মোটরসাইকেল এখন একটা প্রয়োজনীয় যানবাহনে পরিণত হয়েছে। যিনি শখ করে বাইক চালান তিনিও বাইকটা দিয়ে কোনো না কোনো বিশেষ প্রয়োজন মেটান। একটা সময় বাংলাদেশের বাইক চালাত বয়স্ক চাচারা, বা বাবারা । আর ইয়াং বা চ্যাংড়া পোলাপান মোটরসাইকেল চালালে তাদেরকে গুন্ডা বলা হইত। সেই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে এখন মোটরসাইকেলের ক্রেতা অংশে সবচেয়ে বড় অংশটাই কিন্তু ইয়াং পোলাপান।
প্রতি মাসে সারাদেশে যে পরিমাণ মোটরসাইকেল হাত বদল হয় তার মধ্যে একটা বড় অংশ কিন্তু পুরাতন মোটরসাইকেল এর মালিকানা বদলি। বিআরটিএ তে গেলে দেখবেন এর একটা লম্বা সিরিয়াল আছে পাশাপাশি নতুন মোটরসাইকেলের সাথে সাথে পুরাতন মোটরসাইকেলের কেনাবেচার দোকানের সংখ্যাও বেড়েছে।
জয়েন করুন ৬০ হাজারের বেশি বাইকারের গ্রুপ কিউরিয়াস বাইকার
কি কি কারনে পুরাতন মোটরসাইকেলের কেনাবেচার হারটা উর্ধমুখী সেটাই আজকে জানার চেষ্টা করব?
ই-কমার্স গুলোর কল্যাণে
তাদের পোর্টালে মোটরসাইকেল গুলো খুব আকর্ষণীয় দামে বিক্রি করছিল। এদের ক্রেতা সাধারণের মধ্যে একটা বড় অংশ ছিল ব্যবসায়ী যারা মোটরসাইকেলগুলো ক্রয় করতো এবং কিছু লাভে মোটরসাইকেলগুলো আবার নতুন মানুষের কাছে বিক্রি করে দিত। ফলে একটা বড় অ্যামাউন্ট এর মোটরসাইকেল বাজারে চলে আসে যেটা সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল হিসেবে বিক্রি হয়। এতে যেরকম বিক্রেতাদের প্রফিট হচ্ছিল পাশাপাশি ক্রেতা যারা রয়েছে তারাও খুব অল্প দামে মোটামুটি নতুন মোটরসাইকেল হাতে পাচ্ছিল।
আরো পড়তে পারেন
আস্থা বেড়েছে
আগে একটা ধারণা আমাদের সবার মধ্যে ছিল যে একটা মোটরসাইকেল প্রায় মৃত হয়ে যাওয়ার কাছাকাছি যাওয়ার পরেই মানুষ সেটাকে বিক্রির জন্য বাজারে তোলে। কিন্তু সেকেন্ড হ্যান্ড মার্কেটগুলোতে এমন সব মোটরসাইকেল পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো প্রায় নতুন। আবার পুরাতন মোটরসাইকেল বিক্রেতারা তাদের সার্ভিসও বৃদ্ধি করেছে এই যেমন ধরেন পুরাতন মোটরসাইকেল কিনলেও পাওয়া যাচ্ছে সার্ভিস ওয়ারেন্টিসহ পার্টসের এবিলিটি ইত্যাদি নানান সুবিধা। ফলে এসব সুবিধার কারণে পুরাতন মোটরসাইকেলের প্রতি গ্রাহকদের রাস্তা বেড়েছে।
কোম্পানিগুলোর প্রমোশন
মোটরসাইকেল পরিবেশক কোম্পানিগুলো তাদের নতুন মোটরসাইকেলের বিক্রি বাড়ানোর জন্য নতুন একটা সুবিধা চালু করেছে। যেটার নাম দিয়েছে এক্সচেইঞ্জ ফেস্টিভাল। একবারে শুরুর দিকে এসিআই মটরস, ইয়ামাহা এই সুবিধাটা ব্যাপক আকারে সারা বাংলাদেশে প্রমোট করে। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে প্রায় সবগুলো কোম্পানিরই এখন এক্সচেঞ্জ সুবিধার রয়েছে। এর মাধ্যমে যেসব মোটরসাইকেল গুলো পুরাতন হচ্ছে বা হাত বদল হচ্ছে সেগুলো আবার চলে আসছে রিসেল মার্কেটে এবং সেখানে এটা আবার পুনরায় হাত বদল হয়ে নতুন কোন ক্রেতার ঘরে চলে যাচ্ছে। যেহেতু কোম্পানিগুলো প্রমোট করছে ফলে বড় একটা সংখ্যক পুরাতন মোটরসাইকেল এই সেক্টরে প্রবেশ করছে।
আরো পড়তে পারেন
মানুষ সাশ্রয় মনে করছে
ধরেন আপনি একটা নতুন মোটরসাইকেল কিনবেন এবং আপনার চরিত্র হচ্ছে আপনি সাইকেলটা মোটামুটি এক বছরের বেশি চালাবেন না। এখন আপনি যদি একটা নতুন মোটরসাইকেল কিনেন এবং এক বছর পর সেটা বিক্রি করতে যান তাহলে আপনার মোটামুটি ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কমে সেল করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি রিসেল মার্কেট থেকে এই মোটরসাইকেলটাই কিনেন তাহলে আপনি ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কমে পাচ্ছেন বাজারের থেকে। আবার আপনি যখন সেল করতে যাবেন তখন আপনার রিসেল ভ্যালু টাও ভালো থাকবে কারণ মার্কেটটা খুব বেশি ডাউন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে দেখা যাচ্ছে মানুষ এটাকে সাশ্রয় ভাবছে এবং পুরাতন মোটরসাইকেলের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে।
অর্থনৈতিক অবস্থা
বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের উর্ধ্বগতি বিভিন্ন কারণে মোটরসাইকেলের দাম এখন প্রায় ঊর্ধ্বমুখী। আবার মানুষ একই সাথে এতগুলো টাকা ইনভেস্ট করে ফেলতে চাইছে না একটা মোটরসাইকেলের পেছনে। ফলে দেখা যাচ্ছে সে তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য কম দামে মোটরসাইকেল কোথায় পাওয়া যাচ্ছে সেখানে ছুটছে।
আরো বেশ কিছু কারণে মার্কেটটা গ্রো করছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাইড শেয়ার অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়া। বিভিন্ন শহর গুলোতে রাইড শেয়ার চালু হওয়া। রাইড শেয়ার করার জন্য মানুষ পুরাতন মোটরসাইকেল টাই কেই বেছে নিচ্ছে। আবার অনলাইন কেনাকাটায় বাংলাদেশ বেশ এগিয়েছে ফলে দেখা যাচ্ছে কুরিয়ার করার জন্য একটা বড় সংখ্যক মোটরসাইকেল প্রয়োজন হচ্ছে। ছোটখাটো কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর পুরাতন মোটরসাইকেল এর উপরেই ভরসা রাখছে।
এই সব কারনেই আমাদের প্রধান কারণ মনে হয়েছে, এর বাইরে যদি আপনার কাছে অন্য কোন কারণ থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট সেকশনে ঝাপিয়ে পড়ুন। আপনার মতামতের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা।
ভিডিও অংকের হিসাবে খরচ কম কিসে, মিনারেল নাকি সিনথেটিক ?