মোটরসাইকেল বন্ধ করলেই সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে এই নিশ্চয়তা কে দিতে পারেন?

জুলাই 07, 2022

মোটরসাইকেল বন্ধ করলেই সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হয়ে যাবে এই নিশ্চয়তা কে দিতে পারেন?
বাইকের রেজিষ্ট্রেশন পেপারে তো কোথাও লেখা নাই যে নির্দিষ্ট জেলার বাইরে বাইক চালানো যাবে না। অর্থাৎ একটা নিবন্ধিত মোটরবাইক দেশের যেকোনো স্থানে চলার জন্য সম্পুর্ন বৈধ।

বাইকের রেজিষ্ট্রেশন পেপারে তো কোথাও লেখা নাই যে নির্দিষ্ট জেলার বাইরে বাইক চালানো যাবে না। অর্থাৎ একটা নিবন্ধিত মোটরবাইক দেশের যেকোনো স্থানে চলার জন্য সম্পুর্ন বৈধ।

তাহলে কিসের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে এক যে জেলার বাইক অন্য জেলায় যেতে পারবে না???

কে বলছে এইসব কথা? কেন বলছে?

কি উদ্দেশ্য তাদের? বিষয়টা খতিয়ে দেখা দরকার।

যানবাহনের রেজিষ্ট্রেশন যেকোনো জেলারই হোক সেটা সারা বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় চালানো যাবে আইন কিন্ত এটাই বলে।

তো বে-আইনি নির্দেশনা কোথা থেকে আসছে? কারা আছে এর পিছনে??

দেশের যাতায়াত ব্যাবস্থা তথা গনপরিবহন ব্যাবস্থা যদি মান সম্মত হতো, ভাড়া যদি সহনীয় হতো, গনপরিবহন সেক্টরে যারা কাজ করেন তারা যদি ভালো সার্ভিস দিতো তাহলে কার এত ঠেকা পড়েছিলো যে দেড়শো পার্সেন্ট ট্যাক্স দিয়ে মোটরবাইক কিনে তেল পুড়িয়ে, রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কস্ট করে নিজে বাইক চালিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাবে???

যখন করোনার প্রকোপ বাড়লো, লাখ লাখ মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছিলো তখন কিন্ত গণপরিবহনের পরিবর্তে এই মোটরসাইকেলই যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে।

আবারো কিন্ত করোনার প্রকোপ বাড়ছে, এই করোনা মহামারী থেকে বাচতে ব্যাক্তিগত পরিবহনের কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া যানযটে প্রতিদিন শত শত ঘন্টা সময় অপচয় হচ্ছে। মোটরবাইকের ব্যাবহার এই মুল্যবান সময়গুলো বাচাতে পারে। বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের পেশাগত জীবনে মোটরসাইকেল অনেক বড় ভুমিকা রাখে। এতে দেশের মুল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

দুর্ঘটনা রোধে মোটরসাইকেল বন্ধ করা কোনোভাবেই সমাধান হতে পারে না। প্রতিদিন বাস ট্রাক বা অন্যান্য যানবাহন যে পরিমান দুর্ঘটনার স্বীকার হয় তার পরিমানও অত্যন্ত আশংকাজনক তাই বলে গন পরিবহন বা রাস্তাঘাট বন্ধ করার কোনো সুযোগ আছে?

মোটরবাইকে নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে মোটরবাইকে চলাচলকারীরা যেন নিরাপদে রাইড করতে পারে সেইজন্য সেফটি ইকুইপমেন্ট যেমন ভালোমানের সার্টিফাইড হেলমেট এবং সেফটি গিয়ারের উপর ট্যাক্স কমানো উচিত।

প্রশাসনের উচিত রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নজরদারি বাড়ানো, প্রয়োজনে স্পীডগান বসানো যেন নির্ধারিত গতির উপরে কেউ না যায়।

আলাদা লেন করা যেতে পারে মোটরবাইকের জন্য।

দুর্ঘটনায় কমানোর আরো অনেক উপায় আছে।

হাইওয়েতে বা শহরে গন পরিবহন যারা চালান এদের বেশিরভাগই অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত। শুরুতে হয়তো হেলপার ছিলো,

৩ মাস বা ৬ মাস পরেই বাস/ ট্রাক নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে। রোড সাইন, মার্কিং, স্পীড লিমিট, ইন্ডিকেটর ইউজ এর মত সাধারণ বিষয়েও এদের সামান্যতম জ্ঞান নাই। প্রশিক্ষন তো দুরের কথা।

আর ড্রাইভিং লাইসেন্স? সেটা তো বিয়ারটিএ তে ঘুষ দিলেই মিলে যায়৷ পাল্লাপাল্লি করে ছাল চামড়া উঠে যাওয়া ভাংগাচোরা ফিটনেস বিহীন বাসগুলো কোন বিশেষ শক্তির বলে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেটা জানতে গেলেও কেচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে৷

অন্যদিকে যারা মোটরসাইকেল চালান তারা মোটামুটি শিক্ষিত এবং তাদের যথেস্ট ট্রাফিক নলেজ আছে। পাশাপাশি তারা নিরাপত্তা নিয়েও সচেতন, যার কারনে আমরা দেখতে পাই সার্টিফাইড হেলমেট এবং সেফটি গিয়ারের ব্যাবহার অনেক বেড়েছে।

মুর্খ মানুষের হাতে বাসের স্টিয়ারিং আর বানরের হাতে বন্দুক এ দুটোতে কোনো তফাত নেই।

ফিটনেস অনেক বাস আমরা রাস্তায় অহরহ দেখতে পাই। সুতরাং অত্যন্ত ঝুকিপুর্ন ভাবে গন পরিবহনে চড়ছে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়??

হাইওয়ে বলেন আর শহরের মুল সড়ক,

কোন রোডটাতে রিক্সা, ভ্যান বা অটোর মত নন মোটরাইজড যানের উপস্থিতি নেই?

অথচ নন মোটরাইজড ভেহিক্যাল হাইওয়ে তে কোনো ভাবেই চলার কথা না। এই বিষয়ে কেউ কোনো কথা বলছেন না।

আমরা দেখেছি, বছরের পর বছর চলতে থাকা সিসি লিমিটের মত একটা ভৌতিক ব্যারিয়ার ভাংগার জন্য সরকার কাজ করছেন। দেশে যেন স্বল্প মুল্যে মোটরবাইক পাওয়া যায় সেই লক্ষ্যে মোটরসাইকেল পরিবেশকদের দেশেই ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট বসিয়ে বাইক উৎপাদন করতে চাপ দিচ্ছেন, এতে অনেক কোম্পানি দেশেই ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট বসিয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে, কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

এর ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে গাড়ি বা কমার্শিয়াল ভেহিক্যালস ও এই দেশেই প্রস্তুত হবে।

দেশ এগিয়ে যাবে, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হবে। অথচ এই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে উঠেপড়ে লেগেছে কিছু স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল।

বর্তমান তরুন সমাজ অনেক স্মার্ট, তারা ঘন্টার পর ঘন্টা যানযটে বসে মুল্যবান সময় অপচয় করতে চায়না, তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তাদের রক্তে ৭১ এর চেতনা তাই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ তারা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

মোটরসাইকেল এমন একটি বাহন যা এর রাইডারকে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে দেয়। যাতায়াত কে করে সহজ ও বাধাহীন, বাচায় সময়।

তরুন সমাজের যাতায়াতের এই স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে তাদেরকে গন পরিবহনের শিকলে বেধে জিম্মি করতে চাচ্ছে একটা কালো শক্তি।

তাদের উদ্দেশ্য তরুন সমাজের মনে সরকারের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি হোক এবং দেশে একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দিক।

জাতীয় সমস্যা যানযট এড়িয়ে সহজে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেলের কোনো বিকল্প নেই।

তাছাড়া গন পরিবহন ব্যাবহারে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ৩-৪ গুন বেশি ভাড়া নেয়ার প্রবনতা, যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরন। অশিক্ষিত ড্রাইভার দিয়ে গন পরিবহন চালানো, রাস্তায় পাল্লাপাল্লি করে যাত্রীদের জীবন ঝুকিপূর্ণ করে তোলা সহ নানান হয়রানি ও ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। এই ভোগান্তি আরো বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই মোটরসাইকেল বন্ধ করতে এমন কিছু অহেতুক ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে যা সম্পুর্ন ভিত্তিহীন।

বরং সত্যিই যদি কেউ সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বিগ্ন হতেন তবে তারা চেস্টা করতেন সড়কের ভাংগাচোরা অবস্থা, মুল সড়কে নসিমন-করিমনের দৌরাত্ব,

বড় বড় যানবাহনের প্রতিযোগিতামুলক ওভারটেকিং, ট্রাফিক আইন এবং স্পীড লিমিট না মানার মত ভ্যালিড ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করার।

অহেতুক মোটরসাইকেলকে গলার কাটা মনে করার কোনো যুক্তি নেই।