শখ বা প্রয়োজন; যে কারনেই মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন না কেনো, বন্ধু-বান্ধব, আত্বীয়-স্বজনকে মাঝে মধ্যেই মোটরসাইকেলে তুলতে হয়। দূরের পথে ভ্রমনের জন্য ব্যাগ হোক বা জীবনের প্রয়োজনে বাজারের বাজারের ব্যাগ হোক কখনও তা মোটরসাইকেলে নিতে হয়। এই দুইক্ষেত্রেই সামান্য ভূল কখনও বড় ধরনের ক্ষতি বা দুর্ঘটনার কারন হয়ে দাড়ায়। আসুন জেনে নেই একজন মোটরসাইকেল চালক হিসেবে আপনার করনীয় কি?
পেছনে পিলিয়ন বা সহযাত্রী নিয়ে আমরা হরহামেশাই বাইক চালাই। পেছনে কাউকে নিয়ে বাইক চালানোর সময় বাইকের পার্ফরমেন্সে কিছুটা প্রভাব পড়ে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে কয়েকটি দিক লক্ষ রাখবেন
আরো পড়ুন
- মোডিফিকেশন উপকারী নাকি ঝুকিপূর্ণ?
- কলিজা কাপানো সাংঘাতিক বিপদের নাম ট্যাংক স্ল্যাপার
- কোনটা ভালো? BS4 নাকি BS6
নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার বাইক প্যাসেঞ্জারের অতিরিক্ত ওজন বহনে সক্ষম। মনে করুন আপনার ৫০ বা ৮০ সিসির বাইকের পেছনে ১০০ কেজি ওজনের কাউকে সহযাত্রী হিসাবে নিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই আপনার অল্প সিসির এই বাইক প্যাসেঞ্জারের অতিরিক্ত ওজন বহনে সক্ষম না। অতিরিক ওজন বাইকের গতি, ব্রেকিং সিস্টেম এবং সাস্পেন্সানের উপরে প্রভাব ফেলবে। যেহেতু আমরা প্রায়ই প্যাসেঞ্জার বয়ে নিয়ে বেড়াই, সেহেতু আপনার বাইকের সাসপেনশন ও টায়ারের এয়ার প্রেসার এ্যাডজাস্ট করে রাখুন।
মোটরাসাইকেলের ব্রেকিং নিয়ে আমাদের যে আর্টিকেল রয়েছে সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন।
আরো পড়ুন
- জার্মানি দেশের অয়েল সমাচার ও আমাদের দেশের বাইকারদের কনফিউশ
- ইঞ্জিন অয়েল ফিল্টার নিয়ে আর হেলাফেলা নয়
- ইঞ্জিন ফ্লাশিং, ক্ষতি না লাভ ?
বাইকে উঠার আগে প্যাসেঞ্জার যেনো আপনাকে সতর্ক করে। বিশেষ করে মহিলারা যেহেতু এক সাইড হয়ে বাইকে উঠেন তাই হঠাৎ না বলে উঠতে গেলে বাইকের ব্যাল্যান্স হারাতে পারেন। খেয়াল রাখবেন এই সময় বাইক খাড়া থাকবে এবং আপনার দুই পা দুই দিকে সাপোর্ট হিসাবে থাকবে।
প্যাসেঞ্জারকে বলুন শক্ত করে বসে থাকতে । তা না হলে হঠাৎ ব্রেক করলে হেলমেটে হেলমেটে ঠুকাঠুকি লেগে যেতে পারে। বাজে রাস্তায় শক্ত করে ধরার প্রতি বেশি নজর দিতে বলুন। মহিলা পেসেঞ্জার হলে আপনার কোমর, বেল্ট বা বাইকের প্যাসেঞ্জারের জন্য সীটের নীচের হ্যান্ডেল শক্ত করে রাখতে বলুন। বাইকের ব্যালেন্স ঠিক রাখার স্বার্থে পিলিয়নকে যথাসম্ভব আপনার পেছনে কাছাকাছি থাকতে বলুন।
টার্নিং নেবার সময় অনভিজ্ঞ প্যাসেঞ্জার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সময় প্যাসেঞ্জারের সামান্য নড়াচড়াই বাইককে ব্যালেন্স নষ্ট করে দিতে পারে। টার্ন নেয়ার সময় যেহেতু বাইক কিছুটা বেকে যায় অনভিজ্ঞ প্যাসেঞ্জার এই সময় ভয় পেয়ে সোজা থাকতে চায় বা বিপরীত দিকে হেলে থাকতে চায় । ওজনের বিপরীত ভারসাম্য এবং তাদের নড়াচড়া বাইক স্কিড করার জন্য যথেষ্ট। এই বিষয়ে আগেই অনভিজ্ঞ প্যাসেঞ্জারকে সাবধান করে দিন। তাদের বলুন বাঁক নেবার সময় আপনার ঘাড়ের উপর দিয়ে বাইক যেদিকে বাঁক নিচ্ছে সেদিকে যেনো তাকিয়ে থাকে। আপনি যা করবেন সে যেন আপনার শরীরের অংশের মত কাজ করে।
আরো পড়ুন
সহযাত্রীর পা সবসময় ফুট রেস্টে রাখতে বলুন, এমনকি বাইক থেমে গেলেও। দুই পা দিয়ে ব্যালান্স রাখার দায়িত্ব আপনার। পিলিয়ন পা নামালে বরং উল্টোটাই হয়, বাইক ব্যালেন্স রাখতে সমস্যা হয়।বাইক চলন্ত অবস্থায় সহযাত্রী যেনো অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা ও নড়াচড়া বন্ধ রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক করুন। নড়চড়ে বসতে চাইলে আপনাকে যেন অবশ্যই আগে বলে নেয়। বাঁক ঘুরতে চাইলে সব নড়াচড়া নিষেধ। রাস্তা যেদিকে সেদিকে দৃষ্টি থাকলে ভাল হয়।
সাধারনত যে গতিতে বাইক চালান, সহযাত্রী বহনের ক্ষেত্রে তার চেয়ে কম গতিতে চালাবেন। থামতে হলে বেশ আগে থেকেই প্রস্ত্ততি নিন। হঠাৎ থামতে চাইলে তাকে সাবধান করুন।
মোটরসাইকেল মূলত: মালবহনের জন্য তৈরী নয়। তবে প্রয়োজনে তা করতেই হয়। তারপরও অতিরিক্ত বোঝা বহন না করাই ভালো। প্যাসেঞ্জার বহনের মত এক্ষেত্রেও সাসপেনশন ও টায়ার প্রেসার চেক করা দরকার। প্যাসেঞ্জার আর মাল( বস্তু) এর মধ্যে পার্থক্য হলো অভিজ্ঞ প্যাসেঞ্জার বাইক চালানোর সময় অনেকটা আপনার শরীরের মতই কাজ করে । মোট কথা বাইকের ব্যাল্যান্স রাখতে আপনাকে সাহায্য করে কিন্তু বস্তু তা করেনা।
যথেষ্ঠ শক্ত করে আপনার লোডটি বেঁধে নিন। পিছনের ক্যারিয়ার কিন্তু মাল বহনের জন্য তৈরী হয়নি। তবে ৫ থেকে ৭ কেজির মধ্যে হলে হলে পিছনের ক্যারিয়ারে ভালমত বেঁধে নিতে পারেন। এমন ভাবে বাঁধুন যাতে ব্যাক লাইট, সিগন্যাল লাইট ঢাকা না পড়ে। তবে এটা নিয়ম না। আপনার লোডটি পিছনের চাকার অ্যাক্সেলের সরাসরি উপরে বা সামনে থাকবে। লক্ষ্য রাখবেন লোডটি যেন অন্যদিকে ঝুলে না পড়ে মাঝ বরাবর থাকে। পিছনের ক্যারিয়ার কিন্তু পিছন চাকার অ্যাক্সেলের পিছনে। সুতরাং সেখানে ভারী লোড নেওয়া একেবারেই অনুচিত। মাঝে মাঝে থেমে লোড ঠিকমত বাঁধা আছে কিনা পরীক্ষা করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
বর্তমানে কমিউটার বাইক ছাড়া অন্য বাইকগুলোতে ক্যারিয়ার দেখা যায় না, কমিউটার বাইকেও অনেক সময় ক্যারিয়ার থাকে না। সেক্ষেত্রে পেছনের চাকার দুদিকে ঝোলানোর উপযোগী স্যাডেল ব্যাগ পাওয়া যায় সেটি ব্যবহার করতে পারেন। কখনই একদিকে ভারী ব্যাগ ঝুলিয়ে নিবেন না, হঠাৎ ব্যালেন্স হারাতে পারেন। অনেকেই হ্যান্ডেলে ভারী মালপত্রের ব্যাগ ঝুলিয়ে নেন। এটি একদম উচিত নয়।
ছোটখাটো মালপত্রের জন্য পিঠে ঝোলানো ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্যাগটির বেল্টগুলো ভালোভাবে শরীরের সাথে লাগিয়ে নিন যেনো চলার পথে নড়াচড়া না করে। পিঠের ব্যাগে দীর্ঘক্ষন ভারী কিছু বহন করলে কাধে ব্যাথা হতে পারে।