দুর্ঘটনার উর্ধে? হাইওয়েতে প্রতিযোগিতামুলক ভাবে চালাতে গিয়ে প্রায়ই বাস উলটে যায়, খাদে পড়ে, মানুষ মারা যায়। তো বাস কেন বন্ধ করছেন না??

মহাসড়কে অননুমোদিত ভ্যানগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, রিকশা, ব্যাটারি চালিত অটো, নসিমন তো বুক ফুলিয়ে চলছে এদেরকে দমন করার কথা তো একটা বারও কেউ বলছেন না।

বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান নয়, বরং নিয়ন্ত্রণ এবং আইন কানুন জোরদার করা উচিত ।

খুব সাধারণ একটা যুক্তি খেয়াল করুন, জ্বর হলে ৩ বেলা ৩ টা প্যারাসিটামল খেতে হয়, কিন্ত একবারে ১০ টা প্যারাসিটামল খেলে আপনার মৃত্যুও হতে পারে আবার প্যারাসিটামল না খেলে জ্বর ও সারবে না। তাই মাথা ব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলার মত মুর্খতা করবেন না প্লিজ।

দেশে প্রায় ৩৭ লাখ নিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে যা ক্রমবর্ধমান, তাছাড়া মোটরসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় হয়েছে এখন। দেশে অনেক ব্রান্ড তাদের ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট করেছে, এতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মুলত গন পরিবহনের দুরবস্থার কারনেই মানুষ মোটরসাইকেল বেছে নিচ্ছে বিকল্প হিসেবে। কিছু বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোটরসাইকেল বন্ধের সুপারিশ নিতান্তই অমুলক।