Royal Enfield motorcycle in Bangladesh
সেপ্টেম্বর 12, 2023

Views
Shares
রয়্যাল এনফিল্ড ব্যবহারকারীরা নতুন পণ্য বা প্রযুক্তি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রায়ই একটি diffusion curve অনুসরণ করে, যা তাদের innovators, early adopters, early majority, late majority, and laggards এর ভেতর সবচেয়ে শেষের ধাপ তথা laggads শ্রেনীতে ফেলে।
রয়্যাল এনফিল্ড তার ভিনটেজ লুক (১৯৬০-৭০ এর লুক) এবং বড় ইঞ্জিনগুলির জন্য ভারতের কিছু এলাকার বাইকারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
যাইহোক, বাংলাদেশের বাজারে চিন্তা করলে এমনটা না হবার সম্ভাবনাই বেশী। এই আর্টিকেলে মূলত বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের মাইন্ডসেট তথা বাইকারদের মাইন্ডসেট এবং বাংলাদেশের রয়েল এনফিল্ড এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জয়েন করুন ৫০ হাজারের বেশি বাইকারের গ্রুপ কিউরিয়াস বাইকার
যেকোনো পণ্য বা বাইক বাজারজাত করলে জায়গা ও পরিবেশ ভেদে ৫ ধরনের কাস্টমার হয়ে থাকে ১. innovators ২. early adopters, early majority ৩ late majority ৫ স্যার লেগারটা ভালো করে বুঝাইতেছে !
অটোমোবাইল সেক্টরে বাংলাদেশের কাস্টমাররা সাধারণত হয়ে থাকে (early adopter) , যারা কিনা নতুন প্রযুক্তি এবং নতুন উদ্ভাবন সবার প্রথম দিকে ব্যবহার করতে চায়। তাই গাড়ির ক্ষেত্রে দেখি বাংলাদেশের মানুষ টপ এন্ড জাপানি ব্র্যান্ড যেমন টয়োটা অথবা বর্তমানের আধুনিক প্রযুক্তির চাইনিজ ব্যান্ড যেমন এমজি, হ্যাভেল ব্যবহার করে। সে ক্ষেত্রে মাহিন্দ্রা-টাটা কিছুটা পুরনো প্রযুক্তির গাড়ি এবং কম দাম হলেও সাধারণত ইন্টারনেট দেখায় না। বাইকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা ইয়ামাহা বা হোন্ডার মডেল লঞ্চ করলে যে পরিমাণ ক্রেজ থাকে সাধারণত ইন্ডিয়ান অন্যান্য ব্র্যান্ড লাঞ্চ করলে তা থাকে না। এর মেইন কারণ যেমন অরিজিন কান্ট্রি, তার পাশাপাশি এডভান্স ফিচার-ও!
আরো পড়তে পারেন
অন্যদিকে বেশিরভাগ ভারতীয়ই অটোমোবাইলের ক্ষেত্রে কিছুটা (laggard) টাইপের (কিছুটা পুরানো ধ্যান-ধারনার মানুষ যারা নতুন প্রযুক্তি সহজে করতে চায় না এবং ভ্যালু ফর মানি বা এডভান্স ফিচারের থেকে ঐতিহ্যকে বেশি মূল্য দেয়! গাড়ির ক্ষেত্রে তারা মাহিন্দ্রা, টাটা বা মারুতির গাড়ি কে সাধারণত বেছে নেয়। বাইকের ক্ষেত্রেও রয়েল এনফিল্ড তাদের পছন্দ অন্যান্য এডভান্স ফিচার যুক্ত বিদেশি বাইকের তুলনায়!!
১। পরিবর্তন বিরোধী মনোভাব:
তারা ঐতিহ্য এবং নস্টালজিয়ার সাথে থাকতে পছন্দ করে, যা রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেল তাদের মান্ধাতার আমলের ডিজাইনে অফার করে। পুরানো analog meter, twin suspension, spoke rim এর জগতে তারা এখনও আনন্দ খুঁজে পান।
২। পুরানো প্রযুক্তিমুখীঃ
আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইকেলগুলি এখনও পুরানো প্রযুক্তির সাথে যুক্ত। যেখানে সমসাময়িক জাপানী ব্র্যান্ডগুলো একই দামে বরং কিছু ক্ষেত্রে আরও কম দামে ভাল কিছু অফার করছে। যেমন ইয়ামাহা , হোন্ডা।
৩। নস্টালজিয়া ও ঐতিহ্যঃ
রয়্যাল এনফিল্ড ব্যবহারকারীরা ABS Braking, Traction Control, Slipper Clutch, এসব আধুনিক ফিচারকে প্রাধান্য না দিয়ে নস্টালজিয়া এবং ঐতিহ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তারা ব্র্যান্ডের ভিনটেজ লুকেই স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পায়, যা তাদের মোটরসাইকেলের অতীত যুগে নিয়ে যায়। তারা এখনো সাইকেলের মত স্পোক রিম-এ স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
আরো পড়তে পারেন
ইন্ডিয়ান মার্কেট ও প্রাচীন ধ্যান-ধারনার কনজিউমারসঃ
ভারতীয় বাইকের বাজারের দিকে তাকালে দেখা যাবে, সেখানে মোটামুটি ৫০০ সিসির বাইক পর্যন্ত রয়্যাল এনফিল্ড সর্বোচ্চ রাজত্ব নিয়ে রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে পণ্যগুলি ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় তা বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশেও ভোক্তাদের পছন্দের তালিকায়ও বিবেচনা করা হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, Mahindra Scorpio SUV হল ইন্ডিয়ার একটি জনপ্রিয় নাম, যা ভারতের পথে পথে highly visible. কিন্তু, এটি অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর থাকা স্বত্তেও বাংলাদেশের রাস্তয় এই গাড়ির অস্তিত্ব একটি বিরল দৃশ্য। এই অমিল আর কিছুই না, বাংলাদেশ আর ভারতের কঞ্জিউমারদের মধ্যকার purchase decision maker fact গুলিকে শক্তভাবে নির্দেশ করে। শুধুমাত্র টেকসই আর অনেক দিন ব্যবহার করা যাবে এই ভেবে অন্তত বাংলাদেশের কনজিউমাররা দামী কিছু কেনে না।
বরং যতদিন ব্যবহার করা হবে তার মধ্যে তারা খোঁজেন value for money. সেই ক্ষেত্রে কতটা updated, কি কি আধুনিক ফিচার রয়েছে, কতটা আরামদায়ক, এবং কতটা safe এই নিয়ে তারা প্রায়ই বেশ সচেতন। এই দেশের বাইক ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকালে দেখা যায় ১৫০-১৬৫ সিসির মার্কেটে ৭০% বাইকাররাই ভারতীয় বা চাইনিজ না বরং জাপানীজ বাইকগুলোকেই প্রাধান্য দেন, জাপানিস ব্র্যান্ডগুলোর আধুনিক লুক এবং innovative ফিচারগুলির জন্য, এমনকি বাংলাদেশ মার্কেটে ৪ লাখ টাকার ক্যাটাগরিতেও কোনো ভারতীয় ব্র্যান্ডের বাইকের বিক্রি নেই। তাই স্পষ্টতই, বাংলাদেশে ভারতীয়দের মতন স্রেফ নস্টালজিয়ার দোহাই দিয়ে সময় থেকে পিছিয়ে পড়া consumer base খুবই নগন্য।
বাংলাদেশে উচ্চতর সিসি মোটরবাইকের অসুবিধাঃ
চলুন এখন বাংলাদেশে উচ্চতর সিসি মোটরবাইকগুলির অসুবিধার দিকে আলোকপাত করি, যা কিনা শুধুমাত্র রয়্যাল এনফিল্ড নয়, সমস্ত ব্র্যান্ডগুলোর জন্যই সমস্যা হয়ে দাঁড়াবেঃ
বাংলাদেশের মার্কেটে প্রতি মাসে যে সংখ্যক বাইক বিক্রি হয় তার মাত্র পাঁচ পার্সেন্ট চার লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে। এবং উচ্চ সিসির প্রায় সবগুলো বাইক এই দামের বেশি হবে। তাই এই বাকের বিক্রি খুব বেশি পরিমাণ হবে না।
১। জ্বালানি খরচ:
উচ্চতর সিসি মোটরসাইকেলগুলি বেশি জ্বালানী খরচ করে,এই জ্বালানি খরচ আমাদের দেশের সার্বিক বাজেটের উপরেও প্রভাব ফেলে। আর পুরনো প্রযুক্তি হওয়ার কারণে রয়েল এনফিল্ড সবচেয়ে বেশি তেল খাবে, যা হাইব্রিড ১৫০০ সিসির গাড়ির কাছাকাছি
২। রক্ষণাবেক্ষণের খরচ:
স্পেশাল সার্ভিস সেন্টার ও আধুনিক স্পেয়ার পার্টস এর প্রয়োজনের কারণে উচ্চতর সিসি মোটরসাইকেলের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়বহুল হতে পারে। এটি অনেক রাইডারদের জন্য একটি আর্থিক বোঝা হতে পারে।
৩। ট্রাফিক জ্যাম:
বাংলাদেশের শহরগুলি তাদের যানজটের জন্য খুবই পরিচিত এবং ঢাকা শহর তার মধ্যে অন্যতম। এমন পরিস্থিতিতে উচ্চ সিসি মোটরসাইকেল দেশের রাস্তায় চালানো চ্যালেঞ্জিং এবং অবাস্তব হতে পারে।
৪। চড়া দাম:
রয়্যাল এনফিল্ড এর মডেলগুলো সহ উচ্চ সিসির মোটরসাইকেলগুলি প্রায়ই একটি প্রিমিয়াম মূল্য ট্যাগ বহন করে এবং এগুলোর দাম হয় অনেক। এবং সবচেয়ে বড় কথা এটি বাজেট-সচেতন রাইডারদের বাধা হিসেবে কাজ করতে পারে।
যাইহোক, উচ্চ CC মোটরবাইকের অসুবিধাগুলির মধ্যে অতিরিক্ত জ্বালানী ব্যয়, অতিরিক্ত মেইনটেনেন্স খরচ, যানজটের সমস্যা এবং উচ্চ মূল্য সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় ৷ বাংলাদেশের সম্ভাব্য মোটরসাইকেল ক্রেতাদের এটি পছন্দ করার আগে তাদের দৈনন্দিন জীবনে তাদের নির্দিষ্ট চাহিদা এবং উচ্চতর সিসি মডেলের ব্যবহারসহ সবকিছু মূল্যায়ন করা উচিত। যারা পুরনো দিনের রমোন্থন করতে পছন্দ করেন তাদের কাছে কিছুদিনের জন্য রয়াল এনফিল্ড ভালো লাগতে পারে, কিন্তু দেশের ম্যাক্সিমাম বাইকারদের কাছে এটি মোটেও একটি যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নয়। তাই আমার মনে হয় প্রথমে কিছু দিন ক্রেজ থাকলেও খুব শীঘ্রই তা বেশিরভাগ বাইকারদের কাছে আকর্ষণ হারাবে।
ভিডিও অংকের হিসাবে খরচ কম কিসে, মিনারেল নাকি সিনথেটিক ?